ক্রীড়া প্রতিবেদক

  ২৩ মার্চ, ২০২৪

বোলিংয়ে রং ছড়ালেও ব্যাটিংয়ে বিবর্ণ শান্তরা

শ্রীলঙ্কাকে ৩০০ রানের নিচে আটকে দারুণ স্বস্তির দিন পার করার কথা ছিল বাংলাদেশের। তবে সেটা আর হলো না। নিজেরা ব্যাট করতে নেমে দ্রুত ৩ উইকেট হারিয়ে তৈরি হয়েছে চাপ। ঝলমলে শুরুর পর ম্যাচে এখন লঙ্কানদের দাপটই বেশি। সিলেটে প্রথম টেস্টে প্রথম দিন শেষে ২৪৮ রানে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার ২৮০ রানের জবাবে ১০ ওভার ব্যাট করে ৩ উইকেট হারিয়ে ৩২ রান তুলেছে স্বাগতিক দল।

তৃতীয় ওভারেই প্রথম ধাক্কা খায় স্বাগতিকরা। বিশ্ব ফার্নেন্দোর ভেতরে ঢোকা বল পেছনের পায়ে খেলতে গিয়ে পরাস্ত হন জাকির হাসান। এলবিডব্লিউর আউটে রিভিউ নিয়েও লাভ হয়নি। পঞ্চম ওভারে একইভাবে বিদায় হয় অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর। বিশ্বকে পেছনের পায়ে খেলতে যান তিনিও। রিভিউও নষ্ট করে বিদায় নেন ৫ রান করে। চারে নামা মুমিনুল হক কাসুন রাজিতার বলে ব্যাটের ফেইস ওপেন করে থার্ডম্যান দিয়ে এক বাউন্ডারি পেয়েছিলেন। আরেকটু ওপরে ওঠা আরেক বল তার ব্যাটে ছোবল হেনে জমা পড়ে স্লিপ ফিল্ডারের হাতে। ৩১ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর বাকিটা সময় টিকে থাকার জন্য নাইটওয়াচম্যান তাইজুল ইসলামকে পাঠিয়ে দেয় বাংলাদেশ। এক প্রান্তে উইকেট পতনের মাঝে ৩০ বলে ৯ রান করে অপরাজিত আছেন মাহমুদুল হাসান জয়।

উইকেটে সবুজ ঘাসের ছোঁয়া থাকায় সকালের শুরু থেকেই সুইং পেলেন বাংলাদেশের পেসাররা। সেটা বেশ ভালোভাবে কাজেও লাগালেন সৈয়দ খালেদ আহমেদ, শরিফুল ইসলামরা। দারুণ লাইন লেন্থ বজায় রেখে করা বোলিংয়ে সকালের শুরুতে নিশান মাদুশকা, দিমুথ করুনারত্নে, কুশল মেন্ডিস, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস, দীনেশ চান্দিমালকে সাজঘরে পাঠান খালেদরা। দিনের প্রথম সেশনে খালেদ তিনটি আর শরিফুল নিয়েছেন একটি উইকেট। এদিকে উইকেট না পেলেও গতিময় বোলিংয়ে লঙ্কান ব্যাটারদের ভীতি ধরিয়েছেন নাহিদ রানা। ৫৭ রানে ৫ উইকেট হারানো সফরকারীরা ঘুরিয়ে দাঁড়িয়েছে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা এবং কামিন্দু মেন্ডিসের সেঞ্চুরিতে। দিনের শেষ ভাগে নাহিদের গতিতে পরাস্ত হয়ে ২৮০ রানে অলআউট হয় শ্রীলঙ্কা। শেষ বিকেলে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশকে হতাশায় ডুবিয়েছেন জাকির হাসান, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হকরা। দ্রুতই তিন উইকেট হারিয়ে মাত্র ৩২ রান তোলে স্বাগতিকরা। শ্রীলঙ্কার চেয়ে ২৪৮ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় দিন ব্যাটিংয়ে নামবেন মাহমুদুল হাসান জয় ও তাইজুল ইসলাম। শেষে বিকেলের ব্যাটিং হতাশায় মিলিয়ে গেছে সকালের সৌরভময় বোলিং।

