কোটালীপাড়া (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি
কোটালীপাড়ার রাধাকান্ত উচ্চবিদ্যালয়
সহায়ক-নৈশপ্রহরী পদে পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় একটি বিদ্যালয়ে চারজন কর্মচারী নিয়োগে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির বিরুদ্ধে। উপজেলার কলাবাড়ি ইউনিয়নের রাধাকান্ত উচ্চবিদ্যালয়ের এ ঘটনায় একটি মামলা করেছেন ‘নিয়োগ বঞ্চিতরা’।
মামলায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তপন কুমার বাড়ৈ ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সুনীল কুমার বাড়ৈসহ ৩০ জনকে আসামমি করা হয়েছে। এদের মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজি আছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ৪টি পদে চাকরি দিতে ১৬ জন প্রার্থীর কাছ থেকে কয়েক লাখ করে টাকা নেন প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি। পরে চাকরি না পাওয়ায় রনি বিশ্বাস ও সুদিপ্ত রায় বাদী হয়ে গত ২২ নভেম্বর গোপালগঞ্জ সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা করেন। এতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজি, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা), গোপালগঞ্জের শিক্ষা কর্মকর্তাসহ ৩০ জনকে বিবাদী করা হয়। বিবাদীদের মধ্যে প্রধান শিক্ষক তপন ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সুনীল ছাড়া অন্যরা নিয়োগ প্রক্রিয়া এবং অনুমোদনের সঙ্গে জড়িত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
- মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজিসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা
- নিয়োগ বাতিল করে ঘুষের টাকা ফেরত দেওয়ার ঘোষণা দেন প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি
- দুই সপ্তাহেও নিয়োগ বাতিল ও ঘুষের টাকা ফেরত না দেওয়ায় বাসিন্দাদের হুঁশিয়ারি
এদিকে গত ২৯ নভেম্বর অভিভাবক ও এলাকার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের উপস্থিতে বিদ্যালয়ের হল রুমে সভা হয়। সভায় উল্লেখিত নিয়োগ বাতিল করে ঘুষের টাকা ফেরত দেওয়ার ঘোষণা দেন প্রধান শিক্ষক তপন ও সভাপতি সুনীল। এ সময় লিখিত একটি সভা বিবরণীতে (রেজুলেশন) স্বাক্ষর করেন এ বিষয়ে উপস্থিত ব্যক্তিরা। রেজুলেশনের পর প্রায় দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও নিয়োগ বাতিল ও ঘুষের টাকা ফেরত দেননি তারা। এর জেরে বুধবার (৬ ডিসেম্বর) বিদ্যালয়টির মাঠে জড়ো হয় স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সভার সিদ্ধান্ত কার্যকর না দেওয়া হলে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে তালা, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
জানতে চাইলে ভুক্তভোগী ও মামলার বাদী রনি বিশ্বাস বিদ্যালয়ে অফিস সহায়ক পদে চাকরির আবেদন করেছিরেন। তিনি বলেন, ‘১৬ নভেম্বর নিয়োগ পরীক্ষার আগের রাতে বিদ্যালয়ের উন্নয়নের কথা বলেন প্রধানশিক্ষক ও সভাপতি। আমাকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে আমার কাছ থেকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা নেন তারা। কিন্তু আমাকে চাকরি না দিয়ে কিশোর বিশ্বাস নামে অন্যজনকে চাকরি দিয়েছেন। আমি টাকা ফেরতসহ এই নিয়োগ বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।’
মামলার আরেক বাদী সুদিপ্ত রায় আবেদন করেছিলেন নৈশ প্রহরী পদে। তিনি বলেন, ‘তারা (প্রধানশিক্ষক ও সভাপতি) আমার কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা নেন। আমি জমি বিক্রি করে এই টাকা দিয়েছিলাম। এরা আমাকে চাকরি দেয়নি, টাকাও ফেরত দিচ্ছে না।’
অফিস সহায়ক পদে চাকরি পাওয়া কিশোর বিশ্বাসের কাছে ঘুষ দেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তপন কুমার বাড়ৈ বলেন, ‘কলাবাড়ি ইউনিয়নের অনেক ব্যক্তির সঙ্গেই আমার টাকা-পয়সার লেনদেন আছে। কখন কে কোন কাজে আমাকে টাকা দিয়েছে, তা আমি এই মুহূর্তে বলতে পারব না।’
গোপালগঞ্জ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মুহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম বলেন, ‘রাধাকান্ত উচ্চবিদ্যালয়ের নিয়োগ নিয়ে একটি মামলা হয়েছে বলে শুনেছি। মামলার কপি এখনো হাতে পাইনি। হাতে পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
পিডিএস/আরডি