নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৫ অক্টোবর, ২০২২

৫০ তরুণ ঘরছাড়া, জঙ্গি সন্দেহের তদন্ত কতদূর

প্রতীকী ছবি

দেশের বিভিন্ন এলাকার ৫০ তরুণের বাড়ি থেকে বের হয়ে নিরুদ্দেশ হওয়ার খবরে শঙ্কা দেখা দিয়েছিল তাদের জঙ্গিবাদে জড়ানোর। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তরফে বলা হচ্ছে হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পাঁচ বছর পর নতুন করে এই তরুণরা উদ্বেগের বড় কারণ হয়ে উঠেছে।

জঙ্গিবাদ নিয়ে কাজ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এমন একটি সূত্র জানায়, বিভিন্ন এলাকা থেকে নিখোঁজ তরুণদের সন্ধানে নেমে ৫০ জনের বেশি তরুণের ঘর ছাড়ার তথ্য পাওয়া গেছে।

র‌্যাব বলছে, তাদের প্রাপ্ত গোয়েন্দা তথ্যানুযায়ী, কুমিল্লার সাত, সিলেটের চার, এবং পটুয়াখালী, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গোপালগঞ্জের তরুণদের নিখোঁজ হওয়া একই সূত্রে গাঁথা।

জানা গেছে, চলতি বছরের শুরুর দিকে তরুণদের বিভিন্ন জঙ্গি আস্তানায় নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করে একটি জঙ্গিগোষ্ঠী। এই গোষ্ঠীর সঙ্গে আল-কায়েদা মতাদর্শী আনসার আল ইসলামের কার্যক্রমের সামঞ্জস্য রয়েছে। কারণ, হোলি আর্টিজানে হামলাকারীরা সবাই এভাবে ঘর ছেড়েছিল। এখন আবার বেশ জোরেশোরে হিজরতের নামে বের হচ্ছে। এরা কেন ঘর ছেড়ে বেরিয়েছে সে কারণ জানতে এখন মরিয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অচিরেই এদের সন্ধান এবং এর পেছনের কুশীলবদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসার কথা জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

গত মাসের শেষ দিকে কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ সাত কলেজছাত্রের বিষয়ে অনুসন্ধানে নেমে নতুন করে ‘হিজরত’-এর ( দেশত্যাগ বা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলে যাওয়া) বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরে আসে। এরপর পটুয়াখালী, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গোপালগঞ্জের আরো সাতজনের দুই থেকে তিন মাস ধরে নিরুদ্দেশ হওয়ার খবর পাওয়া যায়।

এর আগে গত বছরের ১৫ নভেম্বর থেকে সিলেটের চার তরুণ শেখ আহমেদ মামুন (২৩), মো. হাসান সায়িদ (২৪), সাইফুল ইসলাম তুহিন (২৪) ও মো. সাদিকুর রহমান (৩৩) নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের সন্ধানে পুলিশ ও র‌্যাব কাজ করছে।

এ বিষয়ে খন্দকার আল মঈন বলেন, কুমিল্লার সাত তরুণ নিখোঁজের খবর পাওয়ার পর গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আরো চারজনের ওপর নজরদারি করে র‌্যাব। ওই চারজনও হিজরতে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। র‌্যাব তাদের হেফাজতে নিয়ে পরে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। ওই চারজন র‌্যাবকে জানিয়েছিলেন যে, আরো বেশ কয়েকজন তরুণ হিজরতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন বা পরিকল্পনা করছেন। বিভিন্ন সূত্র ও গোয়েন্দা তথ্যানুযায়ী, এ মুহূর্তে হিজরতে থাকা তরুণের সংখ্যা বেশ কয়েকজন হবে। অনেক পরিবারই তথ্য গোপন করে বা তথ্য দিতে চায় না। পরিবারগুলো তথ্য দিয়ে সহায়তা না করলে নিখোঁজ বা হিজরতে থাকা তরুণদের খুঁজে বের করা খুবই কঠিন কাজ।

এদিকে, সন্তান নিখোঁজ হয়েছে এমন পরিবারগুলো বলছে, শঙ্কা নিয়ে দিন কাটছে তাদের। কিশোর ও তরুণরা বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে, কিন্তু পরিবারের সদস্যদের ঠেলে দিয়েছে কাঠগড়ায়। এত কম বয়সে জঙ্গিবাদে যদি তারা জড়িয়ে থাকে, তাহলে তা নিয়ে বিব্রত হতে হবে পুরো পরিবারকে।

জানা গেছে, গত ১৫ মার্চ নারায়ণগঞ্জে কাউকে না বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় নবম শ্রেণির ছাত্র সিয়াসাত রায়হান। এ ঘটনায় গত ২৪ মার্চ একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয় সেই কিশোরের পরিবারের পক্ষ থেকে। কেরানীগঞ্জে একটি মাদরাসার সামনে আরো দুই সমবয়সির সঙ্গে গত মাসের ১৮ তারিখ দেখা যায় তাকে। পরে সে মাদাসার সামনে থেকে বেরিয়ে চলে যায় তিনজন। এ সময় রায়হানের সঙ্গে থাকা দুজনের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। একজন পটুয়াখালীর আলামিন ও মিরাজ। আলামিন নিখোঁজ হয় দুই মাস আগে। মিরাজ ঘর ছাড়ে কোরবানি ঈদের পর।

নিখোঁজ কিশোর রিয়াসাত রায়হানের বাবা তানজীম মোহাম্মদ বলেন, রায়হান বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে কোনো কিছুই আঁচ করতে পারেনি তারা। তবে ক্লাস এইট থেকে নাইনে ওঠার পর তার রেজাল্ট খারাপ হয়। এ নিয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে তর্কবিতর্ক হয় তার। তবে ওই ছেলের বাবা বলছে, তার ছেলে কীভাবে অন্য একটি জগতে পা বাড়ালো কখনো বুঝতে পারেনি তারা। যারা তার ছেলেকে এভাবে মোটিভেট করেছে তারা অবশ্যই বয়স্ক। তিনি তার সন্তানকে ফিরে পেতে চান।

সম্প্রতি রাজধানীর বনশ্রী থেকে এক চিকিৎসককে গ্রেপ্তারের পর কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের কর্মকর্তারা জানতে পেরেছেন, কুমিল্লা থেকে সাত কিশোর ও তরুণের নিখোঁজ হওয়ার পেছনে ইন্ধন রয়েছে ওই চিকিৎসকের। জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছে থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। সে অনুযায়ী কর্মকর্তারা তদন্ত করছেন। নিখোঁজদের অবস্থান শনাক্ত করে তাদের উদ্ধারে অভিযান চলমান রয়েছে।

এত বিপুল সংখ্যক কিশোর ও তরুণ নিখোঁজের ঘটনা জঙ্গিবাদ উত্থানের জন্য আশঙ্কাজনক উল্লেখ করে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত আবদুর রশিদ বলেন, প্রতিনিয়ত কথিত হিজরতের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়া তরুণদের সংখ্যা বাড়ছে। এর পেছনে কারা জড়িত তা খুঁজে বের করে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে নিখোঁজ কিশোর ও তরুণদের অবস্থান শনাক্ত করে তাদের উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে। কারা তাদের নিয়ে গেছে, কাদের ইন্ধন রয়েছে, কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, এসব বিষয়ে তদন্ত চলছে। মাস্টারমাইন্ড রিক্রুটারদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। তদন্ত অনেক দূর এগিয়েছে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
তরুণ ঘরছাড়া,জঙ্গি সন্দেহ,তদন্ত কতদূর
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close