reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে গ্রন্থাগারের ভূমিকা

পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ। মানুষের এই শ্রেষ্ঠতার কারণ তার দৈনিক গড়ন, শক্তি কিংবা বয়সের নয় তার শ্রেষ্ঠতার অন্যতম বাহক তার চিন্তা- চেতনা ও বুদ্ধিমত্তা। চিন্তাপ্রবল মানুষ আজ সভ্যতার শিখরে আহরণ করেছে এবং ক্রমে মজবুত করে চলেছে তাদের বুদ্ধিমত্তাকে, সহজ থেকে সহজতর করেছে তাদের জীবন প্রণালীকে। তার পেছনের কারণ যদি একটি হয় সম্পদ অন্যটি হবে জ্ঞান। পৃথিবীর সৃষ্টিলগ্ন থেকে সম্পদের কমা-বাড়া না থাকলেও জ্ঞানের বিকাশে সম্পদ মানুষের চাহিদা মিটিয়ে আসছে। আর অফুরন্ত এই জ্ঞানভাণ্ডারের অভিভাবক হিসাবে গ্রন্থাগারের জন্ম। অতীতের পূর্বপুরুষের লব্ধ জ্ঞান, বর্তমানের চর্চা এবং ভবিষ্যতের আলোর দিশারি তাই তো গ্রন্থাগার। সহজ কথায়, সভ্যতার স্বচ্ছ মাধ্যম গ্রন্থাগার যা মানুষ ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিকাশে সুক্ষ্ম যোগসূত্র স্থাপন করে।

স্মার্ট বাংলাদেশের চারটি স্তম্ভ ঠিক করা হয়েছে। যার একটি হচ্ছে স্মার্ট সিটিজেন। এই অত্যাধুনিকতার যুগে স্মার্ট শব্দটা বারবার ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। আমরা স্মার্টনেস বলতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কপটতা ও চাঞ্চল্যতাকে বুঝাচ্ছি। আসলে স্মার্টনেস হচ্ছে সেই বিশেষ গুণ যা মানুষকে ভ্রাতৃত্ব, বন্ধুত্ব, নিয়মানুবর্তিতা, সময়ানুবর্তিতা, ধৈর্য্যশীলতা, শৃঙ্খলিত, সহনশীলতা ও সর্বোপরি ভালোবাসার শিক্ষা দেয়। আর এসবের আতুরনিবাস হচ্ছে গ্রন্থাগার বা লাইব্রেরি। এ সম্পর্কে রুডোলফো আনায়া বলেছেন, ‘লাইব্রেরি এমন একটি জায়গা যেখানে ভালোবাসার মানে এবং ভালোবাসা দুটোই খুঁজে পাওয়া যায়।’ নিষ্ঠুরতার মর্মর এই পৃথিবীতে চারদিকে স্বার্থকতার ও আধিপত্যের ঝাঁঝালো গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। ক্ষণে মানুষ হয়ে উঠেছে রক্ত-পিপাসু। কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছে না। সেখানে বিজ্ঞরা বলে, যখন মনে চিন্তা আর সন্দেহ ছাড়া আর কিছুই খুঁজে পাচ্ছো না তখন লাইব্রেরিতে যাও। এজন্য আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে সুনাগরিক বা স্মার্ট সিটিজেনের গুরুত্ব অপরিসীম। আর এক্ষেত্রে যখন স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট ইকোনমি ও স্মার্ট গভর্নমেন্ট এগুলো একটি অপরটি পরিপূরক সেক্ষেত্রে লাইব্রেরির চর্চা সর্বোত্তম সমাধান। অতএব পরিশেষে বলা যায়, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে গ্রন্থাগারের ভূমিকা সবার উপরে। এ বিষয়ে দুই শিক্ষার্থীর মতামত তুলে ধরেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরমেশন সাইন্স এন্ড লাইব্রেরী ম্যানেজমেন্টের শিক্ষার্থী বসুদেব রায়

আজ স্মার্ট গ্রন্থাগারিকের প্রয়োজন!

