দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সকাল থেকে দিনের প্রায় মধ্যভাগ পর্যন্ত ঢাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ হলেও অধিকাংশ কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম দেখা গেছে। বিএনপিসহ সমমনাদের ভোট বর্জনের মধ্যে গতকাল রবিবার সকাল ৮টায় শুরু হয় ভোটগ্রহণ। এর আগে ভোর ৫টার দিকে ব্যালট পেপার বুঝে নেন কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা। অল্পকিছু কেন্দ্রে ভোটদানের সময় শুরুর আগে থেকেই ভোটাররা হাজির ছিলেন। তবে ঢাকা-১৭, ঢাকা-১৫, ঢাকা-১৪, ঢাকা-১০, ঢাকা-৪-সহ বিভিন্ন আসনের কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের লাইন বা কেন্দ্রে ঢোকাণ্ডবের হওয়ার ভিড় দেখা যায়নি। ভোটাররা কেন্দ্রে ঢুকে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পেরেছেন। ভিড় না থাকায় কেন্দ্রগুলোতেও কাজের ব্যস্ততা ছিল না প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের।

ঢাকা-১৭ আসনে মিরপুরে সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজে একটি মহিলা ভোটকেন্দ্রে ভোট শুরুর প্রথম ঘণ্টায় ব্যালট বাক্সে ভোট পড়েছে ৩০টি। এই কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী ভোটার সংখ্যা ১ হাজার ৮৭৩টি। ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরই আরেকটি মহিলা কেন্দ্রের ভোটার ১৮৫২টি এবং অন্য দুটি পুরুষ ভোটকেন্দ্রের ভোটার যথাক্রমে ১৭৮৮ ও ১৮২০ জন।

হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজে চারটি কেন্দ্রের একটি মাত্র প্রবেশপথ থাকলেও সেখানে ভোটারের আসা-যাওয়ার ভিড় দেখা যায়নি।

এখানকার একটি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ বলেন, আমার কেন্দ্রে একতারা প্রতীক ও নৌকা প্রতীকের পোলিং এজেন্ট এসেছেন। অন্য কোনো প্রার্থীর এজেন্ট আসেননি। তবে ভোটারদের ভোট দিতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। এই কলেজের একটি কেন্দ্রে গিয়ে বেলুন ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পোলিং এজেন্টকে পাওয়া যায়। সেখানে একতারা প্রতীকের কোনো এজেন্ট উপস্থিত ছিলেন না।

সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকা-১৫ আসনের পূর্ব শেওড়াপাড়ার হাজি আশরাফ আলী হাইস্কুলে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে পুরুষ মহিলা মিলিয়ে ভোটকেন্দ্র আছে ৭টি; এই সাত কেন্দ্রের মোট ভোটার সংখ্যা ১৩ হাজার ৯৬৪। এই কেন্দ্রের প্রধান ফটকে প্রায় ১০ মিনিট সময় দাঁড়িয়ে ৫ জন ভোটারকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। পরে ভেতরের বিভিন্ন কেন্দ্র ও বুথে গিয়ে দেখা যায়, ভোটগ্রহণ সংশ্লিষ্টরা সবাই সুশৃঙ্খলভাবে বসে আছেন। ভোটার না থাকায় তাদের মধ্যে কাজের কোনো ব্যস্ততা ছিল না।

সকাল ৮টা ১০ মিনিটের দিকে ঢাকা ১৫ আসনের মণিপুর বালক উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়েও নৌকার প্রার্থীর এজেন্ট ও সমর্থক ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থীর উপস্থিতি দেখা যায়নি। তবে দিনের শুরুতে দু-একজন ভোটারকে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেখা যায়।

ঢাকা ঢাকা-১৪ আসনের কামাল আহমেদ মজুমদার স্কুল ও কলেজ কেন্দ্রে ঘুরে দেখা যায়, ভোটার উপস্থিতি খুবই কম। কিছুক্ষণ পরপর একজন-দুজন এসে ভোট দিয়ে যাচ্ছেন। এই স্কুল ও কলেজের দুটি ভবনে দুটি কেন্দ্র, ভোটার এখানে প্রায় ছয় হাজার। এই কেন্দ্রেও কেবল নৌকার এজেন্টই ছিলেন।

কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার সুমিত কুমার বলেন, ভোর ৫টার দিকে আমরা ব্যালট বুঝে পেয়েছি। এরপর সংশ্লিষ্ট জনবল নিয়ে ৮টায় ভোট কার্যক্রম শুরু করি। প্রথম আধা ঘণ্টা পর্যন্ত ভোট একদমই পড়েনি। তবে ভোট কতটি পড়েছে সেটি তিনি জানাতে পারেননি।

সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে নিয়োজিত প্রিসাইডিং অফিসার ফায়জুস সালেহীন বলেন, মিরপুর বাঙলা কলেজ থেকে রাত ৩টা থেকে ব্যালট বরাদ্দ দেওয়া হয়। ভোর পৌনে ৫টার দিকে তারা কেন্দ্রের ব্যালট যথাযথভাবে বুঝে পেয়েছেন এবং সকাল ৮টা থেকে যথানিয়মে ভোটগ্রহণ শুরু করেছেন। তবে সকালের প্রথম ঘণ্টায় ভোটারের উপস্থিতি কম ছিল।

পুরান ঢাকার শ্যামপুরের ফরিদাবাদ উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন জানান, এ কেন্দ্রে পুরুষ ভোট ৩ হাজার ৩৯০ ও নারী ভোট ৩ হাজার ৩২৪টি। সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত পুরুষ কেন্দ্রে ৫৫টি ভোট পড়েছে জানিয়েছেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা জসিম উদ্দীন।

এ স্কুলের নারী কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা দেবব্রত মণ্ডল জানিয়েছেন, সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ৩৬ জনের ভোট পড়েছে।

ঢাকা-১০ আসনের নৌকার টিকিটে ভোটের লড়াইয়ে নামা চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ ভোট দিয়েছেন ঢাকা-১৭ আসনের ভাষানটেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে। ওই কেন্দ্রেও ভোটার উপস্থিতির কম থাকার কথা জানিয়ে সাংবাদিকদের ফেরদৌস বলেন, ভোটের পরিবেশ খুবই সুন্দর। বাড়াবাড়ি নেই, কোথাও কোনো ঝামেলা দেখিনি। লোকজন একটু স্লো আসছে। ৮টায় ভোট শুরু হয়েছে তো, সাধারণত যেটা দেখি ১০টার পর একটু ভিড় বাড়ে। ভোটার উপস্থিতিও ধীরে ধীরে বাড়ে।

"