জহির রায়হান, কাউনিয়া (রংপুর)
কাউনিয়ায় সরকারি ধান-চাল সংগ্রহ
লক্ষ্যমাত্রার বেশি উৎপাদনেও সংগ্রহ হয়নি এক মুঠো ধান
রংপুরের কাউনিয়ায় এ মৌসুমে সরকারিভাবে খাদ্যগুদামে আমন ধান সংগ্রহ শূন্যের কোঠায় রয়েছে। এ পর্যন্ত খাদ্য-বিভাগের এক মুঠোও ধান সংগ্রহ হয়নি। ফলে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সেইসঙ্গে চাল সংগ্রহে দেখা দিয়েছে ধীরগতি।
জানা যায়, সরকারিভাবে সংগ্রহ অভিযান শুরু হওয়ার প্রায় ২ মাস অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু এ পর্যন্ত এক ছটাক ধান সংগ্রহ করতে পারেনি খাদ্যগুদাম কর্তৃপক্ষ।
এদিকে খাদ্যগুদামে ধান দিতে অতিরিক্ত পরিবহন খরচ, সঠিকভাবে ধান শুকানো ও পরিষ্কার করা, খাদ্যগুদাম কর্মকর্তার দুর্ব্যবহারসহ বিল উত্তোলনে ঝামেলা, হাট বাজারে ধানের দাম বেশি পাওয়ার কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অনেক কৃষকরা মন্তব্য করেছেন।
উপজেলা খাদ্য-বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত চাল সংগ্রহ হয়েছে ৮১৮ মেট্রিক টন ২৬০ কেজি। ধান চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে গত বছরের নভেম্বর মাসে আর তা শেষ হবে আগামী ২৮ ফ্রেব্রুয়ারি। চলতি আমন ধান-চাল সংগ্রহ মৌসুমে কাউনিয়া খাদ্যগুদামে সরকারিভাবে চাল সংগ্রহের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ১ হাজার ৩০ মেট্রিক টন ৩১০ কেজি। এ ছাড়া ধানের বরাদ্দ রয়েছে ৪১১ মেট্রিক টন। চাল প্রদানে চুক্তিবদ্ধ মিলের সংখ্যা রয়েছে ৩৮টি। তবে উপজেলায় মোট মিলের সংখ্যা ৯২টি। এদিকে গত এক সপ্তাহ ধরে উপজেলার হাটবাজারগুলোতে চালের দাম বাড়ছে।
- খাদ্যগুদামে হয়রানির অভিযোগ
- বাজারে চড়া দামে বিক্রি কৃষকের
- উপজেলায় খাদ্যগুদামে ধান সংগ্রহের জন্য বরাদ্দ ৪১১ টন
- চাল সংগ্রহের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ১ হাজার ৩০ টন ৩১০ কেজি
উপজেলার নিজপাড়া গ্রামের কৃষক প্রহলাদ চন্দ্র জানান, তিনি স্থানীয় বাজারে প্রতি মণ ধান বিক্রি করেছেন ১ হাজার ১৮০ টাকায়। তিনি বলেন, ‘বাজারে ধান বিক্রিতে ঝামেলা নাই, নগদ টাকা পেয়ে পাইকারকে ধান দিয়ে আসি।’
কৃষক প্রহলাদ আরো জানান, বর্তমানে ১ হাজার ১৬০ থেকে ১ হাজার ১৮০ টাকা দরে এক মণ ধান বিক্রি হচ্ছে। গত এক সপ্তাহ ধরে বাজারে ধানের দাম একটু চড়া বলেও জানান তিনি।
উপজেলার এক ধান ব্যবসায়ী দুলু মিয়া বলেন, ‘মৌসুমের শুরুর দিকে প্রতি মণ ধান ৯৮০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০ টাকা পর্যন্ত ধান কিনেছি। বর্তমানে ১ হাজার ৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ৭০ টাকায় কিনছি।’
উপজেলার মিল চাতাল মালিক সমিতির সভাপতি মিনহাজুর রহমান হেনা জানান, বাজারে ধানের দাম বেশি। তারা লাইসেন্স ঠিক রাখতে লস করে গুদামে চাল দিচ্ছেন।
উপজেলার হাটবাজারগুলো ঘুরে জানা গেছে, বড় বড় অটো রাইসমিল মালিকরা মাঠপর্যায়ে পাইকার দিয়ে কমিশনের ভিত্তিতে ধান সংগ্রহ করে তাদের মিলে মজুদ করছে। এ কারণে বাজারে ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় সরকারি গুদামে ধান ও চাল নিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্মকর্তাদের।
উপজেলা কৃষিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে আমন ধানের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদন হয়েছে।
কৃষি কর্মকর্তা শাহানাজ পারভীন জানান, ধানের বাজার মূল্য আর সরকারি মূল্য প্রায় সমান ও গুদামে কিছুটা হয়রানির কারণে কৃষক খাদ্যগুদামে ধান দিতে আগ্রহী হয় না।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা সোহেল আহমেদ জানান, বাজার দর বেশি হলেও চাল সংগ্রহ অভিযান সফল হবে বলে তিনি আশাবাদী। এ ছাড়া গত বোরো মৌসুমে সংগ্রহ অভিযান সফল হয়েছে বলেও জানান তিনি।
পিডিএস/আরডি