নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৯ অক্টোবর, ২০২৪

বাংলাদেশের ৪ কোটির বেশি মানুষ চরম দারিদ্র্যে

বাংলাদেশে ৪ কোটি ১৭ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছেন। তাদের মধ্যে অতি মানবেতর জীবনযাপন করছেন ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। জাতিসংঘের বৈশ্বিক বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক, ২০২৪ এর প্রতিবেদনে ওঠে এসেছে এ তথ্য। সবমিলিয়ে তীব্র দারিদ্র্যে বিশ্বের ১০০ কোটি মানুষ, বেশির ভাগই আফ্রিকা-দক্ষিণ এশিয়ায়।

বহুমাত্রিক দারিদ্র্য পরিস্থিতি বুঝতে জাতিসংঘ বিশ্বের ১১২টি দেশের ৬৩০ কোটি মানুষের ওপর গবেষণা করেছে। তাতে ২০২২-২৩ বছর পর্যন্ত এক দশকের বেশি সময়ের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়। এতে পর্যাপ্ত আবাসন, পয়োনিষ্কাশন, বিদ্যুৎ, ভোজ্যতেল ও পুষ্টির মতো মৌলিক মানবিক সেবাগুলো পাওয়ার ক্ষেত্রে ঘাটতি কেমন, তা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। শিশুদের স্কুলে উপস্থিতির হারও বিবেচনায় এসেছে।

বৈশ্বিক বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক-২০২৪ অনুযায়ী, বাংলাদেশে দারিদ্র্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে মানুষের জীবনযাত্রার মান। এক্ষেত্রে দারিদ্র্য সূচকে দেশটির মান, ৪৫ দশমিক ১ শতাংশ। আর শিক্ষায় ৩৭ দশমিক ৬ শতাংশ ও স্বাস্থ্যে ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ। সবমিলিয়ে দেশের চরম দারিদ্র্যে অতি মানবেতর জীবনযাপন ৪ কোটি ১৭ লাখ মানুষ।

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোয় দারিদ্র্যের স্তর অন্য দেশগুলোর চেয়ে উল্লেখযোগ্য বেশি। এসব দেশে পুষ্টি, বিদ্যুৎ, পানি ও পয়োনিষ্কাশনের ক্ষেত্রে বড় বৈষম্য দেখা গেছে। চরম দারিদ্র্যে বসবাস করা ১১০ কোটির মধ্যে ৪৫ কোটি ৫ লাখ মানুষ সংঘাতের ছায়ায় রয়েছেন। সূচকে, ১৮ বছরের কম বয়সি প্রায় ৫৮ কোটি ৪০ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে রয়েছে।

বিশ্বের চরম দারিদ্র্যে বাস করা প্রায় অর্ধেক মানুষই ভারতে। দেশটির ১৪০ কোটি মানুষের মধ্যে ২৩ কোটি ৪০ লাখই চরম দারিদ্র্যে দিন কাটাচ্ছেন। এর পরে রয়েছে পাকিস্তান, ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া ও ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো। দারিদ্রে দিন কাটানো ১১০ কোটি মানুষের প্রায় অর্ধেক এই পাঁচ দেশের।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২২ সালের সর্বশেষ তথ্য মতে, বাংলাদেশের ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছেন। তাদের মধ্যে অতি দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছেন ৫ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ। সর্বশেষ জনশুমারি অনুসারে, দেশে বর্তমানে জনসংখ্যা আছে ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার। সে হিসাবে, দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৩ কোটি ১৭ লাখ ৫৭ হাজার।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক কে এ এস মুর্শিদ বলেন, ইউএনডিপির এই সমীক্ষায় যেভাবে বাংলাদেশের দারিদ্র্য পরিমাপ করা হয়েছে, তার সঙ্গে বাংলাদেশের বিবিএস বা অন্যান্য সংস্থার সমীক্ষার তুলনা করা ঠিক হবে না। এই সমীক্ষার মাধ্যমে বাংলাদেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতি বৈশ্বিক তুলনায় কী অবস্থায় আছে, তার একটি চিত্র পাওয়া গেল। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের ডলার সংকট এবং নানা ধরনের আর্থিক সমস্যার কারণে দারিদ্র্য পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। তা নানা সূচকের মাধ্যমে এই সমীক্ষায় বোঝা গেছে। এখান থেকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি অনুযায়ী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

ইউএনডিপির সূচক অনুযায়ী, চরম দারিদ্র্যের মধ্যে থাকা ৪৫ কোটি ৫০ লাখ মানুষ সংঘাত-সহিংসতার মধ্যে বসবাস করছেন। সংঘাতপূর্ণ দেশগুলোয় শিশুমৃত্যুর হার ৮ শতাংশ। অন্যদিকে শান্তিপূর্ণ দেশগুলোয় এই হার মাত্র ১ দশমিক ১ শতাংশ। যুদ্ধ চলা দেশগুলোর মানুষ পুষ্টি, বিদ্যুৎ, পানি ও পয়োনিষ্কাশন সুবিধা থেকে চরমভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন।

ইউএনডিপি প্রকাশিত সূচকে দেখা গেছে, দারিদ্র্যের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী শিশুরা। চরম দারিদ্র্যে থাকা মানুষের মধ্যে প্রায় ৫৮ কোটি ৪০ লাখের বয়স ১৮ বছরের কম। এই সংখ্যাটা বিশ্বের মোট শিশুর ২৭ দশমিক ৯ শতাংশ। এর তুলনায় চরম দারিদ্র্যে রয়েছে বিশ্বের মোট প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ।

ইউএনডিপির কর্মকর্তা আচিম স্টেইনার বলেন, ‘গত কয়েক বছরে সংঘাত বেড়ে কয়েক গুণ হয়েছে। এতে প্রাণহানি নতুন করে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। সংঘাতের জেরে রেকর্ড পরিমাণ মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন। এতে বড় পরিসরে মানুষের জীবন ও জীবিকা বাধার মুখে পড়ছে।’ এই সংঘাত বন্ধ ছাড়া দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব নয় বলে মনে করেন অক্সফোর্ড পোভার্টি অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভের পরিচালক সাবরিনা আলকায়ার। তিনি বলেন, সংঘাতপূর্ণ দেশগুলোয় দারিদ্র্য বিমোচনের গতি তুলনামূলক কম। তাই বলা যায়, এসব দেশের দরিদ্র মানুষকে দূরে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিনিয়োগ ছাড়া দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব নয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close