মো. শাফায়েত হোসেন, বান্দরবান

  ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

চোরাই বার্মিজ গরু বৈধ করার নিরাপদ স্থান নাইক্ষ্যংছড়ি-আলীকদম

নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে আসা অবৈধ গরু। ফাইল ছবি

বান্দরবানে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকার গহীন অরণ্য এখন অবৈধ বার্মিজ গরু রাখার নিরাপদ স্থান। সম্প্রতি আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় কৌশল পাল্টেছে চোরাকারবারীরা। এবার তারা ভেটেরিনারি বিভাগ থেকে বৈধতা নিয়ে খামার গড়ে তুলছে। চোরাই বার্মিজ গরু এনে খামারে রেখে বৈধ বলে চালিয়ে দিচ্ছে।

চলতি অর্থবছরে বান্দরবানে তিন ক্যাটাগরিতে অন্তত ৩১টি গবাদি পশুর খামারের অনুমোদন দিয়েছে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ। বার্মিজ গরু পাচারের নিরাপদ এলাকাগুলোতে তড়িঘড়ি করে এসব খামারের জন্য সুপারিশ করেছে উপজেলা ভেটেরিনারি দপ্তর। তবে ‘তড়িঘড়ি করে খামার অনুমোদন’ বিষয়টি অস্বীকার করে বান্দরবান জেলা ভেটেরিনারি কর্মকর্তা পলাশ কান্তি চাকমা বলেন, দুধ, ডিম ও মাংসের চাহিদা পূরণের জন্য নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় খামার অনুমোদন দেওয়া হয়। খামারে অবৈধ কোন কাজ করলে অবশ্যই আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবস্থা নেবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত অনুমোদন দেওয়া খামারগুলোর মধ্যে অধিকাংশ নাইক্ষ্যংছড়ি ও আলীকদম উপজেলায়। চলতি মাসে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় গরু মোটাতাজাকরণ খামারের অনুমোদন নিয়েছেন বাইশারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম। মেসার্স আলম গবাদিপশু খামার নামে তিনি উত্তর বাইশারী এলাকায় খামারটি করেছেন।

ভেটেরিনারি বিভাগের দেয়া তথ্যমতে তার খামারে ১৪০টি দেশিয় গবাদিপশু রয়েছে। এছাড়া করলিয়ামুরা এলাকায় মেসার্স আবুল কালাম ফার্মের অনুমতি নিয়েছেন সাবেক ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি আবুল কালাম। তার খামারে ১২৮টি গরু থাকার তথ্য দিয়েছেন। কাগজিখোলা এলাকায় মেসার্স সুলতান গবাদিপশু খামার অনুমোদন নিয়েছেন মো. ইব্রাহিম। তার খামারে ৫০টি এবং সোনাইছড়ি ইউনিয়নের জারুলিয়াছড়ি এলাকার মৌজা হেডম্যান মংওয়াইন মারমা মেসার্স প্যারেন্ট ফার্ম নামে অনুমোদন নিয়েছেন। বর্তমানে তার খামারে ৫০টি গবাদি পশু রয়েছে বলে তথ্য দিয়েছেন।

এদিকে নতুন গড়ে উঠা খামারের বিষয়ে বাইশারী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সাদেক হোসেন ও আবু তাহেরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, তাদের এলাকায় খামারগুলোতে ৮-১০টির মত গরু রয়েছে।

অন্যদিকে স্থানীয়রা জানান, মিয়ানমার থেকে আনা চোরাই গরু কৌশলে রাখার জন্য মূলত খামারগুলো গড়ে তোলা হয়েছে। বিভিন্ন সময় নিরাপত্তা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে খামারগুলোতে বার্মিজ গরু আনা-নেওয়া হয়। দিনে একরকম গরু দেখা গেলেও পরের দিন তা দেখা যায় না। নাইক্ষ্যংছড়ি ও আলীকদম দুই উপজেলার সীমান্ত দিয়ে গত তিন মাসের অধিক সময় ধরে মিয়ানমার থেকে অবৈধ বার্মিজ গরু পাচার বেড়েছে। গরুর আড়ালে একটি সিন্ডিকেট মাদকও নিয়ে আসছে। বিশেষ করে আলীকদম-দোছড়ি-বাইশারী এবং নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার আশারতলী-কম্বনিয়া-ফুলতলী, জারুলিয়াছড়ি সীমান্তে প্রতিদিন বার্মিজ গরুর সঙ্গে পাচার হচ্ছে মাদক।

সম্প্রতি আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবি কর্তৃক আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তা স্বীকার করেন বিজিবির কর্মকর্তারা।

নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারী, আশারতলী, কম্বনিয়া ও আলীকদম সদরে সরেজমিনে গেলে স্থানীয়রা জানান, কিছু জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের ব্যক্তিদের কাছের মানুষগুলো হঠাৎ করেই খামার গড়ে তোলায় এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তারা জানান, চোরাকারবারীরা মিয়ানমার থেকে আনা চোরাই গরু পাহাড়ে এবং খামারে মজুদ করে। পরবর্তী সময়ে বাজার ইজারাদারের কাছ থেকে রশিদ সংগ্রহ করে খামারির গরু পরিচয় দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করে থাকে।

সচেতন মহলের মতে, আপাতদৃষ্টিতে গরু ব্যবসায় স্থানীয় এক শ্রেণি উপকৃত হলেও বিপরীতে সরকার মোটা অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে গরু ব্যবসার আড়ালে মাদকের চালানও ছড়িয়ে পড়ছে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
চোরাই বার্মিজ গরু,বান্দরবান,বার্মিজ গরু,চোরাকারবারী
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close