রংপুর ব্যুরো

  ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৩

রংপুরে আ.লীগ প্রার্থী-স্বতন্ত্র প্রার্থীর বাগবিতণ্ডা

ছবি: প্রতিদিনের সংবাদ

রংপুরে যাছাই-বাছাইয়ের সময় তুমুল তর্ক-বিতর্কে জড়ালেন রংপুর-৫ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রাশেক রহমান ও আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী জাকির হোসেন সরকার। এ সময় উভয়ে আঙ্গুল তুলে বাগবিতণ্ডায় জড়ান। ঘটনার সময় নির্বাচন কর্মকর্তাকে রাশেক রহমান প্রশ্ন করেন, কতদিন থেকে নির্বাচন কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন।

রবিবার (৩ ডিসেম্বর) রংপুর-৫ আসনে যাছাই-বাছাইয়ের সময় রংপুর রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ডিসির সম্মেলন কক্ষে এই তর্কে জড়ান তারা। আসনটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হিসেবে স্বতন্ত্র প্রার্থী সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সরকারের মনোনয়নপত্রে একটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন হওয়া মামলার এজাহার, চূড়ান্ত প্রতিবেদন ও রায়ের তথ্যে অমিল থাকায় স্থগিত ঘোষণা দিলে জাকিরের সমর্থক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শামীমা আক্তার জেসমিন বলেন, যে মামলার কোনো অস্তিত্ব নাই, সেই মামলায় মনোনয়নপত্র স্থগিতের বিষয়টি সঠিক নয়। তখন আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী রাশেক রহমান বলে উঠেন ‘এখানে নির্বাচনের প্রার্থী, সমর্থক, প্রস্তাবক ছাড়া আর কারো কোনো কথা বলার রাইট নাই। কিন্তু এত বড় কথা বলার উনি কে।

এরপর তিনি ওই নারীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি কে, আপনি কি ওনার প্রস্তাবক। এ সময় বিদ্রোহী প্রার্থী জাকির হোসেন তেড়ে উঠে বলেন, আপনার সঙ্গে এরা কারা। তখন রাশেক রহমান বলেন, ওনারা আমার সমর্থক। তখন জাকির হোসেন আঙ্গুল তুলে বলেন, রাশেক রহমানকে আনোয়ার সাদাত সম্পর্কে স্মরণ করিয়ে দেন। তখন রিটার্নিং কর্মকর্তা মোবাশ্বের হাসান মাইক নিয়ে বলতে থাকেন, আমার কোনো আদেশ, কোনো উদ্যোগ যদি পছন্দ না হয়, তাহলে আপনারা আপিল করতে পারবেন। কিন্তু এখানে তর্কে জড়ানো যাবে না। কোনো অসুবিধা নাই।

এরপর জাকির হোসেন মাইকে ডিসিকে লক্ষ করে বলেন, কোনো মামলায় যদি আমার নাম, গ্রাম, বাবার নামে বিভ্রাট থাকে। ওই মামলাটি খালাস হয়েছে। ২০০১ সালে। এরপরে আমি চারটি নির্বাচন করেছি। আমার মনে হয় না যে, এটা স্থগিত করা ঠিক হবে। আপনি দয়া করে এটি বিবেচনা করবেন। পরে ডিসি বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন।

এ সময় রাশেক রহমান জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার ওপর আঙ্গুল তুলে কথা বলেন। সেখানে তর্কাতর্কি শুরু হয়। পরে রিটার্নিং কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এ সময় রাশেক রহমান নির্বাচন কর্মকর্তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, জেলা নির্বাচন অফিসারের কন্ডাক্ট ঠিক নাই। আমরা মনে করতেছি এটা ত্রুটি। ভবিষ্যতে আমরা যা চাইবো, সময়মতো আমাদের দিতে হবে।

জবাবে নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, আপনি যে বিষয়ে প্রশ্ন করেছেন সেটা হলো প্রার্থীর হলফনামা। প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার পর আইন অনুযায়ী তা প্রকাশ করা হবে। এরপর রাশেক রহমান নির্বাচন কর্মকর্তাকে বলেন, আমি আমার ক্ষুদ্র জীবনে ৮টা সংসদ নির্বাচন দেখেছি। আমি জানি না কতদিন ধরে আপনি জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, আমি ২০১১ সাল থেকে নির্বাচন অফিসার হিসেবে আছি। প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার পর হলফনামা প্রকাশ করবো।

এরপর রিটানিং কর্মকর্তা বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশন থেকে রিটানিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা তদন্ত করবেন। তিনি যার কাছ থেকে তথ্য পান সেখান থেকে নিয়ে আসবেন। এই তথ্যের জন্য যদি তাকে জেলায় আসতে হয়, সেখানে তাকে সহযোগিতা করা হবে।

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বের হয়ে রাশেক রহমান অভিযোগ করেন, জাকির হোসেন ওনার বাবার না স্বীকার করছেন না। আর জাকির হোসেন বলেন, মামলায় বাবার নাম ভুল দেয়া থাকলে সেটা আমি স্বীকার করবো কেন।

স্থগিত হওয়া প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জাকির হোসেন সরকার জানান, মামলাটির রায় হয়ে গেছে। এখানে ঠিকানা ভুল আছে। বিষয়টি তদন্তের আদেশ দিয়েছেন। আশা করি, আমি সঠিক তদন্তে বৈধ প্রার্থী হবো। আমাকে হয়রানি এবং মানসিকভাবে পর্যুদস্থ যেন করা না হয়।

রিটার্নিং কর্মকর্তা মোবাশ্বের হাসান জানিয়েছেন, জাকির হোসেন সরকারের দেওয়া তথ্যে একটি মামলা নিস্পত্তির কথা বলা হয়েছে। কিন্তু দেখা গেছে, ২০০১ সালের মামলার এজাহার, চার্জশিট ও রায়ে নামের মিল না থাকায় বিষয়টি যাছাই-বাছাই করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর আব্দুল ওয়াদুদ চিকিৎসার জন্য ভারতে আছেন। তার দাখিল করা একটি কাগজে সই না থাকায় সেটি স্থগিত করা হয়েছে। এটির সমাধান হলে তাদের মনোনয়ন বৈধ হবে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন রংপুর মহানগর সভাপতি ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তার সম্মেলন কক্ষে যাছাই-বাছাইয়ে দুই প্রার্থীর উত্তেজনা এবং নির্বাচন কর্মকর্তাকে কটাক্ষ করে কথা বলার বিষয়টি নির্বাচনী বিধিমালাকে চ্যালেঞ্জ করা। কারণ এতে নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে খারাপ ম্যাসেজ যায়। এ ঘটনায় আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা না নিলে পরিণাম ভালো হবে না।

পিডিএস/জেডকে

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রংপুর,আওয়ামী লীগ,সতন্ত্র,প্রার্থী,যাচাই-বাছাই
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close