নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৯ জানুয়ারি, ২০২৪

বেকারত্ব কমেছে, বেশি কর্মসংস্থান কৃষিতে

২০২৩ সালের শেষে বেকার কমেছে ২৪ লাখ ৭০ হাজার * ২০২২ সালে ছিল ২৫ লাখ ৮০ হাজার * বছরওয়ারি হিসাবে বেকারত্বের হার ৩.৩৬% * ১০ বছরে ৮ গুণ বেড়েছে কৃষি মজুরি

গত বছর দেশে বেকারের সংখ্যা কমেছে। আগের তুলনায় এক বছরে বেকারত্ব কমছে ০.১৭ শতাংশ। তবে ২০২৩ সালের শেষ তিন মাসে দেশে বেকার জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেড়েছে। আর গত বছরের ডিসেম্বরে কৃষি খাতে সবচেয়ে বেশি ৩ কোটি ১৭ লাখ ৮০ হাজার নারী-পুরুষ কাজ করেন। শিল্পে এ সংখ্যা ১ কোটি ২৪ লাখ ৯০ হাজার আর সেবা খাতে ২ কোটি ৬৮ লাখ ৪০ হাজার। সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপে উঠে এসেছে এ তথ্য।

বিবিএস বলছে, সাত দিনে কমপক্ষে এক ঘণ্টাও কোনো কাজ করেনি কিন্তু কাজের জন্য প্রস্তুত ছিলেন এবং জরিপের আগে ৩০ দিন বেতন বা মজুরি বা মুনাফার বিনিময়ে কাজ খুঁজেছেন, তাদের বেকার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

বিবিএসের বছরওয়ারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের সাময়িক হিসাবে দেশে বেকারের সংখ্যা বেশ কমেছে। গত বছর শেষে বেকার লোকের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ২৪ লাখ ৭০ হাজারে। ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ ৮০ হাজার। বছরওয়ারি হিসাবে, গত বছর শেষে দেশে বেকারত্বের হার দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

বিবিএসের জরিপ অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে দেশের শ্রমশক্তি আছেন ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৬০ হাজার নারী-পুরুষ। এর মধ্যে পুরুষ ৪ কোটি ৮০ লাখ ১০ হাজার এবং নারী ২ কোটি ৫৪ লাখ ৫০ হাজার। এর মধ্যে ডিসেম্বর শেষে দেশে ৭ কোটি ১১ লাখ ১০ হাজার নারী-পুরুষ জরিপের সময়কালের আগের সাত দিনে এক ঘণ্টা মজুরির বিনিময়ে কাজ করেছেন। এর মধ্যে পুরুষ ৪ কোটি ৬৪ লাখ ৪০ হাজার এবং নারী ২ কোটি ৪৬ লাখ ৭০ হাজার।

কর্মসংস্থান বেশি কৃষিতে : বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএইউ) কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের এক গবেষণা বলছে, ফসল আবাদে চাষ, সেচ, নিড়ানি, কীটনাশক প্রয়োগে ৮০ থেকে ৯৫ শতাংশ যান্ত্রিকীকরণ হয়েছে। অথচ ফসল রোপণ, সার দেওয়া, কাটা, মাড়াই, ঝাড়াই ও শুকানোর ক্ষেত্রে যন্ত্রের ব্যবহার ১ শতাংশের কম।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি ব্যবসা ও বিপণন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত ১০ বছরে কৃষি মজুরি প্রায় ৮ গুণ বেড়েছে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএইউ) কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গ্রামীণ শ্রমশক্তির ৪০ শতাংশ এখন কৃষিকাজ করে। ২০৩০ সাল নাগাদ তা কমে ২০ শতাংশ হবে। ফলে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ছাড়া আর বিকল্প নেই। কায়িক শ্রমের বদলে যন্ত্রের মাধ্যমে কৃষিকাজে তরুণদের আগ্রহ বাড়ছে। এখনকার প্রান্তিক কৃষিকে বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তর ঘটাতে তরুণরা অন্যতম ভূমিকা পালন করতে পারেন।

উৎপাদন খরচ কমছে : টাঙ্গাইলের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা সামসুল কবির জানান, প্রথাগত পদ্ধতিতে কৃষি শ্রমিকদের দিয়ে ফসল কাটানো, মাড়াই, ঝাড়াই ও বস্তাবন্দি করতে এক একর জমিতে খরচ হয় ১১ থেকে ১২ হাজার টাকা। এতে প্রতি ১০০ কেজি ধানে প্রায় ৭ কেজি ধান নষ্ট হয়। অথচ ইয়ানমার কম্বাইন্ড হারভেস্টর ব্যবহারে একই কাজ করতে খরচ হয় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। আর ধান নষ্ট হয় প্রতি একরে কেবল ১ কেজি। প্রথাগত পদ্ধতিতে যেখানে ১ একর জমির ধান কাটার সব কাজ করতে ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিকের ২ দিন লাগত, কম্বাইন্ড হারভেস্টর দিয়ে একই কাজ করা যাচ্ছে কেবল এক ঘণ্টার মধ্যেই।

ময়মনসিংহের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা আফজাল হোসেন একটি ইয়ানমার কম্বাইন্ড হারভেস্টর কিনেছেন। তিনি বলেন, জাপানি প্রযুক্তির এই হারভেস্টর দিয়ে জমিতে শুয়ে পড়া ধান এবং কাদাপানির ধানও কাটা সম্ভব। যন্ত্রটিতে ছয়টি সেন্সর আছে, যাতে কোনো ময়লা বা শক্ত কিছু আটকে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। তখন এটি আবার পরিষ্কার করে কাজ শুরু করি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close