মোফাজ্জল হোসেন, ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ

  ২১ মে, ২০২৪

মাতৃতুল্য প্রিয় ম্যামের ভালোবাসা

কোনো এক রাতে ফেসবুক স্ক্রল করতে করতে, খোলা আকাশের নিচে প্রকৃতির মাঝে ক্লাসের একটা ভিডিও সামনে আসে। ভিডিওর কথাগুলো যেন আমাকেই উদ্দেশ্য করে বলছে, প্রায় ১ ঘণ্টার সম্পূর্ণ ভিডিও আমি দেখে শেষ করি। এরপর সেই পেজের ভেতরে গিয়ে আরো ৮-১০টা ভিডিও দেখি। প্রতিটি ভিডিওর কথাগুলো শুনে মনে হচ্ছিল বাস্তব জীবন থেকে নেওয়া। মন চাচ্ছিল ভিডিওর মানুষটির সঙ্গে সাক্ষাৎ করি, কথা বলি। কিন্তু মন চাইলেই কি আর সবকিছু হয়? যাই হোক, সেই ভিডিওতে কথা বলা মানুষটি আর কেউ নয়, তিনি ছিলেন সব শিক্ষার্থীর প্রিয় শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড. রেবেকা সুলতানা ম্যাম।

কিছুদিন পরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা প্রোগ্রামে যায়। যাওয়ার আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম প্রোগ্রাম শেষে ম্যামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করব। কিন্তু না সেদিন সাক্ষাৎ করতে পারিনি। ছিল না কোনো ঠিকানা বা নম্বর। সেদিন রুমে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত আমার এক বন্ধুর নিকট থেকে ম্যামের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরটি সংগ্রহ করি। সেদিন রাতেই ম্যামকে মেসেজ করি। স্পষ্ট মনে আছে, মেসেজে লিখেছিলাম, ‘ম্যাম আজ আপনার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম, কিন্তু দেখা করার সৌভাগ্য হয়নি।’ কিছুক্ষণ পর প্রতি-উত্তরে ম্যাম লিখেছিলেন, ‘আগামীকাল ৯টায় আমার অফিসে আসো।’

সত্যি এটি আমার কাছে স্বপ্নের মতো এবং আনন্দের ছিল। এত সহজেই যে ম্যামের সাক্ষাৎ পাব কখনো ভাবিনি। পরের দিন সকালে আমি এবং আমার বন্ধু মনিরুল ইসলাম সকাল ৯টার আগেই ম্যামের অফিসে গিয়ে পৌঁছায়। আমরা ম্যামের অফিসের দরজায় কড়া নাড়লে ম্যাম বললেন, ‘ভেতরে আসো, আমি তোমাদের জন্যই অপেক্ষা করছি।’ ভেতরে গিয়ে বসি, ম্যাম আমাদের সঙ্গে কথা শুরু করতে না করতেই নানা বাহারি খাবারের আয়োজন করেছিলেন। খাবার খেতে খেতে আমাদের সেদিন প্রায় ৩ ঘণ্টার মতো কথা হয়। কথায় উঠে আসে জীবনের বিভিন্ন দিক। ম্যাম মনোযোগ দিয়ে আমাদের কথাগুলো শুনলেন এবং বললেন তার শিক্ষাজীবনের কথাও। আমার কথা শেষে সেদিন ম্যাম আমায় একটি কথা বলেছিলেন, ‘তুমি মনে করবে, আমিও পারব।’

তার এই কথা আমায় আজও উৎসাহ জোগায়। এরপর থেকে প্রায়ই সপ্তাহ ম্যামের সঙ্গে দেখা করতাম। ম্যাম সব সময় আমাদের বাবা বলে সম্বোধন করতেন এবং কখনো তিনি আমাদের খালি মুখে ফিরে আসতে দিতেন না। ম্যাম সর্বদা আমায় সাহস জোগাতেন এবং যেকোনো ভালো কাজে উৎসাহ দিতেন। ম্যামের উৎসাহ আমায় সৃজনশীল কাজে উদ্বুদ্ধ করে।

প্রিয় ম্যামের একক দুটি বইও প্রকাশ পেয়েছে। বই দুটি হচ্ছে- ‘জীবনের ধারাপাত’ ও ‘সাফল্যের সিঁড়ি ১’। তিনি ভালোবেসে বই দইটি উপহারও দিয়েছেন আমাদের। ম্যামের বই থেকে যেমন আমরা ভালো কিছু শিখতে পারি, তেমনি মেনটর হিসেবেও ম্যাম আমাদের জীবনের পথ চলাই গাইডলাইন দিয়ে যাচ্ছেন।

আমার শৈশব-কৈশোরের পুরো সময়টা কেটেছে গ্রামেই। উচ্চশিক্ষার জন্য মায়ের ভালোবাসা ছেড়ে আসতে হয়েছে শহরে। মাকে খুব মিস করি। শহরে মায়ের ভালোবাসা না পেলেও মাতৃতুল্য প্রিয় ম্যামের ভালোবাসা আমায় মুগ্ধ করেছে।

প্রিয় ড. রেবেকা সুলতানা ম্যাম! কয়েক মাস যাবৎ নানা ব্যস্ততায় আপনার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়নি। শুনেছি আপনি অল্প কিছুদিনের মধ্যেই হজের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন। আপনার পবিত্র যাত্রা শুভ হোক। মহান আল্লাহ আপনার মহৎ কাজগুলো কবুল করুন। আপনি যেখানেই থাকেন, ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। সর্বোপরি আপনার জন্য অবিরাম ভালোবাসা, দোয়া এবং দীর্ঘায়ু কামনা করছি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close