মাসুদ আলম

  ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

ভেপিং : নতুন আপদ, নতুন প্যারা!

প্রতীকী ছবি

ধূমপানের এক আধুনিক ভার্সনের নাম ভেপ (Vape), যার সেবন মাধ্যম হলো ইলেক্ট্রনিক সিগারেট বা সংক্ষেপে ই-সিগারেট। আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে যা ইতোমধ্যে পৌঁছে গেছে এদেশের তরুণ-যুবাদের হাতেও। প্রথমদিকে যখন ই-সিগারেট বাজারজাত হয়, তখন বলা হয়েছিলো এটি ধুমপানের কম ক্ষতিকর বিকল্প; কাজেই যারা ধূমপান ছেড়ে দিতে চান তাদের জন্য ই-সিগারেট আদর্শ! চটকদার বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে অনেকেই হাল ফ্যাশন হিসেবে ই-সিগারেটের দিকে ঝুঁকতে থাকে। এতে নিজেদের অজ্ঞাতসারেই তারা হয়ে পড়েন আসক্ত। মানব ইতিহাসের সবচেয়ে মারাত্মক ও প্রাণাঘাতী ভোগ্যপণ্য হলো সিগারেট। যারা নিয়মিত সিগারেট খান তাদের প্রতি দুজনের একজনের মৃত্যুর জন্য দায়ী ধূমপান।

ই-সিগারেট কী

ই-সিগারেট আসলে একটি ডিভাইস যাতে আছে অ্যাটোমাইজার, একটি ব্যাটারি এবং কার্টিজ বা ট্যাংক। কার্টিজে থাকে ই-জুস, যা তামাকজাত নিকোটিনসহ আরো কিছু রাসায়নিক সংমিশ্রনে তৈরি একটি তরল। ব্যাটারি শক্তি উৎপন্ন করে এবং অ্যাটোমাইজার ই-জুসকে পরিণত করে এ্যারোসল বা বাষ্পে। ই-সিগারেট সেবনকারীরা সেই বাষ্প শ্বাসের সাথে গ্রহণ করেন। যে-কারণে এই ধূমপান পদ্ধতিকে বলা হচ্ছে ভেপিং (vaping)।

ই-সিগারেট সেবনের লাভ-ক্ষতি সম্পর্কে শতকরা ৬০ ভাগ সেবনকারী কিছুই জানে না। ইউরোপ আমেরিকার দেশগুলোতে সিগারেটের ওপর নানানরকম বিধি-নিষেধের ফলে সিগারেটের বিক্রি কমে গেছে, যে কারণে তামাক কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জনগোষ্ঠীকে টার্গেট করছে।

ভেপিং ধূমপানও মাদকাসক্তির দিকে ঠেলে দেয়!

বেনিয়ারা খুব কৌশলের সাথে ই-সিগারেট বা ভেপিংয়ের প্রচারণা চালিয়ে আসছে। গত সাত আট বছর ধরে পশ্চিমা গণমাধ্যমে এবং সেটার অনুকরণ করে আমাদের দেশের পত্রপত্রিকায় ছাপা হতে লাগল ধূমপানের আসক্তি কাটাতে বিকল্প হতে পারে ই-সিগারেট। সিগারেটের তুলনায় এটাতে স্বাস্থ্যঝুঁকি ৯৫ শতাংশ কম! এমনকি ‘ভেপিং করলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে’ এমন হাস্যকর প্রতিবেদনও ছাপা হয়েছে। তাও আবার গবেষকদের বরাত দিয়ে। তাদের যুক্তি ছিল, ই-সিগারেটে ক্ষতিকর উপাদান থাকলেও সিগারেটের তুলনায় তার পরিমাণ কম। ভেপিং ধীরে ধীরে ধূমপায়ীর সংখ্যা কমাবে।

কিন্তু খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ভেপিংয়ের প্রকৃত সত্য বেরোতে শুরু করল। আসলে ই-সিগারেট বা ভেপিং ধূমপানও মাদকাসক্তির দিকে ঠেলে দেয়। ভেপিং টিনএজারদের মস্তিষ্কের বিকাশ ব্যাহত করে এবং তরুণ-তরুণীদের প্রজনন স্বাস্থ্যের বিনাশ ঘটায়। ভেপিং যে জনস্বাস্থ্যের জন্যে আরেকটি নতুন ফাঁদ, আরেকটি নতুন আপদ- এটি আস্তে আস্তে বেরোতে লাগল। কিন্তু সর্বনাশ ততদিনে হয়ে গেছে।

