স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, ‘শিক্ষকরা জতির মেরুদণ্ড, জাতি গড়ার কারিগর, শিক্ষকতা একটি মহান ও মহৎ পেশা। আমার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ছিলেন। একদিন আমি বাড়ি থেকে গাড়িতে আসার সময় পথে ওই শিক্ষককের সঙ্গে দেখা হয়েছে। তাকে চিনতে পেরে তখন সঙ্গে সঙ্গে আমি গাড়ি থেকে নেমে স্যারকে পা ধরে সালাম করেছি। তখন আমার খুব গর্ববোধ হয়েছে- এই শিক্ষক আমাকে পড়িয়েছেন। শিক্ষকদের সব সময় মর্যাদাপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই শিক্ষকদের বলব, আপনারা এমন কাজ করবেন যাতে আপনাদের মতো মর্যাদাশীল ব্যক্তিদের ছাত্রছাত্রীরা সারাজীবন মনে রাখে।’

শনিবার (১৩ এপ্রিল) বিকালে কুমিল্লার লাকসাম ইছাপুর সেন্ট্রাল হাই স্কুলের ৫০ বছর পূর্তি ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ‘প্রিয় শিক্ষকদের বলব, আপনারা মানুষ গড়ার কারিগর। দয়া করে আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব আপনারা সঠিকভাবে পালন করবেন। তখন আপনি আপনার ছাত্রছাত্রী ও সমাজের কাছে আইডল হিসেবে পরিচয় হবেন। আগামীর প্রজন্ম এগিয়ে যাবে। আজকের শিক্ষার্থীরাই গড়বে, আগামীর উন্নত বাংলাদেশ অর্থাৎ ২০৪১ সালের উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। শিক্ষার্থীদের মাঝে দেশপ্রেম, মানবতাবোধ জাগ্রত করতে শিক্ষকদের অগ্রণি ভূমিকা রাখতে হবে। সমৃদ্ধ দেশ গড়তে সুশিক্ষার বিকল্প নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষাখাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন এবং শিক্ষাখাতে সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন করেছেন। সরকারের এই উদ্যোগকে সফল করতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের উচিত ভালভাবে পড়াশুনার মাধ্যমে নিজেকে যোগ্য নাগরিক হিসাবে গড়ে তোলা। সঠিক পরিচর্যা পেলে নতুন প্রজন্মের সন্তানরাই একদিন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়বে।’

মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের শতভাগ বিদ্যুতায়ন হয়েছে, গ্রামীণ অবকাঠামো, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে, কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়েছে, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। আমার নির্বাচনী এলাকা লাকসাম ও মনোহরগঞ্জে অসংখ্য রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ- কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়া হয়েছে। আমি যখন সময় পাই তখন আমার লাকসাম- মনোহরগঞ্জের উন্নয়ন কাজগুলো তাকিয়ে দেখলে আমার কাছে খুব ভালো লাগে।

তিনি আরও বলেন, নবাব ফয়জুন্নেচ্ছা সরকারি কলেজে নতুন নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। আমার প্রিয় বিদ্যাপীঠ নবাব ফয়জুন্নেচ্ছা সরকারি কলেজে সেদিন আমি ১০ মিনিটের জন্য গিয়েছিলাম, তখন আমার কাছে ভালো লেগেছে। আমি আজকে ইছাপুরা সেন্ট্রাল হাই স্কুলের অনুষ্ঠানে আসতে পরে আমার কাছে ভালো লাগছে। আমি বিশ্বাস করি এই স্কুল এক সময় গর্বিত স্কুল হবে। শিক্ষকরা ভালো থাকবেন। আর সব অভিভাবকদের আমি অনুরোধ করব, ছেলে-মেয়েদের প্রতি আপনারা নজর রাখতে হবে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক আবুল ফয়েজ। লাকসাম পৌরসভা মেয়র ও ইছাপুর সেন্ট্রাল হাই স্কুল পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি অধ্যাপক মো. আবুল খায়েরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব হাবিবুর রহমান, লাকসাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাভোকেট ইউনুস ভুঁইয়া, লাকসাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল হাই সিদ্দিকী, লাকসাম সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সোমেন মজুমদার, গোবিন্দপুর ইউপি চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন শামীম।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মনোহরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজালা রানী চাকমা, কুমিল্লা জেলা ( এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মির্জা ইফতেখার আলী, জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার নাসারুল্লাহ, লাকসাম উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মহব্বত আলী, পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম হিরা, লাকসাম থানার ওসি শাহাবুদ্দিন, মনোহরগঞ্জ থানার ওসি শাহজাহান কবিরসহ ইছাপুরা সেন্ট্রাল হাই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

এদিকে রবিবার (১৪ এপ্রিল) লাকসাম পৌরসভা অডিটোরিয়ামে লাকসাম উপজেলা প্রশাসন ও শিল্পকলা একাডেমি উদ্যোগে আয়োজিত শুভ নববর্ষ ১৪৩১ উদযাপন উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। পরে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তৃতীয় লিঙ্গ (হিজরা) সম্প্রদায়ের জন্য নির্মিত পাকাঘরগুলো পরির্দশন করেন এবং হিজরা সম্প্রদায়ের লোকজনের সাথে কথা বলেন৷