ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি

  ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৩

হরতাল-অবরোধ

ঈশ্বরদীতে সাড়ে ৫০০ পরিবহন মালিক-শ্রমিকের মানবেতর জীবন

ছবি: প্রতিদিনের সংবাদ

দেশে হরতাল-অবরোধ অব্যাহত থাকায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে ঈশ্বরদীর সাড়ে ৫০০ পরিবহন মালিক ও শ্রমিক মানবেতর জীবনযাপন করছে। এ যেন কারো চোখেই পড়ছে না। এখানে যেন কারো কিছু করার নেই।

প্রায় দেড় মাস হরতাল-অবরোধের নামে জ¦ালাও-পোড়াও, অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতার ভয়ে উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন হারানোর ভয়ে মালিকেরা তার গাড়ি রাস্তায় বের করতে দিচ্ছে না। আবার এই পরিবহনের সঙ্গে জড়িত শত শত চালক, চালকের সহকারী ও শ্রমিকেরা জীবন হারানোর ভয়ে গাড়িতে যাচ্ছে না। এর ফলে দিনের পর দিন গাড়ি না চালানো ও পড়ে থাকার কারণে একদিকে যেমন পরিবহন মালিকরা তাদের গাড়ির যন্ত্রাংশ টায়ার, ব্রেকওযেল, বাকেট, গাসকেট, বিয়ারিংসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অপরদিকে, চালক, চালকের সহকারী ও শ্রমিকেরা কর্ম হারিয়ে বেকার হয়ে পরিবার পরিজনসহ মানবেতর জীবন যাপন করছে। অভিজ্ঞতা না থাকায় জীবন বাঁচাতে হুট করে পেশা পরির্তন করে অন্য পেশা ধরতেও পারছে না তারা। মালিকেরা না পারছে গাড়ি বের করতে, না পারছে অন্য কোনো কাজে আত্মনিয়োগ করে জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করতে।

সরেজমিনে ঈশ্বরদী খাইরুজ্জামান বাবু বাসটার্মিনাল এলাকায় দেখা যায়, গাড়ির দীর্ঘ সারি ধূলাবালি ও গাছের পাতায় ছেয়ে আছে। এ ছাড়াও, অনেক গাড়ির মালিক হরতাল-অবরোধে সহিংসতার ভয়ে বাড়িতেই রেখেছেন গাড়ি। সেখানেও অযত্ন আর অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে গাড়ির যন্ত্রাংশ টায়ার, ব্রেকওযেল, বাকেট, গাসকেট, বিয়ারিং, সিট, রং। এসব যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা।


  • চালক, চালকের সহকারী ও শ্রমিকেরা জীবন হারানোর ভয়ে গাড়িতে যাচ্ছে না
  • হুট করে অন্য পেশাও ধরতে পারছে না তারা
  • আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবহন মালিকেরা
  • নির্বাচন এলে এই অবস্থা আরো প্রকট আকার ধারণ করে অভিযোগ পরিবহন সংশ্লিষ্টদের

অগ্রদূতের মালিক রতন, অমি ট্রাভেলসের মালিক বিমল, ইসলাম গাড়ির মালিক হামিদুর জানান, শুধু ঈশ্বরদীতেই তাদের মতো দেড় শতাধিক গাড়ির মালিক হওয়া সত্ত্বেও পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন যাপন করছেন। অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে গাড়ির যন্ত্রাংশ। এসব যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন মালিকরা।

গাড়ির চেইন মাস্টার জাহিদ, নুহু, নূর, হাসান, অগ্রদূত ও অমি গাড়ির চালক রায়হান, রকিব, জাহিদুল, দিলু, মকলেস ও চালকের সহকারী মনির, তছলিম, মিন্টু জানান, ক্ষমতার মোহে রাজনৈতিক নেতাদের টানাপোড়নে তাদের মতো যারা ব্যবসা-বাণিজ্য ও কাজ করে খায়, তাদের জীবন চালানো একেবারেই অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এ দেশের কোনো সরকার বা রাজনৈতিক দল তাদের কথা ভাবে না। শুধু হরতাল-অবরোধের নামে দেশ ধ্বংস করার জন্য এসি রুমে বসে কর্মসূচি ঘোষণা করে জীবনকে দুর্বিসহ করে তোলে। ৫ বছর পর পর নির্বাচন এলে এই অবস্থা আরো প্রকট আকার ধারণ করে। কাজেই কোটি কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পদ, জনগনের জানমাল ও দেশের অর্থনীতিকে রক্ষা করতে হলে সরকারকে সব দলের সঙ্গে বসে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য সমঝোতার পথ খুঁজে বের করা উচিত। এভাবে একটি দেশ চলতে পারে না, চলতে দেওয়া ঠিক না।

ঈশ্বরদী বাস-ট্রাক মালিক-শ্রমিক সমিতির সভাপতি আলতাফ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক দুদু মিয়া জানান, তাদের কষ্টের কথা কেউ জানে না, শোনে না, মানে না। কেউ লিখতেও চায় না। বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বাজারে তাদের জীবন থমকে গেছে। কোনোভাবেই চলছে না, আর পারছেন না তারা। এ অবস্থা থেকে দ্রুত মুক্তি চান বলেও জানান তিনি।

পিডিএস/জেডকে

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
পাবনা,ঈশ্বরদী,হরতাল,অবরোধ,গাড়ি,চালক,মালিক
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close