আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলী সদস্য ও ঠাকুরগাঁও-১ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) রমেশ চন্দ্র সেনকে ঠাকুরগাঁও থেকে বিতাড়িত করার হুমকি দিয়েছেন পৌরসভার প্যানেল মেয়র আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী। রবিবার (১৩ মে) সন্ধ্যায় শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী অ্যাডভোকেট অরুণাংশু দত্ত টিটোর এক প্রচার সভায় বক্তব্যকালে তিনি এই কথা বলেন।

প্রচার সভায় দেওয়ার বক্তব্যের ২ মিনিট ২৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। কাইয়ুম চৌধুরী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার কাউন্সিলর। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি আনারস প্রতীকে চেয়ারম্যান প্রার্থী অ্যাডভোকেট অরুণাংশু দত্ত টিটোর সমর্থক।

ভাইরাল হওয়া ভিডিও ফুটেজে এমপি রমেশ চন্দ্র সেনের উদ্দেশ্যে পৌর কাউন্সিলর আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরীকে বলতে শোনা যায়, ‘বেশি বাড়াবাড়ি করবেন না, ঠাকুরগাঁওয়ে আপনাদের ঠাঁই হবে না। ওই রমেশ সেনকে রুহিয়া থেকে টিটো দত্ত ঠাকুরগাঁওয়ে নিয়ে আসছে। আবার বিদায় করে দেব। রাত ৩টা বাজলেও টিটো দত্তকে পাওয়া যায়, আর ওনি (রমেশ সেন) এমন নেতা কলিংবেল বাজলেও তাকে পাওয়া যায় না।’

প্যানেল মেয়র কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘জীবনে তো ভোট করেনি, প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেনি কারো সঙ্গে। ওই অটোপাস এমপি সবাইকে হুমকি দিয়ে কাউন্সিলরদের বিভ্রান্ত করেছে। আবার কিছু কাউন্সিলর বাসস্ট্যান্ডে কথা বলেছে। তারা ঠিকই আছে, কোনো রকম বিভ্রান্ত হয়নি, তাদের জোর করে আনা হয়েছে। ওনারা (কাউন্সিলর) এখানে (বাস স্ট্যান্ড এলাকায়) এসে বলছে, আমরা আওয়ামী লীগের মূল স্রোতে আছি। ওনারা যদি মূলস্রোত হয়, তাহলে আমরা কোনো আওয়ামী লীগ করছি? যার বাপ (বাবা) করে জামায়েত, ভাই করে বিএনপি, একাই করে আওয়ামী লীগ, ওনি না কি মূলস্রোত? আজব কথা! আমরাই মূলস্রোত, মূল আওয়ামী লীগ।’

ভিডিওর বক্তব্য প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা ও প্যানেল মেয়র কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘মনের ক্ষোভ থেকেই আমি এমপি মহোদয়কে বলেছি। তিনি যেভাবে পক্ষপাতিত্ব করছেন, তা মোটেও কাম্য নয়। যেহেতু আমরা সবাই একই দলের, তিনি আমাদের অভিভাবক। তিনি কেন পক্ষ নিয়ে কাজ করবেন?’

জানতে চাইলে সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন বলেন, ‘সবাই একই দলের প্রার্থী। নির্বাচন যাতে অবাধ সুষ্ঠু হয়, কেউ যাতে নির্বাচনী সভাগুলোতে ভয় প্রদর্শন করতে না পারে এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলা হয়েছে।’ যারা এ ধরনের হুমকি-ধমকি দিবেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশকে আহ্বান জানান তিনি।

এমপিকে হুমকি দেওয়ার বিষয়ে জানতে ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার (এসপি) উত্তম প্রসাদ পাঠকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এসপি বলেন, ‘হুমকি বিষয়ে এখন পর্যন্ত কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে নির্বাচনকে সামনে রেখে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত আছি।’

জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানা গেছে, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় ২১ মে ভোট গ্রহণ হবে। এতে চেয়ারম্যান পদে চারজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন-সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট অরুণাংশু দত্ত টিটো (আনারস প্রতীক), সাধারণ সম্পাদক মোশারুল ইসলাম সরকার (মোটরসাইকেল প্রতীক), সহসভাপতি রওশনুল হক তুষার (ঘোড়া প্রতীক) ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কামরুল হাসান খোকন (কাপ-পিরিচ প্রতীক)। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় একটি পৌরসভা ও ২২টি ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৮৭ হাজার ১৭৫। এরমধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৪৪ হাজার ৯০৩ জন, নারী ২ লাখ ৪২ হাজার ২৬৮। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গ (হিজরা) ৪ জন। ১৮৫টা কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ হবে।

পিডিএস/আরডি