প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৭ মে, ২০২৪

উপকূলে রেমালের আঘাত

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় রেমাল প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়ে গতকাল রবিবার রাতে উপকূলে আঘাত হেনেছে। রাত ৮টার দিকে ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র মোংলার দক্ষিণ-পশ্চিম দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ উপকূল ও বাংলাদেশের খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম করে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঘূর্ণিঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের উপপরিচালক মো. শামীম আহসান রাত সোয়া ৮টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়টির আকার প্রায় ৪০০ কিলোমিটার। এর অগ্রভাগ এদিন সন্ধ্যা ৬টার দিকেই খুলনা উপকূলের কাছে সুন্দরবনের দিকে প্রবেশ করে। সন্ধ্যার পর সাতক্ষীরা উপকূল স্পর্শ করে রেমালের অগ্রভাগ। ফলে তখনই ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি শুরু হয়, প্লাবিত হয় উপকূলীয় অঞ্চল। পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত এবং কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রেমাল যতই এগিয়ে আসতে থাকে, ততই পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে বাতাসের গতিবেগ।

গতকাল বিকেলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে জানান, ঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় ৮-১২ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর জানায়, রেমাল বাংলাদেশেই প্রবেশ করতে পারে। এতেও তীব্র ঝোড়ো হাওয়ার হাত থেকে নিস্তার পাবে না পশ্চিমবঙ্গ। গতকাল বিকেলে একটি সংবাদ সম্মেলনে আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের উপ-অধিকর্তা সোমনাথ দত্ত জানান, উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় রবিবার রাতে ঝড়ের গতিবেগ পৌঁছতে পারে ১০০-১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত। অন্যদিকে, কলকাতা, হাওড়া, হুগলি এবং পূর্ব মেদিনীপুরে ঝড়ের গতি থাকবে ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার। তবে তা বেড়ে ৯০ কিলেমিটারও হতে পারে বলে সতর্ক করেছে আবহাওয়া অফিস।

আবহাওয়া অফিসের শেষ পূর্বাভাস বলছে, গতকাল সন্ধ্যায় রেমাল পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপের ১৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে ছিল। একই সময়ে মোংলা থেকে ২২০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং খেপুপাড়ার ১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। রাতে বাংলাদেশের খেপুপাড়া এবং পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপের মাঝখান দিয়ে স্থলভাগে প্রবেশ করে প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে বাংলাদেশের মোংলার দক্ষিণ-পশ্চিমে আছড়ে পড়ে।

আবহাওয়া ডটকম জানায়, রেমালের প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে ১০ থেকে ১২ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হতে পারে। প্লাবিত হতে পারে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় অঞ্চল। রেমালের সর্বোচ্চ গতিবেগ উঠতে পারে ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১৩০ কিমি, যা দমকা হাওয়াসহ ঘণ্টায় ১৪০ কিমি থেকে ১৬০ কিমি পর্যন্ত উঠতে পারে। ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর সবচেয়ে উঁচু জলোচ্ছ্বাসের কবলে পড়তে পারে উপকূলীয় অঞ্চল। পশুর নদীতে যখন পূর্ণ জোয়ার থাকবে, তখনই রেমাল তার সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে আঘাত হানতে পারে। ফলে উঁচু জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে, আবহাওয়া অদিপ্তরের তথ্যমতে, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬২ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী এবং কাছাকাছি দ্বীপ ও নদীর চরগুলো ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেতের আওতায় থাকবে।

গতকাল আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে আট বিভাগেই দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী (২৪ ঘণ্টায় ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতিভারী (৮৯ মিলিমিটার) বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে। এদিন বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী।

তিনি বলেন, ?সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগ। অর্থাৎ ছয় ভাগের অগ্রগামী অংশের আঘাতে উপকূল প্লাবিত হয়েছে। প্রবল ঢেউ আছড়ে পড়ে বেড়িবাঁধের ওপর। বাঁধের কিছু অংশ ধসে পানি ঢুকে আশপাশের গ্রামগুলোয়। এজন্য শ্যামনগর ও আশাশুনি এলাকায় প্রবল বৃষ্টি হয়।

এর আগে সকাল থেকে সুন্দরবনসংলগ্ন চুনা, খোলপেটুয়া, মাংলঞ্চ ও যমুনা নদী ও কপোতাক্ষ নদে স্বাভাবিক জোয়ারের তুলনায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েকগুণ। লোকালয়ে পানি প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের বিষয়ে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দীন বলেন, স্বাভাবিকের তুলনায় পানি বেড়েছে পাঁচণ্ডছয় ফুট। ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও অশনির পর জেলার অধিকাংশ ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কার করা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে উচ্চ জোয়ারের পানিতে ভেসে মো. শরীফুল ইসলাম (২৪) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দুপুরে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধূলাসর ইউনিয়নের কাউয়ারচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মারা যাওয়া শরীফুল কলাপাড়া উপজেলার অনন্তপাড়া গ্রামের আবদুর রহিমের ছেলে।

জোয়ারের সময় পানি বেড়ে যাওয়ায় বেলা ১টার দিকে শরীফুল লোকজন নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য ফুফুর বাড়িতে রওনা দেন। এ সময় সাগরের জোয়ার পানিতে কাউয়ারচর এলাকা চার-ছয় ফুট পানিতে তলিয়ে ছিল। ওই এলাকা দিয়ে সাঁতার কেটে ফুফুর বাড়িতে যাওয়ার সময় সাগরে পানির ঢেউয়ের তোড়ে শরীফুল ভেসে যান। পরে ১ ঘণ্টা পর ওই স্থান থেকে শরীফুলের লাশ উদ্ধার করেন স্থানীয় লোকজন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close