আবির হোসেন, ইবি
ক্যাম্পাসে ইফতার : সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির মেলবন্ধন
![](/assets/news_photos/2024/03/31/image-449678.jpg)
সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে, হয়েছে দুপুর গড়িয়ে বিকেল। সবুজ ঘাসের ফাঁকা মাঠে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পদচারণা বাড়ছে শিক্ষার্থীদের। অল্প সময়ের ব্যবধানে রংবেরঙের পোশাক পরে সবুজ মাঠের বুকে জড়ো হয়েছে সবাই। সারা দিন রোজা রাখার পর প্রিয় মানুষদের সঙ্গে বসে ইফতার করার আনন্দকে ভাগাভাগি করতে তাদের এ আয়োজন। সেখানে সিনিয়র-জুনিয়র, হিন্দু-মুসলিম ছাড়াও অন্য ধর্মাবলম্বীর শিক্ষার্থীদেরও দেখা মেলে। তাদের মধ্যে নেই কোনো ভেদাভেদ। দিনের শেষে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির মেলবন্ধনের এ মুহূর্তের ছবিটি হৃদয় ছুঁয়ে যায় সবার।
বছর ঘুরে আবারও আমাদের মাঝে এসেছে পবিত্র মাহে রমজান। রমজানকে ঘিরে অন্যরকম চাঞ্চল্য বিরাজ করছে মুসলিম সম্প্রদায়ের মাঝে। এরই ছোঁয়া লেগেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ক্যাম্পাসেও। ইফতারকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাস জুড়ে চলছে উৎসবের আমেজ। রোজায় ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি তুলনামূলক কম। তবে যারা পরীক্ষা কিংবা টিউশনির কারণে বাড়ি যেতে পারেননি, তারা এই ক্যাম্পাসকে এখনো প্রাণোচ্ছল করে রেখেছেন।
পরিবারের সঙ্গে ইফতার না করতে পারার আক্ষেপ ঘোচাতে ইফতারকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্রিকেট মাঠে উৎসবে মাতেন শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসের টিএসসিসি, ডায়ানা চত্বর, ঝাল চত্বর, আম বাগান ও বিভিন্ন আবাসিক হলের ছাদে ইফতারির বাহারি আয়োজনে মাতেন ইবিয়ানরা। বিভিন্ন অনুষদ, বিভাগ, জেলা সমিতি, বিভিন্ন সংগঠন ও বন্ধু-বান্ধবরা মিলে এ আয়োজন করে। বিকেল হলেই মাঠের মধ্যে গোল হয়ে বসে শিক্ষার্থীরা ইফতার তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করে। কেউ ছুটছে জিয়া মোড় থেকে বিভিন্ন প্রকার ভাজা আনতে, আবার কেউ ব্যস্ত লেবু-পানির মিশ্রণে শরবত তৈরিতে। ইফতারসামগ্রী প্রস্তুত হতে হতেই আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, রবের খুশিতে সবাই একযোগে ইফতার শুরু করে। এক ঝলক ঠান্ডা বাতাস এসে শীতল পরশ বুলিয়ে দেয় শুকনো মুখগুলোতে। ক্ষীয়মান প্রাণগুলোতে নবপ্রাণের সঞ্চার হয়। ইফতার শেষে মাঠের মধ্যেই শিক্ষার্থীদের জামায়াতে নামাজ আদায়ের দৃশ্য মনে প্রশান্তি জাগায়। আল-ফিকহ্ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী রনি ইসলাম বলেন, পরিবার থেকে দূরে থাকায় একাকী ইফতার করতে যখন বিষণ্ণ লাগে তখন বন্ধুদের সঙ্গে ইফতারে মিলিত হলে মনটা ভালো হয়ে যায়। শুধু মুসলিমরাই নন, আমাদের সঙ্গে অনেক অন্য ধর্মের বন্ধুরাও ইফতারে অংশগ্রহণ করে। সবাই একসঙ্গে ইফতার করায় সবার মাঝে সম্প্রীতির বন্ধন আরো বেশি দৃঢ় হয়। অন্য শিক্ষার্থী সিহাব হোসেন বলেন, সিনিয়র-জুনিয়র, বন্ধু ও বান্ধবীদের সঙ্গে একসঙ্গে ইফতারি করায় এক অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিকেট মাঠে ইফতারের এমন দৃশ্য দেখলে মনটা জুড়িয়ে যায়। সেই সঙ্গে আমাদের উচ্ছিষ্টে যাতে মাঠের পরিবেশ নষ্ট না হয়, সেদিকেও আমাদের খেয়াল রাখা উচিত।
"