চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ১১ জুন, ২০২৪

চট্টগ্রামে চামড়া বাজার

কোরবানির চেয়ে চামড়া সংগ্রহ ৪০ শতাংশ কম 

চট্টগ্রাম জেলায় চলতি মৌসুমে কোরবানির পশুর চাহিদা প্রায় ৯ লাখ। কিন্তু চামড়া কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র সাড়ে তিন লাখ। যা কোরবানীর তুলনায় ৩৯ দশমিক ৫১ শতাংশ কম। পাঁচ বছর ধরে একই পরিমাণ চামড়া সংগ্রহ করছেন চামড়া ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা।

এদিকে বেপারিরা বলছেন, ২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ট্যানারি মালিকদের কাছে ২০-২৫ কোটি টাকার বকেয়া আটকে পড়ে চট্টগ্রামের আড়তদারদের। বড় অঙ্কের পুঁজি দীর্ঘদিন আটকে থাকায় এখানকার চামড়া বেপারীরা বিপাকে রয়েছেন। আড়তদার ও চামড়া বেপারিরা দাবি, করছেন চামড়া শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য স্বল্প সুদে ঋণের প্রয়োজন।

এর আগে ২০১৯ ও ২০২০ সালে চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর চামড়া বেচাকেনায় চরম বিপর্যয় দেখা দেয়। এ সময় বিক্রি করতে না পথে-ঘাটে হাজার হাজার চামড়া ফেলে দিয়েছিলেন মৌসুমী ব্যবসায়ী ও কোরবানীদাতারা। এরপর থেকে চট্টগ্রামে চামড়া শিল্পের বাজার বড় হচ্ছে না। তিন থেকে সাড়ে তিন লাখের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা।

অতীতের অভিজ্ঞতা স্মরণ করে আড়তদাররা বলছেন, চট্টগ্রামের কোরবানিদাতারা আগে একাধিক গরু কোরবানি দিতেন। কিন্তু করোনার পর মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষ অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। আবার গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে কোরবানির পশুর দামও অনেকটা বেড়েছে। মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো এখন ভাগে কোরবানি দিতে হচ্ছে। তাই কোরবানির পশুর চামড়া গত পাঁচ ছয় বছর ধরে সাড়ে তিন লাখের বেশি সংগ্রহ হচ্ছে না।

চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, চলতি মৌসুমে চট্টগ্রাম জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৭৬৫। কোরবানিযোগ্য পশুর চাহিদা আর চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে বেশ ফারাক রয়েছে। কোরবানীর তুলনায় ৩৯ দশমিক ৫১ শতাংশ কম চামড়া সংগ্রহ হবে।

বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন বলেন, ‘কোরবানির পশুর চামড়া কেনার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন আড়তদাররা। ইতিমধ্যেই অর্থ জোগান, গুদাম পরিষ্কার, শ্রমিক সংগ্রহ ও লবণ কেনাসহ সব ধরনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এবারও চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলায় সাড়ে তিন লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।’ এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে মতে, ২০২২ সালে চট্টগ্রামে কোরবানির পশু সংগ্রহ হয়েছিল তিন লাখ ৪৩ হাজার ২৫০টি। ২০২৩ সালেও সাড়ে তিন লাখ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও সংগ্রহ হয়েছিল তিন লাখ ১৯ হাজারটি। মূল্যস্ফীতির কারণে কোরবানির সংখ্যা কমছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।

সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ট্যানারি মালিকেরা প্রতিবছর সভা করে চামড়ার দর বেঁধে দেয়। কিন্তু সরকারের বেঁধে দেওয়া দরে চামড়া না কেনাবেচা হয় না বলে দাবি করেন আড়তদাররা। বেপারিরা জানান, ২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ট্যানারি মালিকদের কাছে ২০-২৫ কোটি টাকার বকেয়া আটকে পড়ে চট্টগ্রামের আড়তদারদের। বড় অঙ্কের পুঁজি দীর্ঘদিন আটকে থাকায় এখানকার চামড়া বেপারীরা বিপাকে রয়েছেন।

জানা গেছে, চট্টগ্রামে আড়তদার সমিতির সদস্য রয়েছেন ১১২ জন। এর বাইরে আরো অন্তত একশজন বেপারি চামড়া কিনতেন। কিন্তু এক দশকে চামড়া কেনাবেচায় আছেন ৩০-৪০ জন আড়তদার। পুঁজি আটকে যাওয়া ও অর্থনৈতিক সংকটের কারণে অনেক ব্যবসায়ী দেউলিয়া হয়ে পড়েছেন। আড়তদার ও চামড়া বেপারিরা দাবি, করছেন চামড়া শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য স্বল্প সুদে ঋণের প্রয়োজন।

আড়তদার সমিতির সভাপতি মুসলিম উদ্দিন বলেন, বর্তমানে চামড়া বেপারিদের বড় পুঁজি নেই। ধার-দেনা ও ঋণ করে চামড়া কিনতে হয়। আগের বকেয়ার (২০১৫-২০১৮ সাল) বড় অংশ এখনো আটকে রয়েছে। তবে ২০২০ সালের পর থেকে বকেয়া টাকা পরিশোধ করে যাচ্ছেন ট্যানারি মালিকরা।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close