প্রতি ৫ জনে একজন মার্কিন শিক্ষার্থী ভেপিংয়ে আসক্ত

সিগারেটের চেয়ে ঝুঁকি কম ও নিকোটিনের গন্ধ থাকে না এই বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এক বছরে স্কুল পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ই-সিগারেট ব্যবহার ৭৮ শতাংশ বেড়ে গেল। প্রতি পাঁচ জনে একজন মার্কিন শিক্ষার্থী এখন ভেপিংয়ে আসক্ত।

গার্ডিয়ান পত্রিকার তথ্য অনুযায়ী ইংল্যান্ডের অনেক স্কুলে ১৩-১৪ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের ৭০ শতাংশ ভেপিং করে। ইংল্যান্ডের এক মা বলছেন, ‘আমার মেয়ের বয়স ১৪। এই বয়সে সে আসলে জানে না সে কী করছে। তারা ভেপিং করছে ২৮টি সিগারেটের সমান মাত্র একদিনে।’

মা বলছেন ‘আমার ছেলের বন্ধু নিয়মিত ভেপিং করত। মাত্র ১৮ বছর বয়সে তার ফুসফুস কলাপস করল। কারণ সে আর নিশ্বাস নিতে পারছে না।’

ই-সিগারেট কিশোরদের তামাকে আসক্ত করছে

শুধু ইউরোপ আমেরিকা নয়, আমাদের দেশের কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ভেপিংয়ের প্রবণতা বাড়ছে। ঢাকাসহ বড় বড় শহরে শুধু কিশোরেরা নয়, কিশোরীরাও মেতে ওঠেছে এই ভেপিংয়ে। চট্টগ্রামের হাটহাজারীর এক স্কুলের প্রধান শিক্ষক উপজেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরাই মূলত ই-সিগারেটের ক্রেতা। এরপর হাটহাজারী পৌরসভার বিভিন্ন দোকানে অভিযান চালানো হয়।

ব্যবসায়ীরা জানায়, মূলত ১৪-১৫ বছরের কিশোরেরাই এই ই-সিগারেটের ক্রেতা। এই কিশোরেরাই আমাদের বলে বেশি দামের ই-সিগারেট আনবেন।

ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে তরুণদের আকৃষ্ট করতে ই-সিগারেট দোকানগুলো বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক গড়ে তোলা হয়েছে।

২০২০ সালে আহসানিয়া মিশন পরিচালিত ঢাকা শহরের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, তারা বেশিরভাগই জানে না ই-সিগারেট স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

ই-সিগারেট থেকে নিগত ধোঁয়ার মাধ্যমে রিং তৈরি করার কৌশল ও তা প্রদর্শন করা পুরুষ উত্তরদাতাদের মধ্যে একটি সাধারণ খেলা হিসেবে গণ্য হয়।

অংশগ্রহণকারীদের ৩৫ শতাংশ বলছেন, ই-সিগারেট তাদের তামাকে আসক্ত করে ফেলেছে। আর ৬০ শতাংশই ই-সিগারেট সেবনের লাভ-ক্ষতি সম্পর্কে কিছুই জানে না। যারা ভেপিং করছে তাদের বড় অংশ যেমন এর সর্বনাশা দিকগুলো জানে না তেমনি অধিকাংশ অভিভাবকও এই ব্যাপারে সচেতন নন। তাই এই আপদ মোকাবেলা করতে হলে আমাদের এই ভেপিং প্রক্রিয়া কী তা জানতে হবে।

ভেপিং প্রক্রিয়া

ই-সিগারেট হচ্ছে একটি ইলেক্ট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম। এটি দেখতে সিগারেটের মতোই ফাইবার বা প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি ব্যাটারিচালিত একটি যন্ত্র। এর মধ্যে একটি চেম্বারে ভরা থাকে বিশেষ ধরনের তরল রসায়ন। যন্ত্রটি গরম হয়ে ঐ তরলের বাষ্পীভবন ঘটায় এবং ব্যবহারকারী সে বাষ্প টেনে নেয় ফুসফুসে, যা মস্তিষ্কে ধূমপানের মতো অনুভূতি সৃষ্টি করে। একেই বলে ভেপিং।

ই-লিকুইড বা ই-জুসের মূল উপাদান কী?

