নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৫ মে, ২০২৪

নতুন রূপে ফিরছে বঙ্গবাজার

সরু গলি, ছোট ছোট দোকান, ভেতরে ঘিঞ্জি পরিবেশ, ক্রেতাদের ভিড়ে ঠিকমতো নিশ্বাসও নেওয়া যেত না। সেই ঘিঞ্জি বঙ্গবাজার নতুন রূপে ফিরবে ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছে। বঙ্গবাজারের নাম পরিবর্তন করে রাখা হচ্ছে ‘বঙ্গবাজার পাইকারি নগর বিপণিবিতান’। ১ দশমিক ৭৯ একর জায়গার ওপর নির্মিত হবে ১০ তলা ভবন। প্রতিটি দোকান হবে ৮০ থেকে ১০০ বর্গফুটের।

গত বছরের ৪ এপ্রিল ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যায় রাজধানীর সবচেয়ে পুরোনো ও জনপ্রিয় পাইকারি কাপড়ের মার্কেট বঙ্গবাজার। অগ্নিকাণ্ডে নিজেদের সব হারিয়ে পথে বসেন ব্যবসায়ীরা। ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না পারলেও টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যেতে পুড়ে যাওয়া মার্কেটের খালি জায়গায় চৌকি বসিয়ে ব্যবসা করছেন তারা। পুড়ে যাওয়া পুরোনো বঙ্গবাজারকে আধুনিক বহুতল বাণিজ্যিক কেন্দ্রে রূপ দিতে যাচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।

আজ বেলা ১১টায় ‘বঙ্গবাজার পাইকারি নগর বিপণিবিতান’ নির্মাণকাজের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১০ তলা বিশিষ্ট ভবনের সম্ভাব্য নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩৮ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত এই বিপণিবিতানের নির্মাণকাজ ২০২৮ সালে শেষ হতে পারে।

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মুখপাত্র আবু নাছের বলেন, গত বছরের ৪ এপ্রিল বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সে সংগঠিত ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনে নতুন করে বঙ্গবাজার পাইকারি নগর বিপণিবিতান নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নির্মাণে কত টাকা খরচ হবে : ‘বঙ্গবাজার পাইকারি নগর বিপণিবিতান’ নির্মাণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সম্ভাব্য ব্যয় ধরেছে ৩৩৮ কোটি টাকা। ১০ তলা বিশিষ্ট ভবনের গ্রাউন্ড ফ্লোর ও বেজমেন্ট ছাড়াও থাকবে মোট আটটি ফ্লোর। ১ দশমিক ৭৯ একর জায়গার ওপর নির্মিত হতে যাওয়া বহুতল ভবনে থাকবে ৩ হাজার ৪২টি দোকান। প্রতিটি দোকানের আয়তন হবে ৮০-১০০ স্কয়ার ফুট। ভবনটিতে থাকবে আটটি লিফট, এর মধ্যে চারটি থাকবে ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য। আর বাকি চারটি কার্গো লিফট থাকবে মালামাল ওঠানামার জন্য। এ ছাড়া থাকবে গাড়ি পার্কিং, খাবারের দোকান, সমিতির অফিস, নিরাপত্তাকর্মী এবং সেখানকার কর্মীদের আবাসন ব্যবস্থা। এর আগে তিনটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এ ভবন নির্মাণের জন্য নকশা প্রণয়ন করে।

জানা যায়, ১০ তলাবিশিষ্ট আধুনিক এ ভবনে থাকবে বেজমেন্ট ও গ্রাউন্ড ফ্লোর। গ্রাউন্ড ফ্লোরে মোট ৩৮৪টি, প্রথম তলায় ৩৬৬টি, দ্বিতীয় তলায় ৩৯৭টি, তৃতীয় তলায় ৩৮৭টি, চতুর্থ তলায় ৪০৪টি, পঞ্চম তলায় ৩৮৭টি, ষষ্ঠ তলায় ৪০৪টি ও সপ্তম তলায় ৩১৩টি দোকান থাকবে। এ ছাড়া অষ্টম তলায় দোকান মালিক সমিতির অফিস, কর্মচারী ও নিরাপত্তাকর্মীদের আবাসনের ব্যবস্থা রাখা হবে। ভবনের পার্কিংয়ে একসঙ্গে প্রায় ১৮৫টি গাড়ি ও ১১০টি মোটরসাইকেল পার্কিং করা যাবে। ভবনটিতে ২২টি খাবারের দোকান রাখা হবে। সেই সঙ্গে নকশায় আরো ৮১টির বেশি দোকান রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিটি দোকানের আয়তন হবে ৮০-১০০ স্কয়ার ফুট।

যা বলছেন বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা : বঙ্গবাজারে নতুন বহুতল আধুনিক মার্কেট নির্মাণ হওয়া বিষয়ে বঙ্গবাজারের নিউ কালেকশন দোকানের মালিকে ইমন আহমেদ বলেন, বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়ার পর এখানকার ব্যবসায়ীরা বলতে গেলে সবাই পথে বসে গেছেন। পরে টিকে থাকার লড়াইয়ে এখানে খোলা আকাশের নিচে আমারা ব্যবসা পরিচালনা করেছি। রোদ, বৃষ্টি, ঝড়, জলাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা এখানে ব্যবসার আশায় বসে থেকেছি। এই অবস্থায় নতুন বহুতল ভবনের কাজ শুরু হওয়ার খবর অবশ্যই আমাদের আনন্দের তবে আমাদের দাবি একটাই, যারা যোগ্য, যারা এখানেই ব্যবসা করে আসছেন সারা জীবন ধরে, তারাই যেন মার্কেটে দোকান বরাদ্দ পান।

হিরা ফ্যাশন নামের আরেক দোকানি জহুরুল ইসলাম বলেন, আমরাই যেন দোকান বরাদ্দ পাই এটাই আমাদের দাবি। আমারা ক্ষতির সম্মুখীন হলাম, তবু টিকে থাকতে এখানেই অস্থায়ী দোকান বসিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এমন পরিস্থিতির পর মার্কেট নির্মাণ হলে বাইরের লোকরা এসে এখানে দোকান নিলে তা আমারা মেনে নেব না। আমারা চাই আমরা যারা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত তারাই যেন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রথমেই এখানে দোকান বরাদ্দ পাই।

টপ কালেকশন নামের আরেক দোকানের মালিক জব্বার মিয়া বলেন, দোকান পুড়ে যাওয়ার পর বঙ্গবাজারে আর ব্যবসা নেই। খোলা আকাশের নিচে আমারা এতদিন বসে দোকান পরিচালনা করলাম। আগের তুলনায় অর্ধেকও ব্যবসা এখন আর হয় না। কারণ ক্রেতা আর সেভাবে আসে না, এখন এসব দোকান দেখলে মনে হয়, এটা ফুটপাতের দোকান। এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে আধুনিক বহুতল মার্কেট নির্মাণ হওয়ার খবর আমাদের জন্য খুব খুশির খবর। আমরা প্রতিটি ব্যবসায়ীরা চাই যেন মার্কেট নির্মাণের পর বঙ্গবাজার সেই আগের বেচাকেনা, ব্যবসা ফিরে আসুক। শুনেছি আধুনিক মার্কেট হবে, তাতে আশা করছি আমাদের আগের ব্যবসা ফিরে আসবে। তবে সিটি করপোরেশনের কাছে অনুরোধ যেন প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরাই যেন মার্কেটের দোকান বরাদ্দ পান। এখানে যেন কোনো অসাধু চক্রের খপ্পর না থাকে। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের ছাড়া বহিরাগত অন্যদের যেন প্রাধান্য দেওয়া না হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close