নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৮ জানুয়ারি, ২০২৪

ব্যবসায় এক নম্বর সমস্যা দুর্নীতি

- সিপিডি

দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে এক নম্বর সমস্যা দুর্নীতি। প্রায় ৬৮ শতাংশ ব্যবসায়ী উচ্চমাত্রার দুর্নীতির এ সমস্যাকে এক নম্বর হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। দ্বিতীয় স্থানে আছে অদক্ষ আমলাতন্ত্র। প্রায় ৫৫ শতাংশ ব্যবসায়ী এটি মনে করেন। আর ব্যবসা-বাণিজ্যে তৃতীয় বড় সমস্যা হিসেবে বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতিশীলতার বিষয়টিকে মনে করেন ৪৬ শতাংশ ব্যবসায়ী।

গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যবসায় পরিবেশ-২০২৩-এর উদ্যোক্তা জরিপের ফল প্রকাশ করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। এ উপলক্ষে ধানমন্ডির সিপিডির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

এক ব্যবসায়ী জানান, ‘তিনি একটি পরিষেবা সংযোগ নিতে আবেদন করলে তার কাছে যে পরিমাণ ঘুষ চাওয়া হয়েছিল, তা তার পরিকল্পিত বিনিয়োগের সমপরিমাণ।’ মোটাদাগে ব্যবসা-বাণিজ্যে ১৭টি সমস্যা চিহ্নিত করে সিপিডি। শীর্ষ তিনটি ছাড়া অন্য সমস্যাগুলো হলো- অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, অর্থায়নের সীমাবদ্ধতা, জটিল কর নীতি, বারবার নীতি পরিবর্তন, দক্ষ শ্রমশক্তির অভাব, উদ্ভাবনের সক্ষমতায় ঘাটতি, শ্রমশক্তিতে দুর্বল নৈতিকতা, উচ্চ করহার, জলবায়ু পরিবর্তন, সরকারের অস্থিতিশীলতা, অপরাধ ও চুরি, বিধিনিষেধমূলক শ্রম আইন ও দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা।

ব্যবসায়ীদের মতামতের ভিত্তিতে জরিপটি করেছে সিপিডি। মূলত ২০২৩ সালে ব্যবসায় পরিবেশ কেমন ছিল, সেটা বিশ্লেষণ করার জন্য এ জরিপ করা হয়। গত বছরের মে-জুলাই সময়ে ঢাকা, গাজীপুর ও সাভারের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ৭১ শীর্ষ কর্মকর্তার মতামত নেওয়া হয়। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) সহায়তায় এ জরিপ করা হয়। এছাড়া ডব্লিউইএফের ফিউচার অব গ্রোথ রিপোর্ট ২০২৩-এর বাংলাদেশ অংশের জন্য সিপিডি তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে। তবে ব্যবসা-বাণিজ্যে যে ১৭টি সমস্যার কথা বলা হয়েছে, তা বিশ্বের অন্য দেশগুলোর জন্যও প্রযোজ্য। কোনো দেশে এসব সমস্যার মাত্রা ভিন্ন।

সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, একজন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, তিনি একটি পরিষেবা সংযোগ নিতে আবেদন করলে তার কাছে যে পরিমাণ ঘুষ চাওয়া হয়েছিল, তা তার পরিকল্পিত বিনিয়োগের সমপরিমাণ। বড় ব্যবসায়ীরা কোনো না কোনোভাবে ঘুষ-দুর্নীতি সামলে নিতে পারলেও ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের কাছে এটি বড় সমস্যা।

সিপিডির এ গবেষণা পরিচালক বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যে পুরোনো চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি এবার নতুন কিছু চ্যালেঞ্জ সামনে এসেছে। যেমন বৈদেশিক মুদ্রার সংকট। এসব কারণে ব্যবসায় পরিবেশ আরো জটিল হয়েছে। তিনি আরো বলেন, কিছু ব্যবসায়ীর সক্ষমতা বেড়েছে। কিন্তু এ সংখ্যা খুবই কম। ব্যবসা-বাণিজ্যে সমস্যাগুলোর সমাধান না হলে বৈষম্য বাড়বে। করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে যাবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা পিছিয়ে পড়বে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ তলানিতে আছে। ভিয়েতনাম, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ডসহ এশিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর তুলনায়ও বেশ পিছিয়ে আছে দেশটি। ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশের উন্নতি করতে সিপিডি ১০টি সুপারিশ করেছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো-ব্যবসায় বাণিজ্যের পরিবেশের উন্নতিতে বিভিন্ন সরকারি কার্যালয়ের ১০০ দিন, ১ বছর, ৩ বছর ও ৫ বছরের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন; ন্যায়পাল কার্যালয় স্থাপন; সীমিত সময়ের জন্য খাতভিত্তিক কিছু কমিশন গঠন, যেমন ব্যাংক, শেয়ারবাজার, নিয়ন্ত্রক সংস্থার সংস্কার; একটি সমন্বিত আর্থিক লেনদেন খাত প্রতিষ্ঠা; সরকারি কেনাকাটা ব্যবস্থা আধুনিক করা ইত্যাদি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close