সিলেটে আগে বোলিং করতে নেমে দিনের শুরুতেই সাফল্য পায় বাংলাদেশ। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে বাংলাদেশকে উইকেট এনে দেন খালেদ। ডানহাতি এ পেসারের ফুল লেংথ ডেলিভারিতে ড্রাইভ করতে গিয়ে এজ হয়ে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন নিশান মাদুশকা। তৃতীয় স্লিপে দাঁড়িয়ে দারুণ এক ক্যাচ নিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। মাদুশকাকে ফিরতে হয় ২ রানে। তিনে নেমে করুনারত্নের সঙ্গে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন মেন্ডিস। যদিও তাদের জুটি বড় হতে দেননি খালেদ।

ডানহাতি এ পেসারের শরীর বরাবর বাউন্সারে কাট করবেন নাকি ছেড়ে দেবেন এমন দ্বিধায় থাকা মেন্ডিসের ব্যাটে বল লেগে তা চলে যায় গালিতে। জাকির ক্যাচ নিলে শ্রীলঙ্কার অধিনায়ককে ফিরতে হয় ১৬ রানে। একই ওভারের শেষ বলে ফিরেছেন করুনাত্নেও। খালেদের অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারিতে ড্রাইভ করতে গিয়ে বলের লাইন মিস করেছিলেন লঙ্কান ওপেনার। তবে ব্যাট-প্যাডের মাঝে ফাঁকা থাকায় সেখান দিয়ে বল আঘাত হানে স্টাম্পে। খালেদের দারুণ ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে করুনারত্নেকে ফিরতে হয় ১৭ রানে। শ্রীলঙ্কার রান ৫০ হওয়ার আগে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসকেও ফিরিয়েছে বাংলাদেশ। খালেদের হালকা লাফিয়ে ওঠা বল কভারে ঠেলে দিয়েই রানের জন্য দৌড় দেন চান্দিমাল। অভিজ্ঞ এই ব্যাটারের ডাকে সাড়াও দেন ম্যাথিউসও। মিড অফ থেকে দৌড়ে এসে দারুণ থ্রোতে স্ট্রাইক প্রান্তের স্টাম্প ভাঙেন শান্ত। স্টাম্প ভাঙার আগে পৌঁছাতে পারেননি ম্যাথিউস। অভিজ্ঞ এ ব্যাটারকে ফিরতে হয় মাত্র ৫ রানে। চান্দিমাল ফিরেছেন একটু পরই। শরিফুলের লেগ স্টাম্পের ওপর করা ব্যাক অব লেন্থ ডেলিভারিতে গ্ল্যান্স করতে গিয়ে মিরাজের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন।

চান্দিমাল বিদায় নিয়েছেন ৯ রানে। অভিজ্ঞ এ ব্যাটারের বিদায়ে ৫৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে শ্রীলঙ্কা। সকালের ধাক্কা সামাল দিতে জুটি গড়ে তোলেন কামিন্দু ও ধনাঞ্জয়া। যদিও কামিন্দুকে শুরুতেই ফেরাতে পারত বাংলাদেশ। নিজের খেলা প্রথম বলেই দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন কামিন্দু। কিন্তু সেটা লুফে নিতে পারেনি মাহমুদুল হাসান জয়। জীবন পেয়ে অবশ্য আর পেছন ফিরে তাকাননি বাঁহাতি এ ব্যাটার।

প্রথম সেশনের ধাক্কা সামলে দ্বিতীয় সেশনে কাউন্টার অ্যাটাক করে শ্রীলঙ্কা। লাঞ্চের পর বাংলাদেশের বোলারদের ওপর রীতিমতো ঝড় বইয়ে গেছে। দারুণ ব্যাটিংয়ে ৫২ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়েছেন ধনাঞ্জয়া। আরেক ব্যাটার কামিন্দু হাফ সেঞ্চুরি করেছেন ৫৮ বলে। দিনের দ্বিতীয় সেশনে কোন উইকেট না হারিয়ে ২৭ বলে ১২৫ রান তোলে সফরকারীরা। চা বিরতির পর এসে ১২৬ বলে সেঞ্চুরি করেছেন কামিন্দু। সেঞ্চুরি পাওয়ার পর অবশ্য বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি বাঁহাতি এ ব্যাটার। ধনাঞ্জয়ার সঙ্গে কামিন্দুর ২০২ রানের জুটি ভাঙেন নাহিদ রানা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close