চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে বিদ্যালয় থেকে ফেরার পথে ইশরাত জাহান (১৬) নামের সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক স্কুল শিক্ষার্থীকে জোরপূর্বক অপহরণের ঘটনার মাত্র ৫ ঘণ্টার মধ্যেই উদ্ধার করেছে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮টার দিকে চাঁদপুর সদর উপজেলা থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়।

এর আগে, এদিন বেলা আড়াইটার দিকে বিদ্যালয় থেকে নিজ বাড়ি ফেরার পথে হাজীগঞ্জ উপজেলার গন্ধর্ব্যপুর উত্তর ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের ধোপা বাড়ি ও মজুমদার বাড়ি সংলগ্ন এলাকা থেকে ইশরাত জাহানকে জোরপূর্বক সিএনজিচালিত স্কুটারে উঠিয়ে নিয়ে যায় সাব্বির (২৩) ও রনি (২১) নামের দুই যুবক।

ইশরাত জাহান ওই গ্রামের সিএনজিচালক জুয়েলের মেয়ে। সে জগন্নাথপুর হাজী এরশাদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। অভিযুক্ত দুই যুবক চাঁদপুর সদর উপজেলার মহামায়া এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গেছে। তারা দুইজন গত এক বছর যাবত ওই এলাকায় সড়ক নির্মাণের শ্রমিক হিসেবে কাজ করতো।

এদিকে অপহরণের শিকার ইশরাত জাহানের সহপাঠী ও তার খালাতো বোন মুক্তা আক্তার জানান, বৃহস্পতিবার বিদ্যালয় ছুটির পর বেলা আড়াইটার দিকে তারা দুইজন একসাথে বাড়ি ফিরছিলেন। হঠাৎ করে হরিপুর টু জগন্নাথপুর সড়কের মজুমদার বাড়ির সামনে গেলে সাব্বির ও রনি জোরপূর্বক ইশরাতকে সিএনজিতে তোলে।

মুক্তা আরও জানায়, সে ও ইশারাত জাহান ডাক-চিৎকার দিতে থাকে এবং অভিযুক্ত দুই যুবককে প্রতিরোধের চেষ্টা করে। ওই সময়ে সড়কের আশেপাশে কোনো মানুষ না থাকায় তাদের আটকানো যায়নি। সিএনজিতে ওই দুই যুবক ও সিএনজির চালক ছাড়া আর কেউ ছিলো না।

শিক্ষার্থীর মা রুজিনা বেগম জানান, তার স্বামীর বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া গ্রামে। দরিদ্র স্বামী অসুস্থ থাকার কারনে গত ৮ বছর ধরে তিনি স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে বাবার বাড়ি হাজীগঞ্জেই থাকেন। তিনি বলেন, মেয়েকে কখনও দেখিনি কারোর সাথে কথা বলতে। আমি নিজেও মোবাইল ফোন ব্যবহার করি না। স্কুল থেকে বাড়ি ফিরার পথে আমার মেয়েকে তুলে নিয়ে গেছে। আমি আমার মেয়েকে ফেরত চাই।

এদিকে অপহরণের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুঁটে যান হাজীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. খুরশীদ আলমসহ সঙ্গীয় ফোর্স। পরে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আবদুর রশিদের সার্বিক দিক-নির্দেশনায় তথ্য-প্রযুক্তির সহযোগিতা ইশরাত জাহানকে চাঁদপুর সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের একটি এলাকা থেকে উদ্বার করা হয়েছে। তবে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায় অভিযুক্ত সাব্বির ও রনি।

জানা গেছে, অভিযুক্ত সাব্বির ও রনিকে আটকের জন্য অফিসার ইনচার্জের নেতৃত্বে এখনো ঘটনাস্থলে রয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে এক কিশোরীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাজীগঞ্জ থানায় পুলিশি হেফাজতে আনা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, প্রেম-সংক্রান্ত ঘটনার কারণে ইশরাত জাহানকে অপহরণ করেছে ওই দুই যুবক। তাদেরকে আটক ও অপহৃত ইশরাত জাহানের সাথে কথা বলে বিস্তারিত জানা যাবে।

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ সার্কেল) পঙ্কজ কুমার দে সংবাদকর্মীদের জানান, ইশরাত জাহানকে উদ্বার করা হয়েছে। উদ্বারকৃত এলাকায় অভিযুক্তদের আটকের জন্য অভিযান চলমান রয়েছে। পরবর্তীতে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।