সজিব ইসলাম, চারঘাট (রাজশাহী)

  ০৩ মার্চ, ২০২৪

পদ্মায় খাঁচায় মাছ চাষ, দিন  বদলের স্বপ্ন জেলেদের

ছবি: প্রতিদিনের সংবাদ

‘আমরা জেলেরা সব সময়ই অবহেলিত। খাঁচায় মাছ চাষ শুরু হওয়ায় প্রতিটি জেলে এখন উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছে। সবাই শ্রম দিচ্ছি, যা লাভ হবে সমান ভাগ করে নেব। আবার যখন বর্ষায় নদীতে পানি আসবে তখন মাছ চাষ বন্ধ রেখে জাল নিয়ে মাছ ধরতে নেমে পড়ব।’ কথাগুলো বলছিলেন, রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার টাঙ্গন এলাকায় খাঁচায় মাছ চাষ করা ৩০ জেলেদের দল প্রধান মাহাবুর রহমান।

জানা যায়, পদ্মায় পানি কমে নদীর বেশিরভাগ জায়গা জুড়ে চর জেগেছে। জেলেরা রাত-দিন নদীতে পড়ে থাকলেও মিলছে না কাক্সিক্ষত মাছের দেখা। এ নিয়ে হতাশ হয়ে অনেকে গুটিয়ে রেখেছেন জাল। তবে বেকার হয়ে পড়া এসব জেলেদের কাছে আশার আলো হয়ে এসেছে খাঁচায় মাছ চাষ। নদীর পানিতে লোহার পাইপ, বাঁশ ও ড্রাম। আর তাতে যুক্ত জাল। এভাবে রাজশাহীতে পদ্মা নদীর মাঝখানে তৈরি করা হয়েছে ভাসমান খাঁচা। এতে নদীর পানির প্রবাহও থাকছে, আবার মাছগুলোকে একটি আবদ্ধ জায়গায়ও আটকে রাখা যাচ্ছে।

সরেজমিনে চারঘাট উপজেলার ইউসুফপুর ও সদর ইউনিয়নে দেখা যায়, নদীর বিভিন্ন ফাঁকা জায়গার পানিতে এভাবে খাঁচা বসানো হয়েছে। তাতে বেড়ে উঠছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। জেলেরাও ব্যস্ত সময় পার করছেন মাছের পরিচর্যা ও খাবার দিতে।

চারঘাট মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্যমতে, চারঘাটে পদ্মা নদীর ৭৬৭ হেক্টর জায়গায় বিভিন্ন প্রজাতির মিঠা পানির দেশীয় মাছের অভায়রন্য রয়েছে। তা থেকে প্রতি বছর ১ হাজার ৯১৭ টন দেশীয় মাছ উৎপাদন হয়ে থাকে। যা রাজশাহীর দেশীয় মাছের অন্যতম জোগানদাতা। কিন্তু পদ্মার পানি কমে যাওয়ায় প্রতি বছরই দেশীয় এ মাছের জোগান কমছে।

উপজেলা মৎস্য সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এ আঞ্চলের প্রাকৃতিক মাছের একমাত্র উৎস পদ্মা নদী। চারঘাটে ১ হাজার ১৪৯ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। প্রতিবছর নদীতে চর পড়ায় জেলেদের শুষ্ক মৌসুমে জেলেদের বেকার হয়ে কষ্টকর জীবন পার করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় গত বছর জেলেরা পদ্মা নদী কেন্দ্র করে নিজেদের কর্মসংস্থান গড়ে তুলতে নদীতে খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষের উদ্যোগ নেয় এবং মৎস্য অফিসের সহযোগিতা কামনা করেন।

উপজেলা মৎস্য সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, উপজেলা মৎস্য বিভাগ জেলেদের খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষের প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। এবং মৎস্য অফিস থেকে খাঁচা করে দেওয়া, মাছের পোনা ও খাবার দিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে। গত বছর উপজেলার ১০ জন জেলে শুরু করলেও এ বছর টাঙ্গন এলাকায় ৩০ জন জেলে ৩০টি খাঁচায় এবং রাওথা এলাকায় ১০ জন জেলে ১৬টি খাঁচায় মাছ চাষ শুরু করেছেন। প্রতিটি খাঁচা ২০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১০ ফুট প্রস্থের। প্রতিটি খাঁচা তৈরিতে খরচ হয়েছে ১৫-২০ হাজার টাকা। প্রতিটি খাঁচায় ১ হাজার ‘মনোসেক্স’ জাতের তেলাপিয়া ও কইসহ বিভিন্ন জাতের মাছ চাষ করা হচ্ছে।

সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ওয়ালি উল্লাহ মোল্লাহ বলেন, বেকার সমস্যা দূর ও ভূমিহীন মৎস্যজীবীদের স্বাবলম্বী করার উদ্দেশ্যে গত বছর থেকে খাঁচায় মাছ চাষ শুরু হয়েছে। জেলেদের পাশাপাশি অনেক বেকার তরুণ এই পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে আমাদের কাছে আসছে। প্রশিক্ষণ নিতে চাচ্ছে। আমরাও তাদের সর্বাত্মক সহায়তা করছি।

পিডিএস/আরডি

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রাজশাহী,চারঘাট
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close