প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৭ মে, ২০২৪

লঘুচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড় রেমাল সৃষ্টির ধাপ

সাধারণত ঘূর্ণিঝড়ের সময় বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর ঘূর্ণিঝড় সতর্কতা কেন্দ্র থেকে ১-১১ পর্যন্ত সংকেত জারি করে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ১ নম্বর হচ্ছে দূরবর্তী সতর্কসংকেত, ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারিসংকেত, ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত, ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারিসংকেত, ৫, ৬ ও ৭ বিপৎসংকেত, ৮, ৯ ও ১০ মহাবিপৎসংকেত এবং ১১ নম্বর ঘূর্ণিঝড়ের প্রচণ্ডতার কারণে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকলে দেওয়া হয়।

কোন সংকেতের কী অর্থ : জাহাজ ছেড়ে যাওয়ার পর দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সম্মুখীন হতে পারে- এমন পূর্বাভাস থাকলে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কসংকেত দেওয়া হয়। আরো স্পষ্ট করে বললে, দূরবর্তী এলাকায় একটি ঝড়ো হাওয়ার অঞ্চল রয়েছে, যেখানে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬১ কিলোমিটার। ফলে সামুদ্রিক ঝড়ের সৃষ্টি হবে, তাই এ সতর্কবার্তা দেওয়া হয়ে থাকে।

দূরে গভীর সাগরে একটি ঝড় সৃষ্টি হলে এবং সেখানে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কিলোমিটার হলে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারিসংকেত দেওয়া হয়। এই সংকেত থেকে বোঝা যায়, বন্দর এখনই ঝড়ে কবলিত হবে না, তবে বন্দর ত্যাগকারী জাহাজ পথে বিপদে পড়তে পারে।

৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেওয়া হয় বন্দর ও বন্দরের বাইরে নোঙর করা জাহাজগুলো দুর্যোগকবলিত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে। এক্ষেত্রে বন্দরে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে এবং ঘূর্ণি বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০-৫০ কিলোমিটার হতে পারে।

বন্দর ঘূর্ণিঝড়কবলিত হলে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারিসংকেত দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে বাতাসের সম্ভাব্য গতিবেগ ঘণ্টায় ৫১-৬১ কিলোমিটার হয়ে থাকে। তবে ঘূর্ণিঝড়ের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার মতো তেমন বিপজ্জনক না হলে এ সংকেত দেওয়া হয়।

৫ নম্বর বিপৎসংকেত দেওয়া হয় বন্দর ছোট বা মাঝারি তীব্রতর এক সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে পড়লে। এক্ষেত্রে ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কিলোমিটার। ঝড়টি বন্দরকে বাঁ-দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকে এ সংকেত দেওয়া হয়। আবার একই পরিস্থিতিতে ঝড়টি বন্দরকে ডান দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকে ৬ নম্বর বিপৎসংকেত এবং ঝড়টি বন্দরের ওপর বা এর কাছ দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকে ৭ নম্বর বিপৎসংকেত দেওয়া হয়ে থাকে।

৮ নম্বর মহাবিপৎসংকেত বন্দর প্রচণ্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতর ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়তে পারে, এমন আশঙ্কা থেকে। এক্ষেত্রে ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার বা এর বেশি হতে পারে। প্রচণ্ড ঝড়টি বন্দরকে বাঁ-দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করবে, এমন পূর্বাভাস থেকে এই সংকেত দেওয়া হয়ে থাকে। আবার এই ঝড় বন্দরকে ডান দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করার পূর্বাভাস থাকলে ৯ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেওয়া হয়। একই ভাবে ঝড়টি বন্দরের ওপর বা এর কাছ দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকে ১০ নম্বর বিপৎসংকেত দেওয়া হয়।

প্রচণ্ড ঝড়ে আবহাওয়ার বিপৎসংকেত দেওয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে এবং স্থানীয় আবহাওয়া কর্মকর্তা পরিস্থিতি খুবই দুর্যোগপূর্ণ বলে মনে করলে ১১ নম্বর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সংকেত দেওয়া হয়।

যেসব ধাপ পার হয়ে ঘূর্ণিঝড় হয় : ঘূর্ণিঝড় হলো সমুদ্রে সৃষ্ট বৃষ্টি, বজ্র ও প্রচণ্ড ঘূর্ণি বাতাসসংবলিত আবহাওয়ার একটি নিম্নচাপ প্রক্রিয়া। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় হতে হলে প্রথমে সাগরে লঘুচাপ তৈরি হয়। প্রতি ঘণ্টায় বাতাসের গতিবেগ যখন ১৭ কিলোমিটার থাকে এবং বায়ুর চাপ কম থাকে, তখন একে লঘুচাপ বলা হয়। বাতাসে যদি ঘূর্ণন তৈরি হয়, অর্থাৎ ঘূর্ণিবায়ুর আবর্তন তৈরি হলে সেখানে বায়ুর চাপ কমে যায়। কারণ আশপাশ থেকে জলীয় বাষ্প আসে। জলীয় বাষ্প এলে বায়ুর চাপ কমে যায়। এর পরের ধাপে রয়েছে সুস্পষ্ট লঘুচাপ।

আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ‘লঘুচাপ শক্তির মাত্রা অর্জন করে ৩১ থেকে ৪০ কিমি প্রতি ঘণ্টায় বাতাসের বেগ থাকলে একে সুস্পষ্ট লঘুচাপ বলা হয়। অর্থাৎ লঘুচাপ আরো শক্তিমাত্রা অর্জন করে সুস্পষ্ট লঘুচাপে রূপ নেয়।’ তৃতীয় ধাপে রয়েছে সাগরে নিম্নচাপ তৈরি হওয়া। সুস্পষ্ট লঘুচাপ আরো শক্তিমাত্রা অর্জন করে তৈরি হয় নিম্নচাপ। এরপর নিম্নচাপ আরো শক্তিমাত্রা অর্জন করে তৈরি হয় গভীর নিম্নচাপ। পরে এটা সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়। তবে এই আবহাওয়াবিদ বলছেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রাথমিক ধাপই হচ্ছে সাগরে নিম্নচাপ তৈরি হওয়া।

ঝড়ের গতিবেগ যদি ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটার হয়, তখন তাকে ‘তীব্র’ ঘূর্ণিঝড় বা ‘সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’ বলা হয়। বাতাসের গতি ঘণ্টায় ১১৮ থেকে ২১৯ কিলোমিটার হলে সেটিকে ‘হ্যারিকেন’ গতিসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড় বা ‘ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’ বলা হয়। গতিবেগ ২২০ কিলোমিটার বা তার বেশি হলে তাকে ‘সুপার সাইক্লোন’ বলা হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close