reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

বাংলাদেশে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত

প্রতীকী ছবি

দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেই শুরু হয় ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত। সেটাও চলছে ছয় মাসের বেশি সময় ধরে। এর জের পোহাতে হচ্ছে গোটা বিশ্বকেই। সেই ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই নতুন করে ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে ইরান ঘোষণা দিয়ে ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছে। এতে দেশটির বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হলেও তারা ইরানে পাল্টা হামলার হুমকি দিয়েছে। বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর বারণ সত্ত্বেও ইসরায়েল হামলার ছক আঁকছে। ফলে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের নতুন পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে।

এই দুটি দেশের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলার ধারা চলতে থাকলে এর উত্তাপ ছড়িয়ে পড়বে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে। আর এতে আবারও ভুগতে হবে বিশ্ববাসীকে। স্বাভাবিকভাবেই এর ধাক্কা লাগবে বাংলাদেশেও। সম্ভাব্য সেই ধাক্কার কথা ভেবে করে চিন্তার ভাঁজ দেখা দিয়েছে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে। উদ্বিগ্ন দেশের ব্যবসায়ী সমাজও।

বুধবার (১৭ এপ্রিল) মন্ত্রিসভার বৈঠকে সভাপতিত্বকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মধ্যপ্রাচ্যের চলমান উত্তেজনার দিকে নজর রাখতে মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, নিজেও সবসময় নজর রাখছেন। এর জেরে সম্ভাব্য যে সংকটে পড়তে পারে বাংলাদেশ তা থেকে উত্তরণের জন্য প্রস্তুতি নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন সরকারপ্রধান।

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়লে কিংবা সংকট দীর্ঘায়িত হলে বিশ্ববাজারে বাড়বে জ্বালানি তেলের দাম। এতে আমদানি ও রফতানিতে পরিবহন খরচের সঙ্গে দেশেও বাড়বে পণ্যের উৎপাদন খরচ। অর্থনীতিতে যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে সম্ভাবনাময় মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে রফতানিও কমবে।

ছয় মাসের বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনের গাজায় সামরিক অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েল। সেখানে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৪ হাজার মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিশোধ নিতে গত ডিসেম্বরে লোহিত সাগরে জাহাজে হামলা শুরু করে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা। এর জেরে বড় শিপিং লাইনগুলোর বেশির ভাগ জাহাজই এখন আফ্রিকার উত্তমাশা অন্তরীপ ঘুরে সাগর পাড়ি দিচ্ছে। এতে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ইউরোপ ও আমেরিকায় পণ্য পরিবহনে আগের চেয়ে সময় বেশি লাগছে। নতুন করে ইরান-ইসরায়েল সংঘাত সংকটকে আরও ঘনীভূত করবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের বড় বাজার হলেও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশেও রফতানি বাড়ছে। পোশাক রফতানির শীর্ষ ১০ নতুন বাজারের দুটি হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ও সৌদি আরব। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ইউএই ও সৌদি আরবে তৈরি পোশাক রফতানি বেড়েছে যথাক্রমে ৩৭ ও ৪৭ শতাংশ।

এই অবস্থায় মধ্যপ্রাচ্যে নতুন উত্তেজনায় উদ্বেগ দেখা দিয়েছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে। তৈরি পোশাক রফতানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ–এর সহসভাপতি নাসির উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে আমাদের কস্ট কিন্তু বেড়ে যাবে। অনেক দিন ধরে আমরা একটা নতুন বাজার ক্রিয়েট করলাম, সেই বাজারটা কিন্তু আমাদের স্টপ হয়ে যাচ্ছে। মানুষের কেনাবেচার যে জায়গা সেটা কিন্তু স্টপ হয়ে যাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের বাজারটা কিন্তু আমাদের জন্য আশার আলো জাগিয়েছিল।

পোশাক রফতানিকারক একটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার শহীদুল হক মুকুল বলেন, ইইউর দেশগুলোতে পণ্য পৌঁছানোর সময় এবং ব্যয় সাশ্রয়ী রুট হচ্ছে সুয়েজ খাল এবং পানামা খাল ব্যবহার করা। এতে অন্তত ১৫ দিন সময় বেঁচে যায়। মধ্যপ্রাচ্যে চরম অস্থিরতার কারণে সাশ্রয়ী এই রুট ব্যবহার করতে না পারলে আটলান্টিক মহাসাগর ব্যবহার করতে হবে। এতে খরচ বেড়ে যাবে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ এক বছরের বেশি সময় ধরে চললে সংকট আরও বাড়বে। এ অঞ্চলের সৌদি আরব, ইউএই, বাহরাইনের মতো দেশ বাংলাদেশের বড় শ্রমবাজার। দেশগুলো যুদ্ধে না জড়ালেও তাদের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তখন বাংলাদেশ থেকে নতুন শ্রমশক্তি যাওয়া কমে যাবে। তাতে প্রবাসী আয় কমবে। এছাড়া অস্থিরতা দীর্ঘস্থায়ী হলে বিনিয়োগের সম্ভাবনাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

পিডিএস/এমএইউ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মধ্যপ্রাচ্য,ইরাক,ইরান,ইসরায়েল,সংঘাত
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close