রাকিবুল ইসলাম, হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ)

  ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৩

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর 

৭৫ বছরে আদি স্বাদের ভরসা নরেনের মিষ্টি

নরেন্দ্রনাথ সরকারের মৃত্যুর পর ব্যবসার হাল ধরেছেন তার বড় ছেলে নরেশচন্দ্র সরকার। ছবি: প্রতিদিনের সংবাদ

শৈশবে বাড়িতে তৈরি মিষ্টি বিভিন্ন বাজারে নিয়ে বিক্রি করতেন নরেন্দ্রনাথ সরকার। এ সময় দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসত তার বাড়ি থেকে মিষ্টি কিনতে। ব্যবসার পরিধি বাড়ায় ঝিটকা বাজারের কড়ইতলায় চাকচিক্যহীন একটি দোকান দেন তিনি। এমনকি নামকরণও করা হয়নি প্রতিষ্ঠাটির। তবে প্রায় ৭৫ বছরের ঐতিহ্যে মানিকগঞ্জের হরিরামপুরবাসীর কাছে প্রতিষ্ঠানটি এখনো ‘নরেনের মিষ্টি’ নামেই পরিচিত।

গত শতকের পঞ্চাশের দশ থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে মিষ্টি বলতে একমাত্র ভরসা হয়ে উঠে উপজেলার ঝিটকা বাজারে নরেনের মিষ্টির দোকান। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি ‘প্রণয় সুইটস’ নামকরণ হলেও নরেনের মিষ্টি নামেই সবাই চেনে।

নরেন্দ্রনাথ সরকারের জন্ম উপজেলার গালা ইউনিয়নের বেড়ী ধুসরিয়া গ্রামে। শুরুতে বাড়িতে তৈরি মিষ্টির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ঝিটকা বাজারের কড়ইতলায় একটি দোকান দেন তিনি। তখন এর নামকরণ না হওয়া লোকমুখে এটি ‘নরেনের মিষ্টি’ বলে পরিচিত পায়। সেই নামেই এখনো পরিচিত প্রতিষ্ঠানটি। সে সময়ের দূর-দূরান্তরে নামজাদা লোকজনও নরেনের মিষ্টি খাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকতেন। ২০১৫ সালে (১৪২২ বঙ্গাব্দের ২৪ ভাদ্র) নরেন্দ্রনাথ সরকারের মৃত্যুর পর তা ৪ সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে নরেশচন্দ্র সরকার ব্যবসার হাল ধরেন।

১২ বছর বয়স থেকেই বাবার সঙ্গে মিষ্টি ব্যবাসায় সহযোগীতা করতেন নরেশ চন্দ্র সরকার (৬০)। সেই স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পরেন তিনি। নরেশচন্দ্র বলেন, এক সময় আধুনিক সুযোগ-সুবিধা না থাকায় পদ্মপাতায় মিষ্টি পরিবেশন করা হতো। দূর-দূরান্তে নিয়ে যাওয়ার জন্য ছিল মাটির তৈরি হাঁড়ি। উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় নরেনের মিষ্টি বলেই পরিচিত ছিল। সততা ও পরিশ্রমে তিল তিল করে গড়ে তোলা এ ব্যবসাটি উপজেলার সব শ্রেণির মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে।

সময়ের প্রয়োজনে নরেনের মিষ্টির দোকানের নামকরণ হয়েছে ‘প্রণয় সুইটস’। তবে তা কাগজপত্রে আটক আছে। সবার কাছে এটি নরেনের মিষ্টির দোকান হিসেবেই পরিচিত। দোকানের বাইরে এখনো তেমন চাকচিক্য নেই, তবে ঝিটকা এলাকার সবার কাছে পৌনে একশ বছরের মিষ্টির স্বাদ বিলিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। ওই এলাকার প্রায় ‘আদি’ এই মিষ্টির দোকানে হাতে তৈরি গাওয়া-ঘি অত্যন্ত জনপ্রিয়। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি পাওয়া যায় এখানে।

সরেজমিনে জানা গেছে, শুরু থেকে আদি স্বাদ ধরে রেখেছে নরেনের মিষ্টি। দামেও সস্তা। অন্যান্য জায়গায় মিষ্টির দাম বাড়লে প্রনয় সুইটসে দাম তুলনা মূলক কমই নির্ধারণ করা হয়ে। স্বাদ ও দামের কারণেও ঝিটকা অঞ্চলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের এই দোকানের মিষ্টির চাহিদা সব চেয়ে বেশি।

প্রণয় মিষ্টির দোকানো প্রতি কেজি রসগোল্লা ২০০ টাকা, কালাইয়ের আমের্তি ২০০, কালোজাম ২২০, চমচম ২২০, জিলাপা ১৫০, লাড্ডু ২২০, সন্দেস ৩০০ ও দই ১৫০ টাকা। এছাড়া সাকলে পাওয়া যায় ‘থাপড়ানো’ রুটি, কেজি ১৮০ টাকা।

মিষ্টি তৈরি ও বিক্রিতে বাবা নরেন্দ্রনাথ সরকারের কাছ থেকে পাওয়ার সততার শিক্ষা ধরে রাখতে চান নরেশ চন্দ্র সরকার। নরেনের মিষ্টির আদি স্বাদ ও ব্যবসায়িক সুনাম আরো বহুদিন যেন টিকে থাকে, সেই স্বপ্ন দেখেন তিনি।

পিডিএস/আরডি

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মানিকগঞ্জ,হরিরামপুর,নরেনের মিষ্টি,ঝিটকা বাজার
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close