ফরিদপুর প্রতিনিধি

  ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

স্বণের দোকানের অ্যাসিডে হুমকিতে জনস্বাস্থ্য 

ফরিদপুর শহরের নীলটুলি স্বর্ণকার পট্টিতে অনিয়ন্ত্রিতভাবে পোড়ানো হচ্ছে নাইট্রিক ও সালফিউরিক এসিড।-প্রতিদিনের সংবাদ

ফরিদপুর শহরের নীলটুলি স্বর্ণকার পট্টিতে দিনেরাতে অনিয়ন্ত্রিতভাবে পোড়ানো হচ্ছে নাইট্রিক ও সালফিউরিক এসিড। শহরের ওই পট্টিতে সড়কের দুই পাশে অনেকগুলো স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল রয়েছে। যেখানে অ্যাসিডের ঝাঁঝালো গন্ধে জনসাধারণের চলাচলে শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন ধরনের রোগের ঝুঁকি বাড়ছে। এমনই অভিযোগ ওই এলাকার বাসিন্দাদের।

জানা গেছে, সোনার গহনা তৈরির জন্য অ্যাসিড ব্যবহারের প্রয়োজন হয়। সোনা থেকে খাদ বের করার জন্য নাইট্রিক অ্যাসিড দিয়ে পোড়াতে হয়। আর গহনার সৌন্দর্য বাড়াতে ব্যবহার করা হয় সালফিউরিক অ্যাসিড। ব্যবহারের সময় এসিড বাতাসে মিশে বিষাক্ত জ্বলীয়বাষ্পে রূপ নেয় এবং তা শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। এতে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, হৃদরোগসহ নানা জটিল রোগ দেখা দেয়। এজন্য আইন অনুযায়ী স্বর্ণের দোকান গুলোতে ২০ ফুট উচু চিমনি ও স্বর্ণ তৈরির নিজস্ব কারখানা থাকতে হবে। কিন্তু সরকারী নিয়মনীতির প্রতি তোয়াক্কা নেই স্বর্ণকারের দোকানগুলোতে।

সরেজমিনে নীলটুলি স্বর্ণকারপট্টি সহ বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, অ্যাসিড পোড়ানোর জন্য আলাদা কক্ষ ও চিমনি ব্যবহার করার বিধান থাকলেও অধিকাংশ দোকানেই সেটি নেই। এসব স্বর্ণের দোকানের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো অনুমতি নেই। ওই এলাকায় অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাটে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কয়েক হাজার কর্মচারী ও দোকান মালিক অবস্থান করেন। তারাও এই দূষণের শিকার। এসিড পোড়ানোর কারণে তাদের শ্বাস কষ্ট সহ বিভিন্ন জটিলতা তৈরি হচ্ছে। নীলটুলি স্বর্ণকার পট্টিতে শতাধিক জুয়েলারি দোকান ছাড়াও শহরের বিভিন্নস্থানে গড়ে ওঠা স্বর্ণকারের দোকানে অবাধে ব্যবহৃত হচ্ছে নাইট্রিক ও সালফিউরিক অ্যাসিড। অ্যাসিড পোড়ানোর নীতিমালা থাকলেও তা কেউ মানছেন না।

ফরিদপুর জর্জ কোর্টের আইনজীবী সেলিমুজ্জামান বলেন, স্বর্ণকারপট্টির এই সড়কে যাতায়াতের সময় এ ধোঁয়ার কারণে পথচারীদের প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল আমীন বাপ্পি জানান, বারবার বলেও কোনো লাভ হয় না। অ্যাসিডের ধোঁয়া পথচারি, বাসাবাড়ি ও বিভিন্ন অফিসের লোকজনের স্বাস্থ্যহানী এবং পরিবেশ দূষণের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক অধ্যক্ষ ডা. জাহাঙ্গীর হোসেন চৌধুরী টিটো জানান, এর প্রভাবে মানুষের শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ ছাড়াও হার্টের সমস্যা হতে পারে। নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইডযুক্ত ভারী গ্যাস সালফিউরিক অ্যাসিড বাতাসের সাহায্যে শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানুষের দেহে প্রবেশ করে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানী, হৃদরোগসহ নানা উপসর্গের জন্ম দিচ্ছে।

এদিকে ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. সিদ্দিকুর রহমান জানান, তিনবার নাইট্রিক অ্যাসিড আর একবার সালফিউরিক অ্যাসিড না মেলালে স্বর্ণের কোনো কাজ তারা করতে পারেনা। তবে এর গ্রহণযোগ্য মাত্রা কতটুকু সেটি বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি এন্ড কর্পোরেশনের পরিচালক বলতে পারবেন।

পরিবেশ অধিদপ্তর ফরিদপুরের উপপরিচালক মো. সাঈদ আনোয়ার জানান, বিষয়টি তেমনভাবে জানা নেই। কেউ অভিযোগও করেনি। তবে এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে সংশ্লিষ্টদের নিয়মের আওতায় আনার জন্য প্রাথমিকভাবে সতর্ক করা হবে।

পিডিএস/এস

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
নাইট্রিক ও সালফিউরিক এসিড,ফরিদপুর,নীলটুলি স্বর্ণকার পট্টি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close