ইদুল হাসান, ইবি

  ১৭ এপ্রিল, ২০২৪

আমাদের বন্ধুত্বের ষষ্ঠ বছর

সুখ-দুঃখ আর হতাশা-ক্ষোভ, চাওয়া-পাওয়ার সব হিসাব যাকে মন খুলে বলা যায় সেই বন্ধু। বন্ধু মানে নিছক আড্ডার সঙ্গী নয়, বরং বন্ধু মানে দুঃখের সঙ্গী। একে অপরের পথচলার চালিকা শক্তি। যা জীবনে বয়ে আনে বৈচিত্র্য আর সফলতার পথে এগিয়ে দেয় কয়েক ধাপ। বলা হয়ে থাকে, যদি বন্ধু হও হাতটা বাড়াও। সেই হৃদয়ের আহ্বানে মিলেছে সব বন্ধুর হাত। সত্যিকারার্থেই বন্ধুত্ব এক অদ্ভুত সম্পর্কের নাম।

এমনই বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ষষ্ঠ বছরে পদার্পণ করলাম আমরা তিনবন্ধু আশিক, অনিক ও আমি ইদুল। পরিচয়টা আমাদের অতি সাদামাটা। স্কুল জীবনে শেষ করে ভিন্ন তিন গ্রাম থেকে এক কলেজে ভর্তি হলাম তিন জন। কেউ কাউকে চিনি না বড়ই অচেনা। অন্য ক্লাসমেটদের মতোই স্বাভাবিক ভাবেই একে অপরের সাথে সাক্ষাৎ হলো আমাদের। কেন জানি অন্যদের চেয়ে একে অপরের পছন্দ অপছন্দ একই হতে শুরু করল। ক্লাসের ফাঁকে অচেনা মানুষগুলোর সাথে গল্প-আড্ডায় মেতে ঊঠা। কলেজ ফাঁকে পাশের বাজারে মাঝে মাঝে ঘুরতে যাওয়া। তখনও আমরা বন্ধুত্বের মায়ায় আবদ্ধ হয়নি, বন্ধত্ব শব্দটা যে বিশাল। কেবল একে অপরকে জানার শুরু।

এভাবেই কেটে গেল আমাদের কলেজ জীবনের প্রথম কয়েক মাস। খুব অল্প সময়েই একে অপরের ভালোলাগায় পরিণত হলাম। অন্য ক্লাসমেটরা একজনকে কটুকথা বললে এক যোগে প্রতিবাদ করা। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গল্পে মগ্ন থাকা। এরই মাঝে কখন যে নিজেদের বন্ধুত্বের মায়ায় বেঁধে ফেলেছি বুঝতেই পারিনি। আমরা হয়ে উঠেছি একে অপরের আপন। অবসরে এক সাথে আড্ডা আর হাসি ঠাট্টা। একে অপরের সাথে যোগাযোগ করে কলেজে আসা। ‘তুই আসলে আমি আসব না আসলে যাব না’। ক্লাস বিরতির সময়গুলো পার্শ্ববর্তী স্টেশনে বসে চা আড্ডায় কাটানো। খুব অল্প সময়েই তিন অচেনা মানুষ হয়ে গেল চিরচেনা। ক্লাস-পরিক্ষা বাদেও বিকালে তিন গ্রামের কেন্দ্রবিন্দু নন্দনগাছী বাজার এবং নন্দনগাছী রেলস্টেশন হয়ে উঠল আমাদের আড্ডার নিয়মিত স্থান। কলেজ ছুটি থাকলে সেই দিনগুলো আমরা এভাবে দেখা করতাম।

দেখতে দেখতেই কেটে গেল আমাদের উচ্চ মাধ্যমিক অর্থাৎ কলেজ জীবন। এরপরক্ষণেই শুরু হল সেই মহামারি করোনা ভাইরাস। হঠাৎই বাইরের পরিবেশটা হয়ে গেল স্তব্ধ। করোনা মহামারির ভয়ংকর রূপ যেন সবার জীবনে দুঃস্বপ্নের মতো ছেয়ে গেল। করোনা ভাইরাসের প্রকোপ কমাতে দেশে তখন কড়া লক ডাউন। এর মধ্যে জমে উঠল আমাদের অনলাইন আড্ডা। মনের সব অব্যক্ত কথা আমরা মুঠোফোনেই আদান-প্রদান করতাম।

সময়টা যেন খুব দ্রুত চলে গেল তবে এর ছাপ আজও আমাদের মধ্যে রয়ে যায়। করোনা মহামারি শেষ হতে না হতেও আমাদের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরিক্ষা শুরু। ভাগ্যের কবলে ভাগ হয়ে গেলাম আমরা। স্নাতকে একেক শহরে একেকজন কে যেতে হল আমাদের। তবে শহরের দুরত্ব বাড়লেও বন্ধত্বের দুরত্ব বাড়েনি এতটুকুও। বন্ধু আমরা বন্ধুই থেকে গেলাম একে অপরের আস্থাভাজন হিসেবে।

বছরের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ছুটিতে এখনো একত্রিত হয় আমরা তিনবন্ধু। এক সাথে ঘুরাঘুরি, খাওয়া দাওয়া সব কিছুই অব্যাহত। ঈদের ছুটি পুরোটা জুড়ে আমরা সেই আগের মতোই আড্ডা দি, গল্প করি, হাসি ঠাট্টায় মেতে উঠি। বয়স বাড়লেও বন্ধত্ব আমাদের শিশু মন এখনো জাগ্রত রেখেছে। এভাবেই সুখ-দুঃখ, হতাশা-ক্ষোভ, চাওয়া-পাওয়ার মধ্য দিয়েই কেটে গেল আমাদের বন্ধত্বের ছয়টি বছর। হাজার বছর পেরিয়ে গেলেও আমাদের বন্ধুত্ব থাকবে অটুট। ভালো থাকুক সবাই, অটুট থাকুক আমাদের বন্ধুত্ব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close