জাকির হোসেন, সুনামগঞ্জ

  ৩১ মার্চ, ২০২৪

সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ সড়কের ১৯ কিলোমিটার অংশ

৩০০০ গাছ কাটাবে বনবিভাগ, প্রতিবাদে রাস্তায় সুনামগঞ্জবাসী

সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ সড়কের টুকেরবাজার এলাকায় রবিবার দুপুরে ‘সচেতন সুনামগঞ্জবাসী’ ব্যানারে মানববন্ধন। ছবি: প্রতিদিনের সংবাদ

সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ সড়কের প্রায় ১৯ কিলোমিটার অংশে সামাজিক বনায়নে লাগানো ৩ হাজার কাটার উদ্যোগ নিয়েছে বনবিভাগ। এর প্রতিবাদে ও গাছ কাটা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন করেছে স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশকর্মীরা।

রবিবার (৩১ মার্চ) বিকেল ৩টায় সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ সড়কের টুকেরবাজার এলাকায় ‘সচেতন সুনামগঞ্জবাসী’ ব্যানারে মানববন্ধনে সুধীজনসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজন অংশগ্রহণ করেন। গাছ কাটা বন্ধ না করা হলে বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়।

বন বিভাগ বলেছে, সামাজিক বনায়নের অংশ হিসেবে লাগানো গাছের সময় পূর্ণ হওয়ার পর কেটে উপকারভোগীদের টাকা পরিশোধ করতে হয়। তাই গাছের দরপত্র আহ্বান করেছে তারা। এসব কার্যক্রম শেষ হলে গাছগুলো কাটা হবে। তবে পরিবেশকর্মীরা বলেছেন, গাছগুলো সবুজে মোড়া হাজারো গাছের ছায়ায় পথ চলেন পথচারী, আশ্রয় নেয় পাখিরা। সামাজিক বনায়নের সময় পূর্ণ হলো গাছগুলোর প্রাণকাল আরো দীর্ঘ হবে। তাই এ গাছ না কেটে বিকল্প উপকারভোগীদের টাকা পরিশোধের দাবি তাদের।

জানা গেছে, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার টুকেরবাজার থেকে জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনাবাজার পর্যন্ত সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ সড়কের দূরত্ব ১৯ কিলোমিটার। এ সড়কের দুপাশে সামাজিক বনায়নের আওতায় নানা প্রজাতির বনজ ও ফলদ গাছ রোপণ করা হয়েছিল। এগুলোর বয়স এখন ১৫ থেকে ২০ বছর।

এদিকে সামাজিক বনায়নের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ায় গাছ কাটার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে গাছ বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করেছে বন বিভাগ। সম্প্রতি এসব গাছের গায়ে লাল কালিতে নম্বর দেওয়া হয়েছে। ১৯ কিলোমিটার সড়কের দুপাশে লাগানো গাছ কাটার প্রস্তুতি চলছে। তবে শুরু থেকেই গাছ কাটার কার্যক্রম বন্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছে সুনামগঞ্জের সচেতন ব্যক্তি, পরিবেশকর্মীরা।

এর আগে সড়ক ও জনপথের (সওজ) আওতাধীন সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ সড়কটি ২০২২ সালের বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গত বছরের জুনে সড়কটি সংস্কার হয়। এ সময় যেসব গাছেরগুঁড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সেগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বন বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল।


  • সামাজিক বনায়নে লাগানো সওজের সড়কে গাছ লাগায় বন বিভাগ
  • বনায়নের মেয়াদপূর্ণ হলেও গাছের প্রাণ আয়ু আরো দীর্ঘ
  • বিকল্প উপায়ে উপকারভোগীদের টাকা শোধের দাবি

সামাজিক বনায়ন বিধিমালা (২০০৪) অনুযায়ী, গাছ বিক্রির টাকা উপকারভোগী ৫৫ ভাগ, বন অধিদপ্তর ১০ ভাগ, ভূমির মালিক হিসেবে সড়ক ও জনপথ (সওজ) ২০ ভাগ, ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ৫ ভাগ পাবে। বাকি ১০ ভাগ টাকা দিয়ে আবার বনায়ন করা হবে।

মানববন্ধনে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) আহ্বায়ক খলিল রহমান বলেন, বন বিভাগের কিছু অতি উৎসাহী বন কর্মকর্তারে যোগসাযশে বৃক্ষনিধন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু স্পষ্টভাবে বলা হচ্ছে, রাস্তার পাশের একটি গাছও যেন কাটা না হয়।

মানববন্ধনের আরো বক্তব্য দেন হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি ইয়াকুব বখত বহলুল। তিনি বলেন, ‘সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে যারা উপকারভোগী, তাদের বিকল্প উপায়ে টাকা পরিশোধ করা হউক। কেবল গাছ কেটেই কেন টাকা পরিশোধ করতে হবে?’

গাছ কাটার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল সুনামগঞ্জ বন্যপ্রাণী জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা মাহমুদুল হক খানের কাছে। তিনি বলেন, ‘সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ সড়কের ১৯ কিলোমিটার অংশে উপকারভোগীদের সম্পৃক্ত করে সামাজিক বনায়ন করা হয়েছে। সামাজিক বনায়নবিধি (২০০৪) অনুযায়ী, মেয়াদ পূর্ণ হলে গাছগুলো কেটে উপকারভোগীদের মধ্যে টাকা বিতরণ করতে হবে। তাই এখন আমরা প্রায় ৩ হাজার গাছ কাটার উদ্যোগ নিয়েছি। এরই মধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। তবে এখনো কার্যাদেশ দেওয়া হয়নি।’

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close