রবিউল ইসলাম, টঙ্গী (গাজীপুর)

  ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

টঙ্গীর ১৫টি ওয়ার্ড

মশায় অতিষ্ঠ টঙ্গীবাসী, নেই কার্যকরী পদক্ষেপ

বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে টঙ্গীর খাপড়া এলাকায় ৯ মাস বয়সী ছেলে হাসিবকে মশার কামর থেকে রক্ষা করতে মশারি টানিয়ে বসেছিল গৃহবধূ হালিমা আক্তার। ছবি: প্রতিদিনের সংবাদ

হালিমা আক্তার (২৪), টঙ্গীর খাঁপাড়া এলাকার আধ-পাকা একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন তিনি। এক সন্তানের এই জননী ৯ মাস বয়সী ছেলে হাসিবকে নিয়ে আছেন দুশ্চিন্তায়। এক দিকে বেড়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ, সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মশার উপদ্রব। সন্তানকে ডেঙ্গু থেকে রক্ষ করতে এখন এই জননী রাত কিংবা দিন সব সময়ই ব্যবহার করেন মশা কিংবা মশা নাশক কয়েল। তবুও মিলছে না মশা থেকে নিস্তার। এতে সন্তানের সুস্থতা নিয়ে দুশ্চিন্তায় এই গৃহবধূ।

শিল্প নগরী গাজীপুরের টঙ্গীতে দিন দিন মশার যন্ত্রণা যেন বেড়েই চলেছে। মশারি টানিয়ে, কয়েল জ্বালিয়ে, ইলেক্ট্রিক ব্যাট কিংবা স্প্রে করেও সুফল মিলছে না। মশার উপদ্রব ভয়াবহ আকার ধারণ করলেও সিটি করপোরেশনের নেই কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ অভিযোগ বাসিন্দাদের।

টঙ্গী অঞ্চলের ১৫টি ওয়ার্ডে মশা নিধনের জন্য উন্নত প্রযুক্তির ফগার মেশিন রয়েছে। তবুও নেই তেমন কোনো কার্যকরী উদ্যোগ। এতে চরম ক্ষুব্ধ নগরবাসী।

সরেজমিনে জানা যায়, নগরীর গাজীপুরা, সাতাইশ, আউচপাড়া, দত্তপাড়া, এরশাদনগর, আরিচপুর, মাছিমপুর, মিরাশপাড়া, ভরান, পাগার শিলমুনসহ বিভিন্ন এলাকার ড্রেন, পুকুর, ডোবা, নালা-নর্দমার কচুরিপানা ও ময়লা পরিষ্কার না করায় সেগুলো এখন মশা উৎপাদনের খামারে পরিণত হয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার নগরীতে মশার উপদ্রব বেশি। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে কিউলেক্স মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ট নগরবাসী। অনেকেই ফ্ল্যাটের জানালায় নেট ব্যবহার করা সত্ত্বেও মশার অত্যাচার থেকে রেহাই পাচ্ছে না। নিচতলা থেকে শুরু করে দশ তলা পর্যন্ত সর্বত্রই মশার সমান উপদ্রব।


  • গত এক সপ্তাহে মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত শতাধিক শিশু ও বৃদ্ধ
  • মশা নিধনে উন্নত প্রযুক্তির ফগার মেশিন রয়েছে
  • দ্রুত মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ করা যাবে বলে আশা করেন সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা

টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, হাসপাতালের আঙিনা ও ভেতরে মশা ভন ভন করছে। কয়েলের ধোঁয়ায় রোগীদের কষ্ট হওয়ায় কয়েলও জ্বালানো যাচ্ছে না। রোগী ও তাদের সঙ্গে থাকা স্বজনরাও মশার যন্ত্রণায় ছটফট করছেন।

হাসপাতালের তথ্য মতে, গত এক সপ্তাহে মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন শতাধিক রোগী। এদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু ও বৃদ্ধ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন মূলত কিউলেক্স মশার উপদ্রব চলছে। স্ত্রী কিউলেক্স মশার মাধ্যমে অসুস্থ ব্যক্তির শরীর থেকে সুস্থ ব্যক্তির শরীরে ফাইলেরিয়া সংক্রমণ হতে পারে। এর কারণে হাত-পা ফুলে যায়, বারবার জ্বর হয়। এছাড়া ম্যালেরিয়া ও চিকনগুনিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে বর্ষা মৌসুমে আশঙ্কাজনকভাবে বাড়তে পারে এডিস মশার উপদ্রব। প্রতি বছর এডিস মশার কারণে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ও মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। তাই বর্ষা মৌসুমের আগেই মশক নিধনে কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে। এছাড়া মশক নিধন কার্যক্রমের পাশাপাশি জনসচেতনতা ও বাড়াতে হবে।

শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমরা নিয়মিত হাসপাতাল ও আশপাশের আঙিনা পরিষ্কার করে রাখি। তবুও মশার উপদ্রব কমছে না। হাসপাতালে রোগীদের জন্য রাতে মশারি দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে সিটি করপোরেশনকে মশক নিধনের ওষুধ ও ফগার মেশিনের জন্য জানিয়েছি। তারা শিগগিরই হাসপাতালে স্প্রে করবেন বলে জানিয়েছে।’

ডা. জাহাঙ্গীর আরো বলেন, শীতের শেষে আবহাওয়া উষ্ণ হতে শুরু করেছে। এ সময় মশা বংশবিস্তার ঘটায়। ফলে মশার উপদ্রব এখন অনেক বেশি। মশার কামড়ে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকনগুনিয়া, গাদসহ নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। বিশেষ করে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। সামনে বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে পারে। তাই মশা নিধনের জন্য সিটি করপোরেশনকে এখন থেকেই ব্যবস্থা নিতে হবে।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (যুগ্ম সচিব) এ এস এম সফিউল আজম এ বিষয়ে বলেন, মশক নিধন কার্যক্রম ইতোমধ্যেই গাজীপুর সিটি করপোরেশন গ্রহণ করেছে। দ্রুত মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

পিডিএস/আরডি

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
গাজীপুর,টঙ্গী
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close