এসএসসি পাস করা শিক্ষার্থীদের প্রত্যেককে ১ কেজি করে মিষ্টি আনতে স্কুলের নোটিশ
পরীক্ষায় পাশ করার পর অশেপাশের প্রতিবেশী ও অত্মীয় স্বজনকে তো মিষ্টি খাইয়েছেন। কিন্তু কখনো নিজের স্কুলে গিয়ে মিষ্টি খাইয়েছেন? বা মিষ্টি খাওয়ানোর জন্য কোনো স্কুল নোটিশ পেয়েছেন?
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের সেন্ট মার্থাস উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করা শিক্ষার্থীদেরকে এক কেজি করে মিষ্টি বিদ্যালয়ে নিয়ে আসার নোটিশ দিয়েছে স্কুল কতৃপক্ষ।
আর এই নোটিশ প্রদানকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা করছেন অনেকেই। রবিবার (১২ মে) বিদ্যালয়ের ফেসবুক পেজে এই নোটিশটি আপলোড করা হয়।
নোটিশে লেখা রয়েছে, সেন্ট মার্থাস উচ্চ বিদ্যালয়ের ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষায় কৃতকার্য শিক্ষার্থীদের পিতা-মাতা/অভিভাবকের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, আগামী ১৩/০৫/২০২৪ রোজ সোমবার, এসএসসি পরীক্ষায় কৃতকার্য শিক্ষার্থী, শিক্ষকমণ্ডলী এবং বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীদের নিয়ে আনন্দ করা হবে। কৃতকার্য শিক্ষার্থীদের এক কেজি করে মিষ্টি নিয়ে সকাল ১০টা ২০ মিনিটে বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে মিষ্টি নিয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই নোটিশটি ফেসবুকে আপলোড করে স্কুল কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করছেন।
কেউ লিখেছেন, এ কেমন নোটিশ? অভিভাবককে কেন তিনি নোটিশ করবেন? আমি অভিভাবক হিসেবে যদি মনে করি শিক্ষকগণকে মিষ্টি খাওয়ানো দরকার তাহলে আমি নিজেই মিষ্টি মুখ করাব। মিষ্টির জন্য স্কুল নোটিশ করবে কেন? তারা অভিভাবকদের মিষ্টি নিয়ে যাওয়ার জন্য নোটিশ করতে পারেন কি না? তাও নোটিশের মধ্যে অনুরোধ করেননি তিনি আদেশ করেছেন।
অন্য আরেকজন লিখেছেন, এই প্রথম দেখলাম স্কুলে মিষ্টি আনার নোটিশ। আরও কত কী দেখতে হবে?
তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হওয়া সমালোচনার গুরুত্ব দেয়নি স্কুল কর্তৃপক্ষ। গতকাল সোমবার স্কুলের এসএসসি পাস করা শিক্ষার্থীদের আনা মিষ্টি নিয়ে স্কুলের সকল শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নিয়ে করা হয়েছে আনন্দ উৎসব।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিস্টার রিক্তা গমেজ আরএনডিএম বলেন, আমাদের স্কুল থেকে ৬৬ জন এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে ৬৩ জন পাস করেছে। এদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৬ জন। আমরা প্রতি বছরই পাস করা শিক্ষার্থীদের নিয়ে পুরো স্কুলে আনন্দ অনুষ্ঠানের আয়োজন করি। পাস করা শিক্ষার্থীরা তাদের জুনিয়রদের মিষ্টিমুখ করিয়ে যায়। এটা আমাদের স্কুলের ট্রেডিশন। গতকাল সবাই আনন্দ নিয়েই মিষ্টি এনেছে। কেউ তো এই বিষয়ে অভিযোগ করেনি। আমরা স্কুলের সবাইকে নিয়ে একটা আনন্দ উৎসব করেছি। মিষ্টি আনার জন্য কাউকে জোর করা হয়নি।
এ বিষয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দীলিপ কুমার বর্ধন বলেন, এভাবে নোটিশ দিয়ে শিক্ষার্থীদের মিষ্টি নিয়ে আসার নিয়ম নেই। এই বিষয়টা স্কুল কর্তৃপক্ষ ফেসবুকে দেওয়ায় মানুষ সমালোচনা করছেন। স্কুলে শিক্ষার্থীরা পাস করলে এমনিতেই মিষ্টি নিয়ে যায়। এভাবে ফেসবুকে নোটিশ দিয়ে মিষ্টি নিয়ে আসার নির্দেশনা দেওয়া স্কুল কর্তৃপক্ষের ঠিক হয়নি। আমাদের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাও বিষয়টি জানতে পেরে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টির ব্যাখ্যা চেয়েছে। আমি কিছুক্ষণ আগেও স্কুলের হেড টিচারের সঙ্গে কথা বলেছি। স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাকে আজই এই ঘটনার লিখিত ব্যাখ্যা দেবে।