নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আদালত থেকে ছিনতাই

শনাক্ত হয়নি পলাতক জঙ্গিরা, বড় হামলার ‘শঙ্কা’

ফাইল ছবি

ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত এলাকা থেকে ছিনিয়ে নেওয়া মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গির একজনকেও শনাক্ত করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ফলে গ্রেপ্তারও করা যায়নি ঘটনার আড়াই মাসেও। এতে পলাতক দুজনের বড় কোনো হামলার শঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা। গত বছরের ২০ নভেম্বর দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ঢাকার নিম্ন আদালত প্রাঙ্গণ থেকে পুলিশের চোখে স্প্রে মেরে প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সদস্য আবু সিদ্দিক সোহেল ও মইনুল হাসান শামীমকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় রাতে ২০ জঙ্গিকে আসামি করে মামলা করেন পুলিশ পরিদর্শক জুলহাস উদ্দিন আকন্দ।

এদিকে, পলাতক দুই জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করতে না পারলে ওই ঘটনায় জড়িত মেহেদী হাসান অমি ওরফে রাফি (২৪) ও প্রয়াত রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএস ওমর ফারুককে গ্রেপ্তার করে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)।

নিরাপত্তা বিশ্লেষজ্ঞরা মনে করছেন, সামনে জাতীয় নির্বাচন, দুই জঙ্গি পলাতক অবস্থায় দেশে বড় কোনো হামলা চালাতে পারে। দেশে হয়তো তারা আরেকটি হলি আর্টিসানের মতো ঘটনা অথবা আত্মঘাতী কোনো হামলা ঘটানোর পরিকল্পনা করছে। এছাড়া নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র সঙ্গে পলাতক দুই জঙ্গির কোনো চুক্তি হলে সেটিও হবে ভয়াবহ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সাবধানতা ও সতর্কবার্তার মধ্যেই ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাজধানী ঢাকায় হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় ইতিহাসের জঘন্যতম জঙ্গি হামলা ঘটে। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে জঙ্গি-উগ্রবাদী তৎপরতা বেড়েছে। জঙ্গিবিরোধী তৎপরতায় আত্মতৃপ্তির সুযোগ নেই।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, আদালত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া দুই আসামি গ্রেপ্তারে কাজ করছেন গোয়েন্দারা। আশা করা যাচ্ছে, দ্রুত সময়ের মধ্যেই তারা গ্রেপ্তার হবেন। তারা যদি বিদেশে পালান ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাদের ফিরিয়ে আনা হবে। এখন পর্যন্ত বিদেশে পালানোর বিষয়ে কোনো ধরনের গোয়েন্দা তথ্য পাওয়া যায়নি।

জানা যায়, পলাতক দুই জঙ্গি নিষিদ্ধঘোষিত আনসার আল ইসলামের সঙ্গে জড়িত। আনসার আল ইসলাম কাট আউট (একই কাজে যুক্ত এক দলের তথ্য অন্য দল জানে না) পদ্ধতিতে কাজ করার কারণে গ্রেফতার মেহেদীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও কোনো তথ্য জানতে পারেনি পুলিশ। জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় অংশ নেওয়া আরও সাতজনকে চিহ্নিত করা গেলেও তাদের অবস্থানের বিষয়ে এখনো নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ। সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (কারা অনুবিভাগ) মো. হাবিবুর রহমানকে প্রধান করে এ কমিটি গঠন করে আদেশ জারি করা হয়। কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শকের প্রতিনিধি (ডিআইজি পদমর্যাদার নিচে নন), অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক ও ঢাকার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট।

পুলিশ সদরদপ্তরের একজন ডিআইজিকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রধান পুলিশ সদরদপ্তরের ডিআইজি (অডিট) মো. আমিনুল ইসলাম ও সদস্য সচিব অতিরিক্ত ডিআইজি (ক্রাইম মেট্রো) মো. হাসানুজ্জামান। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- সিটিটিসির ড. এ এইচ এম কামরুজ্জামান ও সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মেট্রো সাউথ) মো. আনিচুর রহমান।

দুই জঙ্গি মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত সামির ও মো. আবু ছিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব পালানোর ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারকে সভাপতি করে তদন্ত কমিটি গঠন করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। তদন্ত কমিটির সভাপতি হলেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম আ্যন্ড অপস) এ কে এম হাফিজ আক্তার। কমিটির সদস্যরা হলেন ডিএমপির যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার (অপারেশনস), যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি), লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার ও ডিএমপির সিআরও’র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার।

পলাতক দুই জঙ্গির বিষয়ে র‌্যাব কাজ করছে জানিয়ে সংস্থাটির লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, হলি আর্টিসানের মতো ঘটনা বারবার হবে না। জঙ্গিরা নতুন কোনো প্ল্যানে কাজ করতে পারে। তবে র‌্যাব এক্ষেত্রে সব সময় সতর্ক আছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, আদালত থেকে পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গির বিষয়ে পুলিশের একাধিক ইউনিট কাজ করছে। পুলিশ এর আগে অনেক বড় বড় জঙ্গি নেতাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনেছে। পলাতক দুই জঙ্গি যেখানেই পালিয়ে থাকুক তাদেরও গ্রেফতার করে আইনের মুখোমুখি করা হবে।

পালানো দুই জঙ্গিকে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত ঝুঁকি রয়েই যায় উল্লেখ করে সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বলেন, দুই জঙ্গিকে গ্রেপ্তারে নিশ্চয়ই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ চেষ্টাই করে যাচ্ছে। তাদের শনাক্ত করতে না পারলে গ্রেপ্তার করা খুব কঠিন। দুই জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করতে না পারলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অস্বস্তি রয়ে যাবে।

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. নূরুল আনোয়ার বলেন, যখন কোনো মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি পলায়ন করে তখন খুব সহসা ধরে পড়বে না, সেভাবে তারা পালিয়ে যায়। তারা খুব ভালো করেই জানতেন তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে। প্রথম মৃত্যুদণ্ড থেকে রেহাই পাওয়া আর দ্বিতীয়ত জঙ্গি সংগঠনকে পুনর্গঠন করা। তারা দেশে থাকতে পারে, আবার দেশের বাইরেও যেতে পারে। যেখানেই থাকুক তারা চাইবে বাংলাদেশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকতে। জঙ্গিরা সাধারণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেয়েও বেশি মস্তিষ্ক খাটায়। তবে দেশে থাকলে তারা ধরা পড়বেই।

পিডিএস/এমএইউ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আইজিপি,পলাতক জঙ্গি,আদালত,হামলা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close