রকিবুল হাসান বিশ্বাস, সিংগাইর (মানিকগঞ্জ)

  ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৩

সিংগাইরের চান্দহর

তথ্য গোপন করে অন্যের জমিতে আশ্রয়ণের ঘর

ছবি: সংগৃহীত

মানিকগঞ্জের সিংগাইরে তথ্য গোপন করে অন্যের জমিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। জেলা পরিষদের মাধ্যমে নির্মিত ওই ঘরে এখন বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তি বসবাস করছেন না।

জানা গেছে, জেলা পরিষদের তৎকালীন সংরক্ষিত সদস্য ফুপুর মাধ্যমে বোনের জন্য ওই ঘরের আবেদন করেন মিজান মাস্টার। তিনি সিংগাইর উপজেলার চান্দহর ইউনিয়নের চর ফতেপুর গ্রামের তাজ উদ্দিনের ছেলে।

এদিকে বেদখল জমির প্রকৃত মালিক রফিক কারিকর। তিনি জেলার পার্শ্ববর্তী ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার শোল্লা ইউনিয়নের চুকোরিয়া গ্রামে বাস করেন। প্রতারণার বিষয়টি জানাজানির পর এলাকায় বিরূপ আলোচনা শুরু হয়।

ফতেপুর গ্রামে গিয়ে জানা গেছে, জেলা পরিষদের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরটি ওই গ্রামের সেলিনা বেগমের নামে বরাদ্দ হয়। তার ভাই মিজান মাস্টার উপজেলার ফতেপুর মৌজায় অন্যের জমিকে চলমান বিডিএস (বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভে) পর্চা করে নিজের নামে দলিল করেন। পরে সরকারি বরাদ্দপ্রাপ্ত ঘরটি ওই জায়গায় নির্মাণ করেন। এতে অর্থ বরাদ্দ ও নির্মাণে সহায়তা করেন তাদের ফুফু জেলা পরিষদের সংরক্ষিত সাবেক নারী সদস্য শোভা রহমান।


  • জেলা পরিষদের সদস্য ফুপুর মাধ্যমে বোনের জন্য ঘরের আবেদন করেন মিজান মাস্টার।
  • পৈতৃক সম্পদের অংশের বদলে বোনকে দেওয়ার জন্য বিডিএস পর্চায় অন্যের জমি নিজের দাবি।
  • উপজেলা ভূমি কার্যালয় ও জেলা রেকর্ড কক্ষে খোঁজ নিয়ে ‘১৭৭৭৭ নম্বর’ দলিলটির কোনো অস্তিত্ব মেলেনি।

জানতে চাইলে জমির প্রকৃত মালিক রফিক কারিকর বলেন, ‘সরকারের সিএস, এসএ এবং আরএস রেকর্ড অনুযায়ী, পৈতৃক ওয়ারিশ সূত্রে ওই জমির মালিক আমি। আমার পরিবার এই এলাকায় না থাকার সুযোগে মিজান মাস্টার বিডিএস জরিপে নিজের দাবি করেন। পরে বোনের নামে সরকারি ঘর বরাদ্দ এনে ওই জায়গায় নির্মাণ করেন।’

ফতেপুর গ্রামের বাসিন্দা কহিনুর ইসলাম, জাহাঙ্গীর হোসেনসহ কয়েকজন জানান, জেলা পরিষদের বরাদ্দ পাওয়া ওই ঘরটি নির্মাণের পর থেকে কেউ থাকে না। প্রকৃত মালিকদের না জানিয়ে জায়গাটি নিজের নামে করে নেওয়ার জন্য সেখানে বোনের নামে বরাদ্দপ্রাপ্ত ঘরটি নির্মাণ করে দখলে নেন মিজান মাস্টার।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আরএস জরিপের দুটি দাগের ৪১ শতাংশ জমির প্রকৃত মালিক রফিক কারিকর ও তার বোন সাফিয়া বেগম। কিন্তু স্বাধীনতার পর একটি (১৭৭৭৭ নম্বর) দলিল দেখিয়ে বিভিন্ন সময় একাধিক ব্যক্তি জমির মালিকানা দাবি করে অন্যের কাছে হস্তান্তর করেন। সর্বশেষ জমিটি স্থানীয় এলাহী, আমোদ আলী, নজরুল ইসলাম ও হুকুম মোল্লা দাবি করছেন। সর্বশেষ ক্রয় সূত্রে জমির মালিকানা দাবি করছেন মিজান মাস্টার। এ নিয়ে পৈতৃক সূত্রে মালিক রফিক কারিকর ও তার বোনের সঙ্গে তাদের দ্বন্দ্ব চলছে। তবে উপজেলা ভূমি কার্যালয় ও জেলা রেকর্ড কক্ষে খোঁজ নিয়ে ‘১৭৭৭৭ নম্বর’ দলিলটির কোনো অস্তিত্ব মেলেনি। জানতে চাইলে অন্যের জায়গা দখলের বিষয়টি অস্বীকার করেন মিজান মাস্টার। তিনি বলেন, ‘আমি আলী মুনছের ও আনোয়ার হোসেনের কাছ থেকে সাড়ে ১৩ শতাংশ জমি বায়নাসূত্রে মালিক। পরে বোনের নামে বরাদ্দকৃত ঘরটি সেখানে নির্মাণ করে দিয়েছি।’

চান্দহর ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারি কর্মকর্তা এ কে এম আব্দুছ ছালাম বলেন, ‘ঘরটি জেলা পরিষদ থেকে দেওয়া হয়েছিল। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না।’

জেলা পরিষদের সাবেক সংরক্ষিত নারী সদস্য শোভা রহমান বলেন, পৈতৃক জমির বদলে বোনের অংশটি অন্য জায়গা থেকে ক্রয় করে দিবে বলেন মিজান মাস্টার। এ জন্য ওই জায়গাটি দেখানো হয়েছিল। সেই সঙ্গে একটি দলিলও দেখিয়েছিলেন তিনি। এ কারণে সেখানে জেলা পরিষদের বরাদ্দে আশ্রয়নের ঘরটি নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দিপন দেবনাথ বলেন, ‘জেলা পরিষদ থেকে ঘর বরাদ্দের বিষয়টি আমার জানা নেই।’

পিডিএস/আরডি

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মানিকগঞ্জ,সিংগাইর,আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর,অভিযোগ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close