সাজাদুল ইসলাম, উলিপুর (কুড়িগ্রাম)

  ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২

পাউবোর অপরিকল্পিত স্লুইস গেট, সুদিন আনেনি তিস্তা পাড়ের মানুষের জীবনে 

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

কুড়িগ্রামের উলিপুরে পাউবোর ২৩ বছর আগে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত স্লুইস গেটটি ভাগ্যে বদলাতে পারেনি। তিস্তা পাড়ের মানুষের জীবনে আনতে পারেনি সুদিন। এখন কোনো কাজে আসছে না এই স্লুইস গেট। সময়মতো সংস্কার না করায় ধীরে ধীরে অকার্যকর হয়ে পড়েছে এটি। সরেজমিনে এই স্লুইস গেট দেখলে মনে হয় অহেতুক খরচ করা হয়েছে রাষ্ট্রের পাঁচ কোটি টাকা।

জানা গেছে, বুড়িতিস্তা নদীর উৎসমুখে নির্মিত স্লুইস গেটটি তিস্তা নদীর করাল গ্রাসে নদীতে চলে গেলে পাউবো নির্মিত অপরিকল্পিতভাবে বুড়িতিস্তা নদীর মুখে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ দিয়ে বন্ধ করে দেয় অন্যদিকে থেতরাই ইউনিয়নের গোড়াইপিয়ায় নতুন করে ১৯৯৯ সালে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৪ গেট বিশিষ্ট একটি স্লুইস গেট নির্মাণ করেন। কিন্তু পাউবো কর্তৃপক্ষের নজরদারি ও সংস্কারের অভাবে বর্তমানে স্লুইস গেটটি অকার্যকর হয়ে পড়েছে। বর্তমানে ২৪টি গেটের মধ্যে ১৬টি গেটই অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। অবহেলা-অযত্নের কারণে গেটগুলোর ছোট পেনিয়াম, শেপ, সাতটি গেটের বড় পেনিয়াম কভার, চারটি গেটের বড় পেনিয়াম এবং অনেক গেটের নাট-বোল্ট চুরি হয়ে গেছে।

এছাড়াও স্লুইস গেটের উৎসমুখে তিস্তা নদী থেকে পলি মাটি জমে তা ভরাট হয়ে যাওয়ায় কোনো দিক থেকেই পানি নিষ্কাশন হয় না। এ পরিস্থিতিতে বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টিতে বুড়িতিস্তা নদীর দক্ষিণ অংশে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ফলে বুড়িতিস্তা নদীর দুই পাড়ের কয়েক হাজার হেক্টর ফসলি জমি এবং শত শত পরিবারকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

বুড়িতিস্তা নদীর প্রায় ২২ কিলোমিটার উলিপুর উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়ন থেকে চিলমারী উপজেলার রানীগঞ্জ পর্যন্ত ভরাট হয়ে নাব্যতা হারিয়ে ফেললে নদী দখল করে নেন দখলদার। সম্প্রতি উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নের অর্জুনে স্লুইস গেট নির্মাণসহ চিলমারী উপজেলার কাঁচকোল পর্যন্ত বুড়িতিস্তা নদী খনন ও দখলমুক্ত করার জন্য উলিপুর প্রেস ক্লাব ও রেল, নৌ যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটি আন্দোলন শুরু করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সরকার বুড়িতিস্তা খননের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু দক্ষিণ অংশের দলদলিয়া ইউনিয়নের দেবত্তর থেকে নাজিমখাঁন পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটার খনন না করায় এ অঞ্চলের মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দেবত্তর গ্রামের লোকজনদের অভিযোগ, বর্তমানে স্লুইস গেটটি সংস্কারসহ দক্ষিণ অংশের বুড়িতিস্তা খনন ও সম্মুখভাগে পলি অপসারণ না করলে এ অঞ্চলের মানুষকে আরো দুর্ভোগ পোহাতে হবে।

স্ইলুইস গেটের দায়িত্বরত গেটম্যান আবদুল বাতেন জানান, ২৪টি গেটের ৮টি গেট কোনো রকমে চলে। বাকি ১৬টি গেট সংস্কার করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না করলে স্লুইস গেট মানুষের কোনো কাজে আসবে না। চলতি বছরে আবারও আটটি গেট কোনো রকমভারে মেরামত করে চালানো হচ্ছে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন এ বিষয়ে বলেন, স্লুইস গেট সংস্কারের জন্য বরাদ্দ চেয়ে চাহিদা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই গেটগুলো সংস্কার করে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক করা হবে। দলদলিয়া ইউনিয়নের দেবত্তর থেকে নাজিমখাঁন পর্যন্ত খনন করার প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কুড়িগ্রাম
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close