যারা ভেপিং করে তাদের অধিকাংশই জানে না এর মধ্যে কী আছে। এই ই-লিকুইড বা ই-জুসের মধ্যে থাকে প্রোপিলিন গ্লাইসল, গ্লিসারিন, পলিইথিলিন গ্লাইসল এবং নানান ধরনের রাসায়নিক মিশ্রিত সুগন্ধি। এবং তামাকের মূল উপাদান নিকোটিন। এমনকি গাঁজার নির্যাস ও অন্যান্য মাদকও থাকে এর মধ্যে। এটাকে হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্ট সংক্ষেপে এইচটিপি বলা হয়ে থাকে।

আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, ই-সিগারেট কেন বিপজ্জনক? আসলে ই-সিগারেটে ব্যবহৃত গ্লিসারল ও প্রোপাইলিনের বাষ্প বা ধোঁয়া শ্বাসনালীর নিজস্ব সুরক্ষা ব্যবস্থাকে নষ্ট করে দেয়। ফলে বার বার শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ বা ইনফেকশন ঘটে।

হার্ভার্ড হেলথ পাবলিশিংয়ের সিনিয়র এডিটর রবার্ট এইচ শার্লিন বলেন, ই-সিগারেটে একটি রাসায়নিক থাকে ডায়াসিটাইল। এই ডায়াসিটাইল ফুসফুসের ছোট ছোট বায়ুথলিগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, ফলে হাঁপানি ক্রনিক কাশি এবং শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি হয়। ই-সিগারেটে সাধারণ সিগারেটের ধোঁয়ার সমপরিমাণ ফরমালডিহাইড উৎপন্ন হয়। এছাড়া ই-জুসে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের ক্ষুদ্র ভারী ধাতব কণা ও ফরমালডিহাইডের মতো বিষাক্ত রাসায়নিক শরীরে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন জটিল রোগব্যাধি তৈরি করে।

গলা-মুখ জ্বালা, বমি ভাব এবং ক্রনিক কাশি

ই-জুসে যেহেতু স্ট্রবেরি তরমুজ আম এলাচ বাবল গাম ব্লুবেরি মধু ইত্যাদি ফ্লেভার যুক্ত করা হয়, ফলে তা মিষ্টি মিষ্টি সুগন্ধ ছড়ায়। ভেপিংয়ের প্রতি আকর্ষণের এটাও একটি কারণ। তবে এসমস্ত ফ্লেভার- সুগন্ধি এগুলো কৃত্রিম রাসায়নিক দ্বারা তৈরি, ফলে লিভার কিডনির দীর্ঘমেয়াদী রোগ ঘটানো ছাড়াও ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। আসলে যত সুগন্ধিই মেশানো হোক নিকোটিন একটা মাদক ছাড়া আর কিছু নয়।

এক প্যাকেট সিগারেটে নিকোটিনের পরিমাণ ৪৮ মিলিগ্রাম আর ই-সিগারেটের একটি পডে থাকে দুই প্যাকেট সিগারেটের সমান নিকোটিন।

ই-সিগারেটের ক্ষতিকর দিক

ই-সিগারেটের নিকোটিন শিশু ও গর্ভবতী মায়েদের জন্যে ভয়ানক বিপজ্জনক। গভাবস্থায় ভ্রুণের বিকাশকে এটি ক্ষতিগ্রস্ত করে। উচ্চমাত্রার এই নিকোটিন স্নায়ুতন্ত্রের স্টেম সেলকে ধ্বংস করে অকাল বার্ধক্যসহ স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন রোগ ডেকে আনে। সেই সাথে হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়ে অনেক বেশি।

আমেরিকান হার্ট এসোসিয়েশনের গবেষণালব্ধ তথ্যমতে ই-সিগারেট ব্যবহারে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে ৭১ শতাংশ। হার্ট এটাকের ঝুঁকি ৫৯ শতাংশ এবং হৃদরোগের ঝুঁকি ৪০ শতাংশ বাড়ে।

জাপানে এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ই-সিগারেট সাধারণ সিগারেটের চেয়ে ১০ গুণ বেশি ক্ষতিকারক!

