ভোলা প্রতিনিধি

  ০৮ ডিসেম্বর, ২০২৩

ভোলায় কেন্দ্রে ঢুকতে পারলো না ৪ পরীক্ষার্থী

টাইম আউটে আটকে গেলো শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

পরীক্ষা শুরু সকাল ১০টায়। কিন্তু সড়কে পরীক্ষাকালীন সময়ে যানজটের কারণে পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হতে সময় লাগে ৯.৪০ মিনিট। ১০ মিনিট দেরি হওয়ায় এবছর সহকারী শিক্ষক নিয়োগের লিখিত (এমসিকিউ) পরীক্ষা দেওয়া হলো ভোলার ৪ পরীক্ষার্থীর। এতে করে ওই পরীক্ষার্থীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ বছরই বয়সের কারণে অনেকরই শেষবারের মতো এই সহকারী শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিলো। এ যেন ক্রিকেটের টাইম আউট এর মতো, অনেকটা পরীক্ষার হল থেকেই আউট হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন ভোলা জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান।

ভোলা চরফ্যাশন উপজেলার নজরুলনগর ইউনিয়ন থেকে সকাল ৬টা ৩০ মিনিটের বাসে রওয়ানা দেন নাজনিন নাহার ঝুমু। লক্ষ্য সহকারী শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় অংশ নিয়ে চাকরি পেয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণ করার। কিন্তু সেই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেলো। পরীক্ষাকালীন সময়ে শহরে হঠাৎ যানজটের কারণে ভোলার সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হতে সময় লাগে ৯টা ৪০ মিনিট। পরীক্ষার হলেও পরীক্ষা দেওয়ার জন্য প্রবেশ করেন। কিন্তু হলে প্রবেশ করার আগেই পরীক্ষা কেন্দ্রর দায়িত্বে থাকা শিক্ষক ও কর্মকর্তারা ১০ মিনিট দেরিতে আসায় তাকে বের করে দেন। এতে করে নাজনীনের আর পরীক্ষা দেওয়া হলো না।

শুধু নাজনিন নয় একই সময় বোরহানউদ্দিনের হাবিবা, জেরিন ও দৌলতখান থেকে পরীক্ষা দিতে আসা লিপি আক্তারকে পরীক্ষা দিতে হলে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। পরে সবাই পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এদের মধ্যে অনেকেরই এবারই শেষ বারের মতো প্রাইমারি পরীক্ষায় অংশ নিতে এসেছিলো। ১০ মিনিটের আক্ষেপ থেকে যাবে তাদের আজীবন।

পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে থাকা অভিভাবক আফজাল হোসেন বলেন, মানবিক কারণে দেরি করে আশা শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নেওয়া সুযোগ দেওয়া উচিত ছিলো। কারণ গ্রামের মেয়েদের এমনিতেই অভিভাবকরা পড়াশোনা করাতে চায়না। অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দেয়। এখন সেখানে যদি মেয়েরা প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিয়ে একটি চাকরি পায় সেক্ষেত্র অন্য মেয়েদের বাল্যবিয়ে থেকে বেঁচে যাওয়া কিংবা স্বামীর বাড়িতে সম্মান কিছুটা বৃদ্ধি পায়। আজকে এই মেয়েদের সঙ্গে যেটা ঘটলো সেটা অমানবিক ঘটনা ঘটছে। এমন ঘটনা হলের দায়িত্বরত স্যারদেরও বোন কিংবা মেয়েদের সঙ্গে যদি এমনটা ঘটতো তাহলে তারা কি করতো?

ভোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা সফিকুল ইসলাম জানায়, চারজন না, দুজন না একজন তা আমাদের দেখার বিষয় না। আমাদের সরকারি নির্দেশনা আছে পরীক্ষা শুরুর ১ ঘণ্টা আগে আসন গ্রহণ করতে হবে এবং সকাল সাড়ে ৯টার পরে ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়া কেউ পরীক্ষার কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবে না, বের হতে পারবে না। সুতরাং কেউ পরীক্ষা দিতে আসছে বের করে দেওয়া হয়েছে এমন কোনো তথ্য নেই বলে জানান তিনি।

এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন ভোলা জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান। তিনি বলেন, মানবিক দিক বিবেচনা করে ২০ মিনিট দেরি করে এলেও শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসার অনুমতি দেওয়া উচিত ছিলো। আমাকে যদি আগে বিষয়টি জানানো হতো, তাহলে কোনো কিছু করা যেত। যেহেতু আমাকে পরে জানানো হয়েছে, সেহেতু এখন আর দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া কিছু করার নেই।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ভোলা জেলার সাতটি উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে প্রায় ৩৫০টি শূন্য পদের বিপরীতে প্রায় ১৬ হাজার চাকরি প্রত্যাশী ৩০টি কেন্দ্রে লিখিত (এমসিকিউ) নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন।

পিডিএস/এএমকে

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
পরীক্ষার্থী,ভোলা,স্বপ্ন ভঙ্গ,শিক্ষক
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close