মো. খালেদ সাইফুল্লাহ, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

  ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

২৯ বছরে আইআইইউসি ভাবনা ও প্রত্যাশা

দেশের প্রথম সারির ও প্রতিষ্ঠার দিক থেকে প্রথম দিকের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম, সংক্ষেপে আইআইইউসি। মুসলিম বিশ্বের দেশী বিদেশি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সহযোগিতা এবং অর্থায়নে পরিচালিত হওয়া আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় প্রথম সারিতে রয়েছে আইআইইউসি’র নাম। ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ সরকারের করা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ১৯৯৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করা বিশ্ববিদ্যালয়ের আজ ২৯ বছর বয়স।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সর্ববৃহৎ ও নান্দনিক নিজস্ব ক্যাম্পাসের কারণে আইআইইউসি দেশে ও বিদেশে সুনাম কুড়িয়েছে। দেশের প্রথম কোনো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আইআইইউসি দেশি-বিদেশি সংস্থার সঙ্গে যুগপৎ ভাবে শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। ধর্মীয় মূল্যবোধকে প্রাধান্য দিয়ে বৃহৎ পরিসরে আধুনিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার দেশে অনন্য নজির স্থাপন করেছে আইআইইউসি। ‘কম্বাইন কোয়ালিটি উইথ মোরালিটি’ স্লোগানে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও মানবিক ভাবাপন্ন, দক্ষ ও যোগ্য জনশক্তি তৈরিতে আইআইইউসি বাংলাদেশে অগ্রগামী বিশ্ববিদ্যালয়।

সারা বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়ে জরিপ করে এমন একটি গবেষণা সংস্থা ‘ওয়েবম্যাট্রিক্সর?্যাংকিং অব ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটিজ’ এর জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে আইআইইউসির অবস্থান ২৫তম। এছাড়া শিক্ষার্থী সংখ্যায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাটাগরিতে আইআইইউসির অবস্থান ৫ম। ২০০৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) পরিচালিত একটি জরিপে দেশের শীর্ষ ৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় অন্যতম ছিল আইআইইউসি। আইআইইউসি শিক্ষার্থীরা দেশের বিভিন্ন পর্যায়ে ও নাসা-গুগলসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার কুমিরায় পাহাড়ের পাদদেশে ৬০ একরের আইআইইউসিতে বর্তমানে ছয়টি ফ্যাকাল্টির অধীনে ১৪টি ডিপার্টমেন্টে শিক্ষাদানে চার শতাধিক শিক্ষক রয়েছেন। নিয়োজিত শিক্ষকদের শতাধিক পিএইচডি ধারী। আইআইইউসির ক্যাম্পাস মেল ও ফিমেল এই দুই একাডেমিক জোনে বিভক্ত। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে পৃথক একাডেমিক ভবনে পুরুষ ও নারী শিক্ষার্থীদের আলাদাভাবে পাঠদান করা হয় যা বাংলাদেশে অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত আইআইইউসির সর্বশেষ পঞ্চম সমাবর্তনে মোট ১৫ হাজার ৩৬১ জনকে সনদ বিতরণ করা হয়েছে যা দেশের যেকোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অনন্য কীর্তি।

দীর্ঘ ২৯ বছরের পথচলায় অর্জন নেহাতই কম নয়, এই দীর্ঘ সময়ে আইআইইউসি সমৃদ্ধ সাফল্য মণ্ডিত হয়েছে। তবে এখনো আমাদের কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, রয়েছে অনেক প্রত্যাশা।

* ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও ঢাকা-চট্টগ্রাম প্রধান রেলপথের সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত এ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি বিশেষায়িত রেলওয়ে স্টেশন স্থাপনের কাজ উদ্বোধন হয়েছিল। এটি চালু হলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পর দেশে দ্বিতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিশেষায়িত ‘শাটল ট্রেন’ সুবিধা উপভোগ করতো আইআইইউসিয়ানরা। যার অতিদ্রুত বাস্তবায়ন চাই।

* বিশ্ববিদ্যালয় শহর থেকে বিশ কিলোমিটার দূরে। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সেবার জন্য লাল ও সবুজ শতাধিক বাস রয়েছে কিন্তু শিক্ষার্থী অনুপাতে তা পর্যাপ্ত না হওয়ায় ভোগান্তি পোহাতে হয় এখনো। ফিটনেসবিহীন ভাড়া করা লক্কড়-ঝক্কড় বাস নয় বরং নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাস চাই।

* নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর খাবার শিক্ষক শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিক। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাফেটেরিয়া থাকলেও শিক্ষার্থী অনুপাতে সেখানে বসার পর্যাপ্ত জায়গা নেই। সেখানে শুধু মাত্র দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা হওয়ায় সকালের খাবারের জন্য ভোগান্তি পোহাতে হয়। ক্যাফেটরিয়া ভবন বহুতল করে সেখানে ভর্তুকি দিয়ে মান সম্পন্ন সকালের নাশতা, দুপুরের খাবার ও বিকালের স্ন্যাক্স চাই। ফিমেল শিক্ষার্থীদের জন্য ফিমেল একাডেমিক এরিয়ায় স্বতন্ত্র ক্যাফেটরিয়া চাই।

* যুগের সাথে তাল মিলিয়ে একাডেমিক ভবনগুলো আধুনিক সুযোগ সুবিধায় সমৃদ্ধ হোক। ফিমেল একাডেমিক জোনে নিজস্ব ল্যাব ও লাইব্রেরি চাই। একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একাডেমিক পড়াশোনার জন্য পর্যাপ্ত কম্পিউটার ও ল্যাব সুবিধা বৃদ্ধি করা চাই। বহুতল ভবনে লিফট সুবিধা চাই।

* শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অতিসত্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেসিয়াম উন্মুক্ত করা হোক। শারীরিক চর্চায় খেলার মাঠ, বাস্কেট গ্রাউন্ড সংস্কার ও নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টি করা হোক। মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে সাইকোলজিস্ট নিয়োগ করা হোক।

আইআইইউসি এক ভালোবাসার নাম। পাহাড় সমুদ্র শহরের সবুজায়নের এই ক্যাম্পাসের মায়া আমাকে মেলে ধরেছে। সৌন্দর্যের পাশাপাশি শিক্ষার আন্তর্জাতিক গুণগত মান বজায় রাখা চাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে আমি প্রত্যাশা রাখছি প্রচলিত ছাত্র রাজনীতি থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত হয়ে, আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা নিশ্চিত হোক। নিরসন হোক আবাসন, শ্রেণিকক্ষ ও যানবাহনের সংকট। সর্বদা শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত হোক, সমৃদ্ধ হোক গবেষণাক্ষেত্র। প্রতিটি ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম পদচারণা করুক অপ্রতিরোধ্য গতিতে। হাজারো স্বপ্নসারথীর সোপান হয়ে এগিয়ে যাক প্রিয় বিদ্যাপীঠ আইআইইউসি। আমি একজন আইআইইউসিয়ান হিসেবে সর্বদা প্রতিষ্ঠানের উত্তরোত্তর সাফল্য ও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করছি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close