টার্গেট আমাদের তরুণ সমাজ

সিগারেট কোম্পানিগুলো এখন বিনিয়োগ করছে ই-সিগারেটে। টার্গেট আমাদের তরুণ সমাজ। গত একদশকে বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলো ই-সিগারেটেও বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছে। তরুণদেরকে প্রলুব্ধ করার জন্যে নানানরকম প্রচারণা তারা চালাচ্ছে।

বিশেষত ওটিটি ফ্লাটফর্মে নাটক সিনেমায় যে হরহামেশা ধূমপান ও ভেপিং করতে দেখা যায়। এটা মোটেও কাকতালীয় নয়, বরং সঙ্ঘবদ্ধ বিজ্ঞাপনী প্রচারণার অংশ। নায়ক-নায়িকা শিল্পী মডেল মিউজিশিয়ানদের প্রকাশ্যে ভেপিং করার জন্য মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার দেয় এই তামাক কোম্পানিগুলো। যা দেখে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে কিশোর তরুণরা। গোপনে ভেপিং মেলা আয়োজনের মাধ্যমেও তরুণদের আকৃষ্ট করার অপচেষ্টা তারা চালাচ্ছে। আসলে এটি তরুণ প্রজন্মকে নেশায় আসক্ত করার সর্বশেষ কৌশল।

নিষিদ্ধ করার এখনই সময়

সর্বশেষ জনশুমারি ও গৃহ গণনার প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ৪৮ শতাংশই তরুণ। যাদের বয়স ২৪ বছর বা তার নিচে।

তামাক কোম্পানিগুলো এই বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠীকে যে-কোনো উপায়ে তামাক পণ্য বা ভেপিংয়ে আসক্ত করে নিজেদের ব্যবসা সম্প্রসারণ ও মুনাফা বৃদ্ধি করতে চায়। এবং এজন্যেই তারা ইলেক্ট্রনিক সিগারেট বা ই-সিগারেট ভেপিং ইত্যাদিকে সিগারেটের নিরাপদ বিকল্প হিসেবে ভোক্তা ও নীতিনির্ধারকদের সামনে উপস্থাপন করে থাকে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) তামাক নিয়ে তাদের প্রতিবেদনে ই-সিগারেটকে সুনিশ্চিতভাবে স্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর পণ্য হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

আমাদের প্রতিবেশী ভারত ইতোমধ্যেই ২০১৯ সালে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এছাড়া শ্রীলঙ্কা থাইল্যান্ড সিঙ্গাপুরসহ পৃথিবীর ৩২টি দেশ এসব পণ্য নিষিদ্ধ করেছে। অস্ট্রেলিয়া ইতিমধ্যেই ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। কারণ দেশটিতে ই-সিগারেট এতটাই সহজলভ্য যে এটাকে মহামারি হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে।

উল্লেখযোগ্য যে ২০১৯ সালে যখন ভারতে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করা হয়, তখন বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের মাধ্যমে ই-সিগারেটকে নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্যোগ নেয়। তবে অজানা কারণে সে উদ্যোগ তখন সফল হয় নি।

আসলে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করার এখনই সময়। যদি আমরা জাতিগতভাবে ভেপিংয়ের সর্বনাশ বুঝতে আরো দেরি করে ফেলি তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও জাতি রুগ্ন হয়ে পড়বে, স্বাস্থ্য তাদের ভঙ্গুর হয়ে যাবে।

সচেতন মানুষ হিসেবে করণীয়

জাতীয় পর্যায়ে যখন নিষিদ্ধ হবে, আমরা সেই সুদিনের অপেক্ষা করব। তার আগে সচেতন মানুষ হিসেবে আপনারও করণীয় আছে।

আপনি যদি ধূমপায়ী হন তবে আজকেই এই আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসুন। আপনি নিজে ধূমপান করবেন আর চাইবেন আপনার সন্তান যেন ধূমপায়ী না হয়- এটা কখনো সম্ভব নয়। কারণ সচেতন বা অবচেতনভাবে সন্তানের রোল মডেল হলো তার মা তার বাবা।

সিগারেট কোম্পানিগুলোর ফন্দি হলো ভেপিং বা ই-সিগারেটের দোকানগুলো তারা রাখে স্কুলের আশেপাশে। যেন শিশু-কিশোরেরা সহজেই এসব কিনতে পারে। তাই লক্ষ্য রাখুন খাতা কলম পেন্সিল স্টেশনারি বা খাবার দোকানের নাম করে সেখানে এই মরণ বিষ বিক্রি হচ্ছে কি না।

