প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৭ মে, ২০২৪

মোকাবিলায় প্রস্তুত উপকূল

ঘূর্ণিঝড় রেমালের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা। প্রস্তুত রাখা হয় সাইক্লোন সেল্টার। দুর্যোগ-পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য গঠন করা হয়েছে মেডিকেল ও স্বেচ্ছাসেবক টিম। এ ছাড়া মজুদ রাখা হয়েছে পর্যাপ্ত শুকনো খাবার, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও নগদ টাকা। উপকূলীয় এলাকার প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

খুলনা : খুলনাঞ্চলের উপকূলের মানুষ সাইক্লোন সেন্টারগুলোয় গতকাল থেকেই আশ্রয় নিতে শুরু করেছেন। এসব এলাকায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন জানান, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার জন্য ৬০৪টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব সাইক্লোন শেল্টারে মোট ৩ লাখ ১৫ হাজার ১৮০ জন আশ্রয় নিতে পারবে। এ ছাড়া তিনটি মুজিব কিল্লায় ৪৩০ জন মানুষ আশ্রয় ও ৫৬০টি গবাদিপশু রাখা যাবে। কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছা উপজেলায় ৫ হাজার ২৮০ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত।

মোংলা : পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র ও পর্যটন কেন্দ্রের ওসি আজাদ কবির রবিবার দুপুরে জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে চার ফুট পানি বেড়ে সুন্দরবন তলিয়ে গেছে। পানির চাপ আরো বাড়বে। তবে বন্যপ্রাণীর কোনো ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি। আজাদ কবির আরো বলেন, পুরো সুন্দরবন বিভাগের কর্মকর্তা ও বনরক্ষীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বন বিভাগের ঝুঁকিপূর্ণ ক্যাম্পগুলোয় থাকা বনরক্ষীদের নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়েছে।

শরণখোলা (বাগেরহাট) : শরণখোলা উপজেলার চারটি ইউনিয়নের মানুষের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ৯০টি সাইক্লোন সেন্টার ও পাঁচটি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত শুকনো খাবার মজুদ রাখার কথা জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। এ ছাড়া কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুদীপ্ত কুমার সিংহ এসব তথ্য জানান। পুলিশ বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

বেতাগী (বরগুনা) : বেতাগী উপজেলা ভূমি অফিসার বিপুল সিকদার জানান, উপজেলায় ১২০টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব সাইক্লোন শেল্টারে মোট ৬০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন। মোট ৫০ জন স্বেচ্ছাসেবকসহ একাধিক সরকারি কর্মকর্তা প্রস্তুত থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকার জন্য বলা হয়েছে।

পাইকগাছা (খুলনা) : খুলনার পাইকগাছার দেলুটি ও গড়ইখালী, লস্কর, সোলাদানা, রাড়ুলী, গদাইপুর, হরিঢালী ইউনিয়নের ঝুঁকিপূর্ণ ভাঙনকবলিত এলাকার চেয়ারম্যানসহ জনপ্রতিনিধিরা সতর্ক রয়েছেন। উপজেলায় ১০৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তত রাখা হয়েছে।

শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) : উত্তাল হয়ে উঠেছে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপকূলের নদ-নদী। প্রবল ঢেউ আছড়ে পড়ছে জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধের ওপর। শ্যামনগরের কপোতাক্ষ, খোলপেটুয়া, চুনা, কালিন্দিসহ সুন্দরবন সংলগ্ন নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে তিন থেকে চার ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) এ কে এম ইকবাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, সুন্দরবন ও সাগরে মাছ শিকারে যাওয়া জেলেদের লোকালয়ে ফিরতে পরামর্শ দিয়ে তাদের উদ্ধারে বনকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজিবুল আলম বলেন, উপজেলায় মোট ১৬৩ আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। এ ছাড়া প্রয়োজনে বি?ভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য বহুতল ভবন নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ব্যবহার করা হবে।

কক্সবাজার : কক্সবাজার ছাড়ছেন পর্যটকরা। কক্সবাজার বিমানবন্দরে বিমান ওঠানামা বন্ধ ঘোষণা করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। কক্সবাজারে দেখা দিয়েছে টিকিট সংকট। কক্সবাজারে ৬৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। মহেশখালী, টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিতে শুরু করেছে মানুষ। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানিয়েছেন, সিপিপির ৮৬০০ এবং রেডক্রিসেন্টের ২২০০ সহ ১০ হাজার ৮০০ স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ৪৮৬ টন জিআর চাল, ২ লাখ ৭৫ হাজার নগদ টাকা, জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তহবিল ১৮ লাখ ২৩ হাজার টাকা, ২৯ বান্ডিল ঢেউটিন সঙ্গে গৃহ নির্মাণ মঞ্জুরি অর্থ ৬৯ হাজার টাকা মজুদ আছে। এদিকে, সমুদ্রের জোয়ারের পানি ঢুকে পড়েছে কক্সবাজার শহরের সমিতিপাড়ায়। সমিতিপাড়া বাজার থেকে কুতুবদিয়াপাড়া, সমিতিপাড়া, মোস্তাকপাড়া, বাসিন্নাপাড়ার নিচু অংশ প্লাবিত হয়েছে।

