সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
চাষাবাদে ভূ-গর্ভস্থ পানির অপচয় রোধে এডব্লিউডি প্রযুক্তি ব্যবহার বাড়ছে
এডব্লিউডি প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ধান চাষে সিরাজগঞ্জের কৃষকরা বেশ লাভবান হচ্ছেন। ফলে একদিকে ভূ-গর্ভস্থ পানির অপচয় রোধ হচ্ছে তেমনি সেচ মালিকদের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খরচও সাশ্রয় হচ্ছে। বাড়ছে ধানের ফলন। কমছে রোগ বালাই। এ প্রযুক্তি জেলাজুড়ে কৃষকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে বলে জানান কৃষকরা ও কৃষি কর্মকতা।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ভূ-গবস্থ পানির ধানসহ বিভিন্ন ফসল চাষে বেশি ব্যবহার হয়। ধানে উৎপাদন করতে জমিতে পানির সেচ দিতে হয়। যার পুরোটা গভীর-অগভীর নলকূপের মাধ্যমে ভূগবস্থ্য থেকে তোলা হয়। মৌসুমের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পানির স্তর অনেকটা নিচে নেমে যায়। ফলে জমিতে পর্যাপ্ত সেচ দেওয়া কঠিন হয়। সচেতনতার অভাবে কৃষকরা নিজেদের ইচ্ছেমতো ধানের জমিতে সেচ দিতেন। চাহিদার অতিরিক্ত পানি ধরে রাখতেন। এতে ধানের চারা বেশি গজাতে পারতো না। অপরদিকে ভূ-গর্ভস্থ পানির অপচয়ে সংকটের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তাই কৃষি বিভাগ পানির এই অপচয় রোধে পরিবর্তিত শুকনা ভেজা (এডব্লিউডি) নামে প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন। সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় গত দুই বছর ধরে এ পদ্বতির ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়েছে।
সরেজমিনে উল্লাপাড়ার রুয়াপাড়া, চড়িয়া উজির গ্রামের মাঠে দেখা গেছে, এখানকার কৃষকরা তাদের জমিতে এডব্লিউডি প্রযুক্তি স্থাপন করেছেন।
রুয়াপাড়া গ্রামের কৃষক মালেক, ঠান্ডু মিয়া, হেলাল উদ্দিন, আব্দুর রশিদ, আব্দুল আলিম জানান, আমাদের জমিতে কৃষি অফিস থেকে দেওয়া এডব্লিউডি স্থাপন করেছে তারা। কৃষি কর্মকতারা তাদের পানি পরীক্ষা সহ এ প্রযুক্তির বিভিন্ন কৌশল শিখিয়ে দিয়েছেন, সেভাবে সেচ দিচ্ছে তারা। আবার প্রয়োজন মতো শুকাচ্ছে। এ এলাকায় তাদের দেখাদেখি সব কৃষক এর ব্যবহার শুরু করেছেন। সেচ মালিকদেরও বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খরচ অনেক কমেছে।
চড়িয়া উজির এলাকার নলকূপ মালিক চাঁদ আলী দেওয়ান বলেন, আগে না বুঝে জমিভর্তি করে সেচ দেওয়া লাগতো। অনেক বেশি বিদ্যুৎ বিল আসতো। এ পদ্ধতি আসায় এখন তা লাগছে না। বিদ্যুতের উপর চাম কমছে।
উল্লাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকতা সুর্বণা ইয়াসমিন সুমি জানান, উপজেলার কৃষকদের সচেতন করতে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকতাদের নিয়ে উঠান বৈঠক সহ সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছেন। ইতোমধ্যে প্রায় প্রতিটি এলাকায় কম বেশি এ পদ্ধতি কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছেন। এতে পানির অপচয় রোধ সহ কৃষকরা ভাল ফলনে লাভবান হবেন।
সিরাজগঞ্জ কৃষিসম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপপরিচালক বাবলু কুমার সূত্রধর জানান, নতুন এ পদ্ধতি ছড়িয়ে দেওয়া গেলে কৃষকরা যেমন লাভবান হবে তেমনি ভূ-গর্ভস্থ পানির অপচয় রোধ করা যাবে। অতিমাত্রায় কিটনাশকের ব্যবহার কমবে, মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত হবে।