আর যারা বিক্রি করছেন তারাও সতর্ক হোন। আপনি হয়তো বলবেন আমি তো মদ খাই না, মদ বিক্রি করে দুধ খাই। আপনি আজ অন্যের সন্তানের মুখে বিষ তুলে দিয়ে নিজের সন্তানকে হয়তো কঠোর নিয়ম-শৃঙ্খলা ও দারুণ প্রাকৃতিক পরিবেশবেষ্টিত বিদেশের কোনো স্কুলে পড়াচ্ছেন আর ভাবছেন সে নিরাপদ আছে।

মনে রাখবেন স্রষ্টা পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব গ্রহণকারী। তিনি সবকিছুই একটা নিয়মের মধ্যে সাজিয়েছেন। আমরা যা করি শেষ পর্যন্ত আমরা তা-ই পাই। ভালো করবেন ভালো পাবেন, মন্দ করবেন মন্দ পাবেন।

কীভাবে বুঝবেন পরিবারের সদস্য ভেপিংয়ে আসক্ত?

কীভাবে বুঝবেন আপনার পরিবারের সদস্য বা আপনজন ভেপিংয়ে আসক্ত কিনা? বোঝার কিছু সহজ উপায় আছে।

ভেপিংয়ে আসক্তদের নতুন কিছু দৈহিক উপসর্গ দেখা যাবে। খুক খুক কাশি হবে। দম নিতে কষ্ট হবে। শ্বাসপ্রশ্বাসে সহজ স্বাভাবিক বিষয়টি থাকবে না।

নেশা বা আসক্তির ক্ষেত্রেও অপরাধ বিজ্ঞানের সূত্রটি প্রযোজ্য। আর তা হলো- আসক্ত ব্যক্তি যত সতর্কই হোক না কেন তার গন্ডির মধ্যে কোথাও না কোথাও সেটার ছাপ সে রাখবেই। ঘরে-বাইরে তার গন্ডির মধ্যে ভেপিংয়ের কার্ট্রিজ ই-সিগারেটের কভার বা এধরনের যে-কোনোকিছুর দেখা মিলবে।

আসক্ত ব্যক্তির উপস্থিতিতে পোশাকে জিনিসপত্রে কোনো ফ্লেভার বা মিষ্টি ঘ্রাণ বেশি মাত্রায় টের পাওয়া যাবে। নিকোটিনে ফলের বা ফুলের ফ্লেভার যোগ করলেও দেখা যায় সচরাচর আসক্ত ব্যক্তি বার বার ফ্লেভার বদলায় না। অর্থাৎ কোনো নির্দিষ্ট ফ্লেভারকেই সে বেছে নেবে।

অতএব কোনো বিশেষ মিষ্টি ঘ্রাণ যদি আপনি পান, তাহলে বুঝবেন সে ভেপিংয়ে আসক্ত।

সবচেয়ে বড় কথা- নেশাখোরের আচরণ কথা ও কার্যকলাপই বলে দেবে যে, সে আর আগের সুস্থ স্বাভাবিক মানুষটি নেই।

আপনজন পরিবারের কাউকে ভেপিংয়ে আসক্ত যদি টের পান সরাসরি তার সাথে কথা বলুন। তাকে ভেপিংয়ের ক্ষতিকর জিনিসগুলো তুলে ধরুন। প্রয়োজনে কাউন্সেলিং করান। আপনার দিক থেকে আন্তরিকভাবে তার জন্য দোয়া করুন এবং সমস্ত তরুণ সমাজের জন্যে দোয়া করুন। তারা যাতে ভেপিংয়ের আপদ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারে।

ধূমপানের বিষয়ে যেভাবে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির প্রয়োজন, একইভাবে ভেপিং নিয়েও সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির প্রয়োজন। অর্থাৎ ভেপিং নিরোধ প্রক্রিয়ার সামাজিকায়ন প্রয়োজন। যত দ্রুত আমরা এই সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারবো, ভেপিংয়ের আপদ/প্যারা থেকে আমরা তত দ্রুত মুক্তি পাব।

তথ্যসূত্র : কোয়ান্টামমেথড ডট ওআরজি ডট বিডি (quantummethod.org.bd)।

পিডিএসও/এমএ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ভেপিং,ভেপ,নতুন আপদ,নতুন প্যারা
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close