ফারুক হোসেন ডন, নাচোল (চাঁপাইনবাবগঞ্জ)

  ২৯ এপ্রিল, ২০২৪

হেঁটেই পার মহানন্দা

এপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলা, ওপারে শিবগঞ্জ উপজেলা। মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে ভারত থেকে আসা মহানন্দা নদী। নদীটির নাচোলের অংশে ফতেহপুর ইউনিয়নের মল্লিকপুরের খেয়াঘাট। সেই ঘাট দিয়ে মহানন্দা নদী পার হলেই শিবগঞ্জ উপজেলার চককীত্তি ইউনিয়নের চকনরেন্দ্র গ্রামের খেয়াঘাট। দুই খেয়াঘাট দিয়ে নৌকায় মহানন্দা নদী পারাপার হতো।

খেয়াঘাটে দেখা যেত প্রাণচাঞ্চল্য। এপার থেকে ওপারে নৌকা দিয়ে পার করতে হতো বিভিন্ন যানবাহন ও জনসাধারণ। কিন্তু এখন সেই ঘাটে কোনো নৌকা নেই। মানুষ হেঁটেই ওপার যাচ্ছে। কারণ নদীতে পানি নেই। এই মহানন্দা ঘিরে জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করত অববাহিকার মানুষ। জেলেরা মাছ ধরে, মাঝিরা নৌকা বেয়ে, চাষিরা জমিতে সেচ দিয়ে ফসল ফলিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। সব বয়সি মানুষের গোসল ও বৌ-ঝিদের বাসন-কোসন ধোয়া-মোছার কাজ চলত মহান্দার পানি দিয়ে। মাঝি তার ভাটিয়ালি গানে তুলত আশা-নিরাশার সুর। কিন্তু মহানন্দা শুকিয়ে যাওয়ায় সেই জীবন ও জীবিকা ও নদীকেন্দ্রিক সংস্কৃতি মিলিয়ে গেছে। নদীর দুরবস্থায় পূর্বপুরুষের পেশা পরিবর্তন করে অনেকে ভিন্ন পেশায় ঝুঁকে পড়েছেন। আর একসময়ের খরস্রোতা মহানন্দা এখন ধু-ধু মরুভূমি।

একসময়ের প্রশস্ত নদী দখল হতে হতে এখন সংকীর্ণ খালে পরিণত হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে হাঁটুপানিও থাকে না। এবার দীর্ঘ তাপপ্রবাহে নদীর আক্ষরিক অর্থেই পানি নেই। দীর্ঘ চর পড়েছে। কোথাও কোথাও এক পাশ দিয়ে ১৫ ফুটের সামান্য খালের মতো সৃষ্টি হয়েছে। এই সামান্য হাঁটুপানি নৌকা ছাড়াই পার হওয়া যায়। মানুষ প্রয়োজনীয় কাজের জন্য বিভিন্ন যানবাহন নিয়ে এবং হেঁটেই নদী পার হচ্ছে। নদীর কিছু কিছু জায়গায় পানি থাকলেও নদীতে জেগে উঠেছে বিশাল আকৃতির চর। প্রতি বছর এমন ছোট-বড় চর জেগে ওঠে।

জেলার উত্তর দিক থেকে ভোলাহাট উপজেলার শরীর পেঁচিয়ে গোমাস্তাপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে পূর্বে নাচোল উপজেলা ও পশ্চিমে শিবগঞ্জ উপজেলা হয়ে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার পদ্মা নদীর মোহনায় মিলিত হয়েছে নদী মহানন্দা। চর পড়া অগভীর মহানন্দা বর্ষা মৌসুমে বিশাল জলরাশি ধারণ করতে পারে না। নদীর তীরবর্তী এলাকা বর্ষা মৌসুমে প্লাবিত হয়, কিংবা তীব্র ভাঙনে অনেক পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ে। তখন মহানন্দার করালগ্রাসে বহু পরিবার বসতবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়। নদীপারের মানুষকে চরম ক্ষতির মুখে পড়তে হয় প্রত্যেক বর্ষা মৌসুমে।

নদী শুকিয়ে যাওয়ায় ঘরবাড়ি ভাঙছে না। মহানন্দার বুকে আবাদ হচ্ছে ধান, গম, ভুট্টাসহ নানা ফসল। উপজেলার মল্লিকপুর ও আশপাশের গ্রামগুলোয় গিয়ে দেখা যায়, নদীপারের কৃষকরা ছাগল-গরু নিয়ে এপার থেকে ওপারে যাতায়াত করছেন। বালু ও পলিমাটি জমে ক্রমেই ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদীর তলদেশ।

মহানন্দায় মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতেন জেলে শ্রী জয়কুমার ও শ্রী রতন। তারা এই প্রতিবেদককে বলেন, বর্ষায় মহানন্দা নদী বিশাল আকার ধারণ করে। শুকনো মৌসুমে যা চেনাই যায় না। যেহেতু পানি থাকে না। তাই মাছ ধরা বাদ দিয়ে দিন মজুরি করি। অপেক্ষায় আছি কবে নদীতে পানি আসবে। মাছ ধরব রাত জেগে।

মল্লিকপুর ঘাট ইজারাদার আলহাজ সাইফুদ্দিন বলেন, আমার বাড়ি চকনরেন্দ্র গ্রামে, মহানন্দা নদীর এমন দৈন্যদশা কখনো দেখিনি। নদী শুকিয়ে যাওয়ায় এখন অনেকই কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। আমার দাবি, মহানন্দা নদী পুনর্খনন করে তার পূর্ণরূপে ফিরিয়ে আনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানাই।

জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ময়েজ উদ্দিন বলেন, মহানন্দা নদীর নাব্য হারিয়ে ফেলায় এই সময় এলে পানি শুকিয়ে যায়। পক্ষান্তরে বর্ষাকালে নদীভাঙনে অনেক ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়। তবে খননের কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে সারা বছর পানি ধরে রাখার জন্য রাবার ড্যাম স্থাপন করা হবে। আগামী জুনে রাবার ড্যাম উদ্বোধন হবে বলে জানান তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close