ডা. মো. সেলিম রেজা

  ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

চুল পড়ে যাওয়া রোধে যা করবেন

চুল মানুষের সৌন্দর্যের প্রতীক। দৈহিক সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে নারী-পুরুষ উভয়ের মাথায় পর্যাপ্ত চুল থাকা জরুরি। তাই বিয়েশাদি, প্রেম, প্রণয়ের ক্ষেত্রে চুলের সৌন্দর্যকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। কোনো কোনো বিশেষ চাকরির ক্ষেত্রেও চুল গুরুত্বপূণ্য ভূমিকা পালন করে। শারীরিক সৌন্দর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রাচীন মিসরীয় নারীরা রূপচর্চার পাশাপাশি চুলের আলাদা যত্ন নিতেন। মাথার চুল ঘন-কালো ও স্বাস্থ্য উজ্জ্বল রাখতে এবং চুল পড়া রোধ করতে তারা বিভিন্ন ধরনের ভেষজ তেল ব্যবহার করতেন। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ফ্রান্সের রাজা চতুর্দশ লুই সিফিলিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর তার সব চুল পড়ে মাথায় টাক হয়ে যায়। একজন শাসক হিসেবে তার মাথায় চুল না থাকাটা একটি অমর্যদাকর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তার এই টাক মাথা ঢাকতে তিনি কোনো না কোনো উপায় খুঁজতে থাকেন। আর এই ভাবনা থেকে তিনি পরচুলা পরিধান করতেন।

পরচুলা হলো পাট দিয়ে নির্মিত এক ধরনের বিশেষ চুল, এটাকে কৃত্তিম চুলও বলা হয়। তখনকার সমাজে কেশহীন শাসক শ্রেণির লোকরাই শুধু তাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে এই পরচুলা ব্যবহার করতেন। তবে এ ধরনের কৃত্তিম চুল ব্যবহারের ফলে তাদের কিছু স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি তৈরি হয়েছিল। যেমন : অ্যালার্জি, চর্মরোগসহ নানা ধরনের জটিলতার কারণে পরচুলার ব্যবহার তখন বিলুপ্ত হতে থাকে। মুঘল সম্রাট শাজাহান তার প্রাণপ্রিয় স্ত্রী মমতাজ বেগমের আকস্মিক মৃত্যুতে তিনি এতটাই ভেঙে পড়েছিলেন, তিনি রাজকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে ভীষণ অমনোযোগী হয়ে ওঠেন, এমনকি এ ঘটনায় এতটাই হতাশায় নিমজ্জিত হন, সাত দিন একটি কক্ষে অবস্থান করেন। আর এই সাত দিন কারো সঙ্গে তিনি দেখা পর্যন্ত করেননি। সাত দিন পর তিনি যখন জনসম্মুক্ষে আসেন, তখন সম্রাট শাহজাহানের চুল সাদা হয়ে গিয়েছিল। এটা ছিল ইতিহাস তথা মানব জীবনের একটি বিরল ঘটনা।

চুল পেকে যাওয়া বা পড়ে যাওয়া বর্তমান সময়ে মানুষের জন্য একটি কঠিন সমস্যা। মানুষের মাথার চুল পড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ হলো বংশগত কারণ অর্থাৎ জেনেটিক। আর এই জিনগত কারণে মানুষের মাথার চুল পড়ে যায়। মানুষের মাথার চুল পড়ে যাওয়ার আরেকটি অন্যতম প্রধান কারণ হলো ওৎড়হ এর ফবভরপরবহপু অর্থাৎ শরীরে রক্তস্বল্পতা। কারণ রক্তের মাধ্যমে চুলে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে, তাই শরীরে রক্তের ঘাটতি থাকলে মানুষের মাথার চুল পড়ে যেতে পারে। তিরিশ বছরের পর থেকে ছেলেদের ক্ষেত্রে টেস্টিস্টোরণের লেভেল কমতে থাকে। আর এই টেস্টিস্টোরণ হরমোন কমে যাওয়ার কারণে ছেলেদের মাথার চুল কমতে শুরু করে। মেয়েদের ক্ষেত্রে ঠিক একই নিয়মে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের ইস্টোজেন ও প্রজেস্টরণের আধিক্য কমতে থাকে। যার ফলে শরীরের লাবণ্য কমে যায় এবং চুল পড়ার প্রবণতা দেখা যায়। ভিটামিন ‘ই’র অভাবে মাথার চুল পড়ে যায়। ভিটামিন ‘ই’ স্বাস্থ্য উজ্জ্বল চুল নিশ্চিত করে। ভিটামিন ‘ই’, অর্থাৎ বায়োটিন ও জিংকের অভাবেও চুল পড়ে যায়। ভিটামিন ‘ই৭’ জিংক চুল পড়া রোধ করে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। মাথায় অতিরিক্ত খুশকি থাকার কারণে মানুষের চুল পড়ে যায়। থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি হলেও চুল পড়ে যায়। ছত্রাকজনিত সংক্রমণেও মানুষের মাথার চুল পড়ে যায়। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কারণেও মানুষের মাথার চুল ধীরে ধীরে পড়ে যায়। মানুষের মাথার চুল পড়ে যাওয়ার লক্ষণ ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়। তাই চুল পড়ে যাওয়ার লক্ষণ ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়। তাই চুল পড়ার লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই উত্তম।

লেখক : এমবিবিএস, এমডিইএম (বারডেম)

কনসালট্যান্ট, ডায়াবেটোলজিস্ট হরমোনজনিত

রোগের বিশেষজ্ঞ ও জেনারেল ফিজিশিয়ান

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close