মিরসরাই (চট্টগ্রাম) : চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ৭৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, উপকূলের ইউনিয়নগুলোয় ইউপি চেয়ারম্যানদের সহায়তায় কাজ করছে।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জরুরি ত্রাণের বরাদ্দ এরই মধ্যে পাঠানো হয়েছে। পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। মেডিকেল টিম, ফায়ার সার্ভিসসহ সব প্রস্তুতি গ্রহণ ও জরুরি প্রয়োজনে উপজেলার দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর টিম প্রস্তুত রয়েছে।

মিরসরাই উপজেলা সিপিপি টিম লিডার এম সাইফুল্লাহ দিদার বলেন, ১০ ইউনিয়ন ও এক পৌরসভায় আমাদের ৮০ টিম মাঠে থাকবে। ৮০ টিমে ১ হাজার ৬০০ স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছে। একটি টিমে ১০ জন পুরুষ ও ১০ জন মহিলা সদস্য রয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, ভারী বৃষ্টি হলে পাকা বোরো ধানের কিছুটা ক্ষতি হতে পারে। কৃষকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে দ্রুত ধান কেটে ফেলার।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন বলেন, ২১টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত করা হয়েছে। মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাহফুজা জেরিন বলেন, ১৬ ইউনিয়নের মধ্যে উপকূলীয় তিনটি ইউনিয়নকে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয়েছে। শুকনো খাবার, স্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটের ব্যবস্থা রয়েছে।

বাগেরহাট : মাছ ধরার ট্রলার গুলো উপকূলের ছোট ছোট খালে আশ্রয় নিয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে জেলার ৩৫৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে ও ৩ হাজার ৫০৫ জন স্বেচ্ছাসেবক। এ ছাড়া ৬৪৩ টন চাল ও ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সব কর্মকর্তার ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

ভোলা : জেলা প্রশাসক সূত্রে জানা যায়, জেলায় ৮৬৯টি আশ্রয়কেন্দ্র ও ৬৭৫টি মুজিব কিল্লা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যার মধ্যে ভোলা সদর উপজেলায় ১৩৭টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, দৌলতখান উপজেলায় ১১২টি আশ্রয়কেন্দ্র, বোরহানউদ্দিন উপজেলায় ১২২টি আশ্রয়কেন্দ্র, তজুমুদ্দিন উপজেলায় ৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র, লালমোহন উপজেলায় ১৯৮টি আশ্রয়কেন্দ্র, চরফ্যাশন উপজেলায় ১৬৫টি আশ্রয়কেন্দ্র, মনপুরা উপজেলায় ৫৯টি আশ্রয়কেন্দ্র সার্বিকভাবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

এ ছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে আসা মানুষের জন্য শুকনো খাবার, জ্বালানি ও জরুরি চিকিৎসাসেবা দিতে বেশ কয়েকটি টিম প্রস্তুত রেখেছেন ভোলার জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান বলেন, ৯২টি মেডিকেল টিম, ৭টি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সতর্ক করা হয়েছে কর্মকর্তাদের।

গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) : নৌদুর্ঘটনা এড়াতে রবিবার বেলা সাড়ে ৯টা থেকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথে সব লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বিআইডব্লিউটিএ। দৌলতদিয়া ঘাটে কর্মরত বিআইডব্লিউটিএর ট্রাফিক সুপারভাইজার মো. শিমুল ইসলাম বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই নৌরুটে লঞ্চ সার্ভিস বন্ধ থাকবে।’

হাতিয়া (নোয়াখালী) : হাতিয়ার সঙ্গে সব ধরনের নৌ যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। রবিবার সকালে উপজেলার নলচিরা নৌ-ঘাটে দেখা গেছে শত শত যাত্রী নদী পারাপারের অপেক্ষায় বসে রয়েছে। তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। হাতিয়ায় সিপিপির ১৭৭টি ইউনিটের সব ইউনিটের সদস্যরা কাজ করছেন। হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শুভাশীষ চাকমা জানান, হাতিয়াতে ২৪২ আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close