নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশে মৃত্যু বেশি হৃদরোগে
দেশে হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগে মৃত্যু বেশি। ২০২২ সালে দেশে মৃত্যুর ১৭.৪৫ শতাংশ ঘটেছে এ রোগে। ২০২১ সালের তুলনায় মৃত্যু সামান্য কমলেও এটিকে দেশে মৃত্যুর প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। হার্ট অ্যাটাকে গ্রামের তুলনায় শহরে বেশি মানুষ মারা যান। শহরে মৃত্যু ২৪.০৯ এবং গ্রামে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু ১৫.০৭ শতাংশ। এক পরিসংখ্যানে এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তামাকের ব্যবহার, ওবিসিটি বেড়ে যাওয়া, ট্রান্সফ্যাট, লবণ বেশি খাওয়া এবং বায়ুদূষণের কারণে দেশে হৃদরোগ বাড়ছে। তারা জানান, আগে বয়স্করা হৃদরোগে আক্রান্ত হলেও এখন তরুণরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। এমনকি শিশুরাও হৃদরোগে মারা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত হার্ট চেকআপ করার ব্যাপারে জোর দিয়েছেন। কারণ হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুঝুঁকি অনেক বেশি। বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস ২০২২ অনুসারে, হার্ট অ্যাটাকের পরই সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যা, ব্রেইন স্ট্রোক, হাঁপানি, অন্যান্য জ্বর, লিভার ক্যানসার, নিউমোনিয়া, হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ব্লাড ক্যানসার, কিডনি রোগ, সড়ক দুর্ঘটনা ও আত্মহত্যায়। আর ২০২১ সালে বাংলাদেশে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর হার ছিল ২২.৬ শতাংশ। মৃত্যুহার কিছুটা কমলেও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা দৈনন্দিন অভ্যাস, খাদ্যাভাস, স্থূলতা, দূষণ, ধূমপান এবং শারীরিক কর্মকাণ্ডের অভাবের কারণে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে করেন।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এপিডেমিওলজি অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, ‘তামাকের ব্যবহার, ওবিসিটি বেড়ে যাওয়া, ট্রান্সফ্যাট, লবণ বেশি খাওয়া এবং বায়ুদূষণের কারণে দেশে হৃদরোগ বাড়ছে, হৃদরোগে মৃত্যু বাড়ছে।’ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজেসের কার্ডিওলজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ডা. অমল কুমার চৌধুরী বলেন, ‘আরো বেশি মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হলেও উন্নত চিকিৎসাসহ কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোয় উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিসের জন্য বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ করা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির কারণে মৃত্যুহার কিছুটা কমেছে।’
হৃদরোগ প্রতিরোধের গুরুত্ব তুলে ধরে ডা. অমল জানান, আগে বয়স্করা হৃদরোগে আক্রান্ত হলেও এখন তরুণরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। এমনকি শিশুরাও হৃদরোগে মারা যাচ্ছে। তিনি নিয়মিত হার্ট চেকআপ করার ব্যাপারে জোর দিয়েছেন। কারণ হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুঝুঁকি অনেক বেশি। কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে মৃত্যুহার অনেক বেশি। ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগী কোনো ধরনের যোগাযোগ করার আগেই মারা যান। ২৫ শতাংশ ক্ষেত্রে তীব্র ব্যথায় দুয়েকটি শব্দ উচ্চরণ করেই মারা যান। আর মাত্র ২৫ শতাংশ ব্যক্তি অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে যাওয়ার সুযোগ পান। ডা. অমল আরো বলেন, কারো যদি বুকে ব্যথা হয় এবং এর জন্য যদি মানসিক চাপ অনুভূত হয় অথবা কাজ করতে গেলে যদি ব্যথা বাড়ে, ঘাম হয়, বমি হয় এবং এর সঙ্গে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়, তাহলে অপেক্ষা না করে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে।
হৃদরোগের ঝুঁকি কীভাবে প্রতিরোধ সম্ভব- এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে কোয়ান্টাম হার্ট ক্লাবের কো-অর্ডিনেটর ডা. মনিরুজ্জামান বলেন, হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে হলে প্রধানত তিন বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। এগুলো হচ্ছে- ধূমপান পরিহার, রাতের ভূরিভোজ কমানো ও প্রচণ্ড মানসিক চাপ সামলানোর সক্ষমতা অর্জন করা। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ সামলাতে মেডিটেশনের বিকল্প নেই। শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। কারণ ওজন নিয়ন্ত্রণে না রাখলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
এদিকে ২০২৩ সালে ‘দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এনসিডিজ : এসডিজি লক্ষ্যের দিকে যাত্রা’ শিরোনামের একটি সমীক্ষায় দেখানো হয়, ২০২১ সালে ডব্লিউএইচও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে সব মৃত্যুর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশর জন্য দায়ী এনসিডি রোগগুলো। এনসিডি রোগের মধ্যে কার্ডিওভাসকুলার রোগে মৃত্যুহার বেশি। তারপর ক্যানসার, দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের রোগ এবং ডায়াবেটিস মৃত্যুর অন্যতম কারণ। ভারতেও গত তিন বছরে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্ভবত কোভিড-১৯ মহামারির দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবের কারণে এমনটি ঘটছে। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর তথ্যানুসারে, ২০২২ সালেই দেশটিতে হার্ট অ্যাটাকের সংখ্যা ১২.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।