আফজাল হোসেন, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর)

  ২১ অক্টোবর, ২০২৪

ভুয়া নিয়োগপত্রে অর্ধকোটি টাকা আত্মসাৎ সাবেক অধ্যক্ষের

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে কলেজের বিভিন্ন পদে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে কয়েকজন ব্যক্তির কাছ থেকে অর্ধ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে মাদিলাহাট কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় একাধিক ভুক্তভোগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২৭ আগস্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও গভর্নিং বডির আহ্বায়ক মীর মো. আল কামাহ তমাল উপজেলা পল্লী উন্নয়ন (বিআরডিবি) কর্মকর্তা বিধু ভূষন রায়কে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।

চাকরি প্রত্যাশী ভুক্তভোগীরা জানায়, চাকরির প্রত্যাশায় অধ্যক্ষের দাবি মেনে তাকে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন মানুষের উপস্থিতিতে নগদ টাকা প্রদান করেন তারা। নিজেদের জমিসহ সহায় সম্বল বিক্রি করে অধ্যক্ষের চাহিদা মতো টাকা দেন তারা। কিন্তু পরবর্তীতে বিল-বেতন না হলে কারণ হিসেবে জানতে পারেন ওই পদগুলোতে আগে থেকেই লোক নিয়োগ দেওয়া আছে। এছাড়া আরও এক যুবককে গবেষণাগার সহকারী (ইসলাম শিক্ষা) পদে ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে ১৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সাবেক ওই অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের জনবল কাঠামো অনুযায়ী গবেষণাগার সহকারী (ইসলাম শিক্ষা) নামে কোনো পদ নেই।

জানা গেছে, শাহিনা বেগম, লাবনী আক্তার ও মো. শাহিন নামের তিন চাকরি প্রত্যাশীকে ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে প্রায় ৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ওই অধ্যক্ষ। নিয়োগপত্র হাতে পাওয়ার পর তারা জানতে পারেন, ওই পদে অন্য ব্যাক্তিদের পূর্বেই নিয়োগ দেওয়া আছে। ভুক্তভোগী ওই তিন চাকরি প্রত্যাশী ফুলবাড়ী ইউএনও ও ফুলবাড়ী থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ১৪ মার্চ ফুলবাড়ী উপজেলার মাদিলাহাট কলেজে কিছু শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়া হবে মর্মে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী তারা ওইসব পদের জন্য প্রার্থী হিসেবে আবেদন করেন। অধ্যক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়ার যথারীতি শেষ করেন, পরে বিলের জন্য আবেদন করতে গেলে জানতে পারেন, ওই পদে পূর্বেই অন্যদের নিয়োগ দেওয়া আছে।

কলেজের অধ্যক্ষ শূন্য পদ দেখিয়ে ল্যাব সহকারী (ভুগোল) পদে লাবনী আকতারের কাছে ১০ লাখ, অফিস সহায়ক পদে শাহিনা বেগমের কাছে ১৫ লাখ ৫০ হাজার, নিরাপত্তাকর্মী পদে শাহিনের থেকে ১৩ লাখ এবং হযরত আলীর কাছ থেকে ১৩ লাখ টাকা নিয়েছেন সাবেক অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান।

এ প্রসঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুর আলম জানান, টাকা ফেরত চাইলে ভুক্তভোগীর সঙ্গে একটি চুক্তি করেন এবং টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দেন ওই অধ্যক্ষ।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় থেকে একটি চিঠি তদন্ত কমিটির কাছে পাঠানো হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাক্ষরিত ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, মাদিলাহাট কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন লাবনী আক্তার, শাহিনা বেগম ও মো. শাহিন নামে তিনজনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপর্যুক্ত বিষয় ও সূত্রের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটিকে অভিযোগের বিষয়ে নিরপেক্ষ সরেজমিন তদন্তপূর্বক প্রমাণসহ ৭ কার্যদিবসের মধ্যে বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়।

লাবনী আক্তার জানায়, তিনি কৌশলে আমার কাছ থেকে দুই দফায় নগদ ১০ লাখ টাকা নেয়। তার কলেজে ল্যাব সহকারী পদটি শূন্য না থাকা সত্ত্বেও আমাকে ওই পদে নিয়োগ দেন।

বিষয়টি নিয়ে সাবেক অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান মোবাইল ফোনে বলেন, যখন যে দল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকে সে দলের নেতা বা এমপি, মন্ত্রীর বাইরে কোনো প্রতিষ্ঠান প্রধান বাংলাদেশে কিছু করতে পারছে? আমি টাকা নিয়ে কাউকে নিয়োগের কনফার্মেশন দিতে পারব?

ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কলেজের অধ্যক্ষ, নিয়োগপত্রে তো আমারই সই থাকবে। কোন পদ আছে বা নাই সেটা অফিসিয়াল ব্যাপার। কোন পদ থাকে আর কোন পদ যে নাই এগুলো বিতর্কিত বিষয়, এগেুলো নিয়ে আলটিমেট ডিসিশন কেউ দিতে পারবে না। আমি যদি প্রমাণ করে দিতে পারি?

মাদিলা হাট কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধক্ষ্য আবু শহিদ জানান, আগেও টাকা আত্মসাতের দায়ে অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমানকে গভর্নিং বডি (জিবি) সাময়িক বরখাস্ত করেছিলেন।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক উপজেলা পল্লি উন্নয়ন (বিআরডিবি) কর্মকর্তা বিধু ভূষণ রায় জানান, বিষয়টি নিয়ে আমরা তদন্তের কাজ শেষ করে এক সপ্তাহ আগে লিখিত বিস্তারিত প্রতিবেদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর জমা দিয়েছি। প্রথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে বলেও জানান তিনি।

ইউএনও ও মাদিলা হাট কলেজের পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক মীর মো. আল কামাহ বলেন, সাবেক অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমানেরর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close