reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২২ জানুয়ারি, ২০২৪

বিশ্বে ম্যালেরিয়ার প্রথম গণ টিকাদান শুরু করল ক্যামেরুন

শাবাহিত সংক্রামক ব্যাধি ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে বিশ্বের প্রথম গণ টিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছে মধ্য-আফ্রিকার দেশ ক্যামেরুন। আফ্রিকাজুড়ে হাজার হাজার শিশুর জীবন বাঁচানোর প্রচেষ্টায় দেশটিতে সোমবার এই কর্মসূচি শুরু হয়েছে।

দেশটির রাজধানী ইয়াউন্দের একটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ড্যানিয়েলা নামের এক কন্যা শিশুকে টিকার প্রথম ডোজের মাধ্যমে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, আফ্রিকায় প্রত্যেক বছর প্রায় ৬ লাখ মানুষ মারা যায় ম্যালেরিয়ায়। এই প্রাণহানির অন্তত ৮০ শতাংশই পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, ক্যামেরুন ছয় মাস বয়স পর্যন্ত সকল শিশুকে বিনামূল্যে ম্যালেরিয়ার আরটিএস,এস ভ্যাকসিন দিচ্ছে। একজন রোগীর জন্য মোট চার ডোজ টিকার প্রয়োজন।

মার্কিন গবেষকদের তথ্য অনুযায়ী, ম্যালেরিয়ার এই টিকা অন্তত ৩৬ শতাংশ ক্ষেত্রে কার্যকর। এর অর্থ এই টিকা প্রত্যেক তিনজনের মধ্যে একজনের জীবন বাঁচাতে পারে।

এন্ড ম্যালেরিয়া কাউন্সিল কেনিয়ার কর্মকর্তা উইলিস আখওয়ালে বলেন, এই টিকাদান নিঃসন্দেহে এক ধরনের স্বস্তিদায়ক এবং এটি জীবন রক্ষাকারী। কিন্তু টিকার কার্যকারিতার তুলনামূলক কম হারের কারণে এটি ‘‘সিলভার বুলেট’’ নয়।

ক্যামেরুনে ম্যালেরিয়ার টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধনে সহায়তা করেছেন দেশটির চিতিৎসক শালম এনদৌলা। তিনি বলেন, ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই টিকা চিকিৎসকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং ‘‘অতিরিক্ত হাতিয়ার।’’

বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনা এবং রোগ নির্মূল করার সক্ষমতা আছে।’’

ব্রিটেনের বিখ্যাত ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান জিএসকে প্রায় ৩০ বছর ধরে গবেষণা চালিয়ে আরটিএস,এস ভ্যাকসিন তৈরি করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভ্যাকসিনটির অনুমোদন দিয়ে মশাবাহিত রোগের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক লড়াইয়ে ক্যামেরুনে টিকাদান শুরুর ঘটনাকে ‘‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’’ হিসেবে উল্লেখ করে স্বাগত জানিয়েছে।

কেনিয়া, ঘানা এবং মালাবিতে সফল পরীক্ষা চালানোর পর ক্যামরুনে ম্যালেরিয়ার এই ভ্যাকসিনের প্রয়োগ শুরু হয়েছে। গ্লোবাল ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স গাভির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে বিশ্বের আরও কুড়িটি দেশে ম্যালেরিয়ার টিকার প্রয়োগ শুরুর লক্ষ্য রয়েছে। এসব দেশের মধ্যে বুরকিনা ফাসো, লাইবেরিয়া, নাইজার এবং সিয়েরা লিওন উল্লেখযোগ্য।

ডব্লিউএইচও বলেছে, ক্যামেরুনে প্রতি বছর প্রায় ৬০ লাখ ম্যালেরিয়া রোগীর তথ্য রেকর্ড করা হয়। তাদের মধ্যে চিকিৎসাকেন্দ্রেই মারা যায় অন্তত ৪ হাজার। মৃতদের বেশিরভাগই পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু।

ক্যামেরুনের ৪২টি জেলায় ছয় মাস বয়সী শিশুদের অসুস্থতা এবং মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। এসব জেলার শিশুদের দুই বছর বয়স পর্যন্ত চারটি ডোজ দেওয়া হবে। তবে দেশটির কিছু নাগরিকদের মাঝে টিকাটির সুরক্ষা এবং কার্যকারিতা নিয়ে ভয় এবং দ্বিধা রয়েছে।

দেশটির টিকা কর্মকর্তা ড্যানিয়েল ইকোতো বলেছেন, ভ্যাকসিনটি নিরাপদ, কার্যকর এবং তা বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। তিনি ডোজ দেওয়ার পর কয়েকজন বাচ্চার মাকে টিকাটির কার্যকারিতা ও সুরক্ষা নিয়ে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছেন বলে জানিয়েছেন।

তবে অন্যান্যদের ক্ষেত্রে এই টিকার উপকারিতা সুস্পষ্ট। সোমবার ইয়াউন্দের পার্শ্ববর্তী সোয়া শহরের একটি টিকাদান কেন্দ্রে আরটিএস,এস ভ্যাকসিন কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। এই কেন্দ্রে আসা একজন নারী বিবিসিকে বলেছেন, ‘‘আমি ম্যালেরিয়া এড়াতে আমার সন্তানকে টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ এই রোগটি খারাপ এবং শিশুরা আক্রান্ত হলে সহজেই মারা যেতে পারে।’’

২০২১ সালের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ওই বছর বিশ্বজুড়ে যতসংখ্যক মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন তার ৯৫ শতাংশই আফ্রিকার। শুধু তাই নয়, একই বছরে বিশ্বে ম্যালেরিয়ায় মারা যাওয়া মোট রোগীর প্রায় ৯৬ শতাশংও আফ্রিকার বাসিন্দা।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close