আরিফ মঈনুদ্দীন

  ২৪ মে, ২০২৪

উপন্যাস (পর্ব ১৭)

তাহারা ফিরিয়া আসিলেন

শফিক সাহেবের কণ্ঠের ঝাঁজ শুনে মিসেস আহমেদ এগিয়ে এলেন। তিনি আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে বললেন, তুমি খামোখা উত্তেজিত হচ্ছো। এই বয়সের মেয়েরা তো এগুলো পরবেই।

শফিক সাহেব উত্তেজনার স্কেল আরেকটু বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, তুমিই তো যত নষ্টের মূল। তুমি যদি প্রশ্রয় না দিতে, মেয়ে কি সাহস করত এসব হাবিজাবি পরতে। আমি কিছু জানি না। তোমরা মা-মেয়ে মিলে আমাকে শেষ করে দেবে!

আরে আরে বলছ কী? শেষ করে দেব মানে কী? তুমি কি আত্মহত্যা করবে? আত্মহত্যা করলে তোমার জমানো টাকাগুলোর স্বাদ নেবে কীভাবে। টাকা তো খরচ করো না, সব জমা করছ। আমরা ইচ্ছামতো খরচ করতে চাই। তুমি মিতব্যয়ী হওয়ার উপদেশ ফলাও।

শফিক সাহেব বুঝে ফেলেছেন গলা বাড়িয়ে লাভ নেই। মেয়ের চেয়ে মা-ই সমস্যা। তিনি গলা নামিয়ে বললেন, আচ্ছা তোমাদের কোনো প্রয়োজন না-মিটিয়ে কি টাকা জমাচ্ছি। তোমাদের যা যা দরকার, সবই তো পাচ্ছো। বেশি টাকা দিয়ে কী করবে? তোমরা অযথা খরচ করতে চাও। আমি তো বুঝি- কোনটা দরকার কোনটা অদরকার। এমনি এমনি মাস্টারি করি?

তুমি তোমার মাস্টারি ফলানো বন্ধ করো। ওর বিষয়টা আমি দেখছি।

তুমি যে কী দেখবে! ওটা আমার ভালো জানা আছে। একটি বিষয় মনে রাখবে। ওই কৃষ্ণাঙ্গ ছেলেটা যেন আমাদের বাসায় না আসে।

কী যা-তা বলছো? ওই ছেলের কী দোষ।

দোষ-গুণ তোমরা বুঝবে না। কোনটা দোষ, কোনটা গুণ- এটা তোমাদের মতো নারীদের বোঝার বয়স কখনো হবে না। তার আগেই জীবনের বারোটা বাজিয়ে দেবে।

মিসেস আহমেদ নিজের মতো করে প্রমাদ গুনছেন। তিনি যেটা ভালো মনে করেন, তা যদি ফলাতে হয়। তবে তো কৌশলী হতে হবে। চিৎকার-চেঁচামেচিতে উল্টো ফলই হবে। তিনিও গলা নামিয়ে বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে। এখন যাও, কাপড়টাপড় চেঞ্জ করে ফ্রেশ হও। কিচেনে আমার কাজ পড়ে আছে। আমি যাই।

তুমি যাবে যাও, শিউলিকে আমার রুমে পাঠাও।

শিউলিকে বলতে হয়নি। সে বাবার কথা শুনেই ড্রেস চেঞ্জ করে বাবার রুমে এলো। মেয়ে অভিনয়টা ভালোই শিখেছে। বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলল, বাবা আমি আর ওসব ড্রেস পরব না। তুমি শান্ত হও।

শফিক সাহেব মাথা দোলাতে দোলাতে বললেন, শান্ত কীভাবে হব। তোরা মা-মেয়ে তো আমার কথা পাত্তাই দিস না। সকালে সিকিউরিটি লকের চাবিটা নিতে ভুলে গেছি। চাবি নিতে না এলে তো আমি দেখতামই না- তোর এই অবস্থা। আগেও তো কতবার নিষেধ করেছি। প্রতিবারই এক কথা- ‘আমি আর ওসব ড্রেস পরব না’। আমি তো প্যান্ট-শার্ট পরতে একেবারে নিষেধ করিনি। কিন্তু বলেছি, ঢিলেঢালা পোশাক পরবি এবং ইন করে শার্ট পরা যাবে না। কেন বলেছি, এটা কি বোঝা যাচ্ছে না?

মিহিসুরে শিউলি বলল, তা তো বুঝেছি।

বুঝলে কথা শুনিস না কেন? আর একটি কথা। ওই কালো ছেলেটা কী যেন নাম মাইকেল না ফাইকেল, ও যেন আমাদের বাসায় না আসে। তুই ওর থেকে দূরে থাকবি। আমি খবর নিয়ে দেখেছি। ছেলেটা মোটেই ভালো নয়। একধরনের সিরিয়াল বদমাশ। হাতের কড়ে গুনে গুনে বদমায়েশি করে। তোকেও কদিন পরে ছুড়ে ফেলে দেবে। আমার কথা না শুনলে মা-মেয়ে দুজনই পস্তাবি কইলাম।

বাবার এসব নসিহত শিউলির এক কান দিয়ে ঢোকে, অন্য কান হয়ে যথারীতি বেরিয়ে যায়। আজও তার ব্যত্যয় ঘটছে না। কিন্তু কৃত্রিম বিনয় দেখিয়ে সে এ যাত্রা পার পাওয়ার কসরত করতে করতে বলল, বাবা ঠিক আছে- তুমি চাইলে ও আর আসবে না।

শফিক সাহেব অবাক হয়ে বললেন, আমি চাইলে কী? তোকেও চাইতে হবে। মোদ্দা কথা, এই ছেলের সঙ্গে সংস্রব থাকুক এটা আমি চাই না।

বাবার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে সে ধীরপায়ে এগিয়ে গিয়ে কিচেনে ঢুকল। এখন মায়ের সান্নিধ্যটা দরকার।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close