নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৮ নভেম্বর, ২০২৩

স্বস্তি কাড়ছে স্বতন্ত্র

নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী ঘরের ‘ডামি’

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নেই। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সামনে মাঠ আপাত ফাঁকা থাকলেও তারা শঙ্কামুক্ত নয়। বিএনপিশূন্য নির্বাচনের মাঠে তাদের সামনে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী। এই স্বতন্ত্র প্রার্থীর অধিকাংশই আবার খোদ আওয়ামী লীগেরই নেতৃত্ব পর্যায়ের ব্যক্তিত্ব। মাঠ পর্যায়ে এদের অনেকেরই রয়েছে ব্যাপক সমর্থন। অনেকে মনে করছেন, বিএনপি-জামায়াতসহ আওয়ামী লীগবিরোধী ভোটের বেশির ভাগই যাবে এই স্বতন্ত্র প্রার্থীর ঝুলিতে। নৌকার প্রার্থীর স্বস্তি কেড়ে নিচ্ছে স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই।

এদিকে, গত রবিবার প্রার্থীদের নাম ঘোষণার আগে গণভবনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ পাস করে আসতে পারবেন না। প্রত্যেক প্রার্থীকেই একজন করে দলীয় ডামি প্রার্থী রাখতে হবে। দলীয় প্রতীকের প্রার্থীর পাশাপাশি দলের যেকোনো নেতা বা ব্যক্তি স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবেন। কারণ নির্বাচনকে প্রতিযোগিতামূলক করতে হবে।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সোমবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীর অনুমতি দলের প্রয়োজনে কৌশলগত সিদ্ধান্ত।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, প্রতি আসনে ডামি প্রার্থী রাখার বিষয়ে দলের হাইকমান্ডের ইতিবাচক মনোভাবের কারণে ভোটের মাঠে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিতরা। এরইমধ্যে তাদের মধ্যে দুই ডজন বর্তমান এমপি স্বতন্ত্র লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন। এর বাইরেও দলের অনেক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ইসি থেকে মনোনয়নপত্র কিনতে শুরু করেছেন। দীর্ঘদিন এলাকায় আধিপত্য ধরে রাখা এমপিদের বিরুদ্ধে লড়তে ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। দেশের প্রায় প্রতিটি আসনেই এমন পরিস্থিতি লক্ষ করা যাচ্ছে। ফলে প্রধান প্রতিপক্ষ মাঠে না থাকায় এবার নৌকার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ঘরের ‘ডামি’ প্রার্থীরাই।

অন্যদিকে, ১৪ দলীয় জোট শরিকদের আসন ছাড় দেওয়ার প্রশ্নে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির বিষয়টি সমন্বয় করা হবে। তিনি বলেছেন, ৩০০ আসনেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী থাকবে। তবে সমঝোতা হলে জোটের শরিকদের কিছু আসন ছেড়ে দেওয়া হবে। ১৭ ডিসেম্বর মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। এর মধ্যে আমরা পর্যবেক্ষণ করব, সমন্বয় করব। এর মধ্যে সবকিছু ফাইনাল করা হবে।

জানা গেছে, ১৪ দলীয় জোটগতভাবেই নির্বাচন করার ঘোষণা ছিল আওয়ামী লীগের। এছাড়ারাজনৈতিক মিত্র জাতীয় পার্টিসহ আরো বেশ কিছু দল ও ব্যক্তিকে আসন ছাড় দেওয়ার আলোচনাও আছে। সুতরাং নৌকার মনোনয়ন পাওয়ার পরও শরিকদের ছাড় দেওয়ার আলোচনা তাদের অনেকের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। বিএনপিশূন্য মাঠে নির্বাচন করাটা নৌকা মার্কার প্রার্থীরা যতটা সহজ মনে করা হয়েছিল, বাস্তবে ততটা সহজ মনে করছেন না তাদের অনেকে।

এরইমধ্যে রাজশাহী-১ আসনে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির মনোনয়নপত্র তোলা হয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা-৫ আসনের সংসদ-সদস্য প্রয়াত হাবিবুর রহমান মোল্লার বড় ছেলে ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মোল্লা সজল। নাটোর-১ আসনে সাবেক সংসদসদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ, কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসন থেকে সাবেক সংসদসদস্য রেজাউল হক চৌধুরী, কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনের সাবেক সংসদসদস্য আবদুর রউফ ও কুষ্টিয়া-১ (সদর) আসনে পৌর মেয়র আনোয়ার আলীর ছেলে পারভেজ আনোয়ার তনু মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। বাগেরহাট-৩ (রামপাল-মোংলা) আসন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন নায়ক শাকিল খান। একই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেনোওয়েল সরকার ও বাগেরহাট-৪ আসনে মালয়েশিয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি এমআর জামিল হোসাইন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন।

কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পাঁচজন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে বুড়িচং উপজেলা থেকে চার ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা থেকে একজন রয়েছেন। ময়মনসিংহ-১ (হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন হালুয়াঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক সায়েম। সরিষাবাড়ী (জামালপুর) থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও ঢাকার তেজগাঁও থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ আবদুর রশীদ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য অ্যাডভোকেট শহীদুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ-২ সিংগাইর উপজেলা পরিষদের দুবারের চেয়ারম্যান মুশফিকুর রহমান খান হান্নান, জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ শিল্পপতি দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলু স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন।

এ ছাড়া সাবেক সংসদসদস্য সামসুদ্দিন আহমেদের ছেলে ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সাহাবুদ্দিন আহমেদ চঞ্চল, হরিরামপুরের উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক দেওয়ান সাইদুর রহমান, মানিকগঞ্জ-১ (শিবালয়-ঘিওর-দৌলতপুর) আসনে জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সালাউদ্দিন মাহমুদ (এসএম জাহিদ) স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। গাজীপুর-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন গাজীপুর মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সাইফুল ইসলাম, গাজীপুর-১ আসনে কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাসেল ও নুরে আলম সিদ্দিকী। ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) থেকে সদ্য পদত্যাগ করা ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত অ্যাডভোকেট জাহিদুল ইসলাম ও ব্যবসায়ী জালাল আহমেদের পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে।

নেত্রকোনা-৪ আসনে নব্বইয়ের অন্যতম সাবেক ছাত্রনেতা শফী আহমেদ, নেত্রকোনা-২ (সদর-বারহাট্টা) আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামছুর রহমান লিটন ও সাবেক উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। নেত্রকোনা-১ (কলমাকান্দা-দুর্গাপুর) আসনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন সদ্য পদত্যাগকারী দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জান্নাতুল ফেরদৌস আরা ঝুমা তালুকদার। কাউখালীতে পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহিউদ্দিন মহারাজ, সুনামগঞ্জ-১ আসনে সুনামগঞ্জ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য, জেলা শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি সেলিম আহমদ স্বতন্ত্র প্রার্থীহওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

পিডিএস/এএমকে

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
স্বস্তি কাড়ছে স্বতন্ত্র,নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী,দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close