আমাদের দেশের লাইব্রেরি খাতের ব্যবহার দিন দিন কমে যাওয়ার পেছনে বড় কারণ কর্মচারীদের অপেশাদারিত্ব। বাংলাদেশে তিনটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রন্থাগার বিজ্ঞান বিষয়ের উপর চার বছরের ব্যাচেলর প্রোগ্রাম চালু আছে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে। প্রতি বছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী গ্রন্থাগার বিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করছে কিন্তু আফসোসের বিষয়, লাইব্রেরি বিষয়ক তাদের অর্জিত জ্ঞান বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোনো কাজে লাগছে না। লাইব্রেরিগুলোয় পুরোনো অ-পেশাদার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রভাব দিন দিন লাইব্রেরির কর্মক্ষমতা হ্রাস করছে। ব্যবহারকারীদের প্রয়োজনীয় সেবা তারা দিতে পারছে না। চার বছর এই সেক্টরে পড়া শিক্ষার্থীরা অন্য পেশা বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছে। ফলাফল লাইব্রেরিগুলোর প্রতি পাঠকের অনিহা দিনকে দিন বাড়ছে। লাইব্রেরিতে রয়েছে স্ব-শিক্ষিত হয়ে বেড়ে ওঠার অফুরন্ত সুযোগ। কিন্তু আমাদের এমন একটি প্রজন্ম বেড়ে উঠছে যারা এই সুযোগ নিতে মোটেও আগ্রহী নয়। যা বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য ভয়াবহ। এর পরিত্রাণের জন্য চাই স্মার্ট বাংলাদেশে, স্মার্ট গ্রন্থাগারিকের নিয়োগ।

মাহমুদুল হাসান শোভন

শিক্ষার্থী, ইনফরমেশন সাইন্স ও লাইব্রেরী ম্যানেজমেন্ট, রাবি।

স্মার্ট জাতি বিনির্মাণে গ্রন্থাগার

বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির এই বিশ্বে জ্ঞানের প্রাচুর্যতা অনেক বেশি। সময়ের আবর্তনে তথ্য হয়ে উঠেছে বহুল গুরুত্বপূর্ণ। জ্ঞানীদের বিভিন্নরকম তথ্য, উপদেশ কিংবা বিভিন্ন নির্দেশনাবলি সোনালি ভবিষ্যৎ হিসেবে লিপিবদ্ধ থাকে একটি বইয়ে। অন্তহীন জ্ঞানের এই উৎস হলো বই। আর এই বই সুরক্ষিত ও সুশৃঙ্খল রাখার অর্থাৎ জ্ঞানের বিচরণ ও আবাস্থল হলো লাইব্রেরি।

লাইব্রেরি হলো অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতে মিলনের জন্য নির্মিত এক সেতু যার ভেতর ভিন্ন ভিন্ন গ্রন্থ নদীর স্রোতের মাধ্যমে প্রবাহিত হয় আর এই স্রোতের ধারায় অমৃত নামক জ্ঞানকুঞ্জ লিপিবদ্ধ থাকে। বিখ্যাত লেখক দেকার্তে বলেছেন, ‘বই পড়া মানে বিগত কয়েক দশকের পন্ডিতদের সাথে কথা বলা’। বর্তমানের এই সৃজনশীলতার বিশ্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জনই যথেষ্ট নয়। জ্ঞানের পরিধি সুদূরপ্রসারী করতে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি আমাদের পাঠ্যবহির্ভূত বই পড়ায় অভ্যস্ত হতে হবে। তাইতো সমাজের অস্তিত্বের প্রসার ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে সহায়ক হিসেবে লাইব্রেরির জুড়ি মেলা ভার। এজন্য বিখ্যাত লেখক প্রমথ চৌধুরী বলেছেন, লাইব্রেরীর গুরুত্ব হাসাপাতালের চেয়েও অনেক বেশি।

লাইব্রেরিতে থাকে জ্ঞান বিজ্ঞানের বিচিত্র গ্রন্থ। এটির মাধ্যমে মানুষ জ্ঞানসমুদ্রে অবগাহন করে জ্ঞানের মনি মুক্তা সংগ্রহের সুবর্ণ সুযোগ পায়। লাইব্রেরি শুধু সমাজ সংস্করণের কাজই করে না বরং তা সমাজের সামগ্রিক বিকাশ ও পরিবর্তনে সহায়তা করে। বুদ্ধি ও মননের অনুশীলনের প্রয়োজনে মানুষ জ্ঞান আহরণ করতে পারে দুটি মাধ্যমে। একটি ভ্রমণ ও অপরটি গ্রন্থপাঠ। তাই এটি জ্ঞান পিপাসুদের তৃৃপ্তিদায়ক অমৃত সরোবর হিসেবে পরিশীলিত। জ্ঞানের প্রায়োগিক বিচার বিবেচনা ও চিন্তা শক্তির উন্মেষ এবং চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটে এখানে। মননশীল ও সৃজনশীল সমাজ গঠনের পাশাপাশি জুতসই মানসিকতা তৈরিতে এটি সিদ্ধহস্ত। তাই একটি জাতির ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতির ধারণ ও বাহন হিসেবে লাইব্রেরির ভূমিকা অপরিসীম।

প্রশান্ত কুমার বর্মন

শিক্ষার্থী, ইনফরমেশন সাইন্স এন্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close