মো রিয়াজ হোসাইন, বাকৃবি

  ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

নীরবতার মধ্যেই বাকৃবির অপরূপ প্রকৃতি

ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ রেললাইনের পাশে অবস্থিত দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম কৃষি গবেষণা এবং উৎকর্ষের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)। প্রকৃতির অপার সম্ভাবনা নিয়ে গঠিত সাড়ে ১২০০ একরের বাকৃবি সবুজ ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাসের আনাচে-কানাচে সুবিশাল সেগুন, মেহগনি, বট, কড়ই, সিরিজ, ইউক্যালিপটাস ইত্যাদি বৃক্ষ। বৃক্ষের কোটরে পাখির বাসা। বাসায় ডিম থেকে ফোটা সদ্য ফুটফুটে ছানা।

বৃক্ষের শাখায় লাল, সাদা, বাহারি রঙের ফুল। কোনো শাখার ফুল ঝড়ে সৃষ্টি হয়েছে কুড়ি। বাকৃবির গাঢ় সবুজের ক্যাম্পাসে বছরের সমস্ত দিন জুড়ে থাকে শিক্ষার্থীদের কলরব। বছর জুড়ে থাকে নানা উৎসব। কখনোবা পিঠা উৎসব, কখনোবা ফল উৎসব, কখনোবা থাকে চা উৎসব। বঙ্গবন্ধু চত্বর, মরণ সাগরের মাঠ, বৈশাখী চত্বরে থাকে বহিরাগতের ঢল। কারো শাড়ির রং লাল, কারোবা নীল, কারোবা কালো, মাথায় গোঁজা ফুল যুগলসঙ্গী প্রেমিকের শরীরে হরেক রঙের পাঞ্জাবি। ক্ষণিকের জন্য হলেও মনে হতে পারে এ যেন কোনো এক রঙের উৎসব। কিন্তু ঈদের দুই সপ্তাহের ছুটিতে ক্যাম্পাসে নেমে এসেছে নীরবতা। কোথাও নেই জনমানবের চিহ্ন।

রাস্তার দুই ধারে সারি সারি ফোসকার দোকান, আইসক্রিম চত্বর, আব্দুল জব্বারের মোড়, কেআর মার্কেট ফাঁকা। চারদিকে সুনসান নীরবতা, কোথাও নেই যান্ত্রিকতা। সন্ধ্যা হলেই এই ক্যাম্পাসে নেমে আসে অন্ধকার, রাতের জোছনা চলে চলে যায় মেঘের আড়ালে। অন্ধকার হলেই অ্যাগ্রিকালচার করিডর থেকে ভেসে আসে নিশির ডাক। রাতের গভীরতা বাড়লেই করিডরের প্রান্তরে উদ্যম নৃত্য মেতে উঠে প্রেতাত্মার দল। মনে হতে পারে এ যেন কোনো এক রূপকথার ভূতের নগরী। যে নগরীতে কোনো এক তেজি রাজা ছিল, ছিল তার রাজ্য, সুন্দরী রাজকুমারী। কোনো এক দুর্যোগে তা এখন পরিত্যক্ত। কিন্তু ক্যাম্পাসের নীরবতার মধ্যেই প্রকৃতিকন্যা সেজেছে অপরূপ সাজে। এক দিনের বৃষ্টিতে পত্রের ওপর জমা ধুলোর আস্তরন ধুয়ে-মুছে বুড়িগঙ্গার জলে। বৃক্ষের নতুন পল্লবে গাঢ় সবুজ রঙে সেজেছে প্রকৃতিকন্যা। তার পায়ে পলাশ রঙের আলতা, চুলের ভাঁজে কৃষ্ণচূড়া রঙের সিঁদুর, ঘন কালো চুলের বেণিতে গোঁজা থোকা থোকা কদম ফুল।

প্রকৃতিকন্যার অপরূপ সাজে লালচে রঙের সেগুন পাতার আড়াল থেকে ভেসে আসছে মহমিত কণ্ঠের পাখির ডাক। সে যেন বলছে তার সঙ্গে একাকার হতে সবুজের আড়ালে।

ক্যাম্পাসের রাস্তার দুই ধারে দেবদারু বৃক্ষ সেজেছে নতুন পল্লবে। তার চূড়ায় লালচে সবুজ রঙের কচিপাতা। বাকৃবির নীলের প্রতীক বাসস্ট্যান্ডে বাসগুলো গম্ভির, গায়ে জমেছে মোটা ধুলোর আস্তরন। তার শরীর বেয়ে উঠেছে তরতজা কচিলতা। লতার কান্ডে ফুটেছে সাদা রঙের ফুল। বাসের অন্দর মহলে একদম পেছনে সংসার বেঁধেছে দুটো চড়ুই। চড়ুই দম্পতির বাসায় দুটো ছানা। ছানার রং ধুসর, তার ঠোটের রং হলুদ, পাশেই মমতাময়ী মায়ের জড়ানো ডানা। বাকৃবির চিরচেনা প্রাণচঞ্চল কলরব মুখর ব্রক্ষপুত্রের কুল ফাঁকা, লাল, নীল, আকাশি রঙের পাল উড়ছে নৌকা ওপরে। কুলের দুই ধার গাঢ় সবুজ। ছোট ছোট শনে ফোটেছে সাদা ফুল, কলমীর ডালে নীলাভ রঙের ফুলে ছেয়ে গেছে দুই কুল, একটু পরপর গাঢ় শনের ঝোপ। এই যেন এক অচেনা ব্রহ্মপুত্রের কূল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close