সালাহ্উদ্দিন শুভ, কমলগঞ্জ ও আবদুস শুকুর  শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার)

  ২৮ আগস্ট, ২০২২

বাড়তি পাওনা বাঁশির সুর

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে বাঁশি শোনার আসর। ছবি সম্প্রতি তোলা  * প্রতিদিনের সংবাদ 

অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। প্রতিদিন দেশ-বিদেশের পর্যটকসহ স্থানীয় লোকজনের সমাগম ঘটে এখানে। সবুজ প্রকৃতি দেখে মুগ্ধ পর্যটকদের জন্য সেখানে বাড়তি পাওনা হচ্ছে চারণশিল্পীর বাঁশি ও গান।

বাঁশি বাজানোর পাশাপাশি হাতে তালি বাজিয়ে গান গেয়ে অবাক করে দেন পর্যটকদের। পেশায় তিনি আইসক্রিম ও আচার বিক্রেতা। বাঁশি বাজানো তার নেশা। কোমরে সব সময় দুই তিনটি বাঁশি থাকে। ঘুমানোর সময়ও বাঁশি থাকে বালিশের নিচে। পরিচিত জন ও পর্যটকরা আবদার করলে আনন্দের সঙ্গে হাতে তুলে নেন বাঁশি। সঙ্গে গানও করেন। ভাটিয়ালি, দেশাত্মবোধক পল্লীগীতি, ভাওয়াইয়া ও মুর্শিদি গান ভালোবাসেন। এসব গানের সুর তোলেন বাঁশিতে। আলাপকালে তিনি (নামটি উল্লেখ করা হলো না) জানান, তার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে। ১৫ বছর বয়সে তিনি চলে আসেন মৌলভীবাজারের ভানুগাছ উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাঘমারা গ্রামে। ৪০ বছর ধরে তিনি এই উপজেলায় বসবাস করছেন। ভ্যান, রিকশা চালিয়ে কিংবা দিনমজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন একসময়। বয়স হয়ে যাওয়ায় এখন আইসক্রিম ও আচার বিক্রিকেই পেশা হিসেবে নিয়েছেন। কিন্তু করোনার কারণে আইসক্রিম ও আচার বিক্রি কম হয়। তাই হাতে বাঁশি নিয়েই ঘোরেন। বাঁশি বাজিয়ে পর্যটকদের আকৃষ্ট করেন। তদের অনেকে মুগ্ধ হয়ে একপর্যায়ে আইসক্রিম কিনে নেন। এর সঙ্গে তিনি যুক্ত করেছেন জাদু প্রদর্শন।

ঢাকা থেকে আগত পর্যটক জিনাত রায়হানা ও আকাশ জামান বলেন, চারপাশে সবুজ গাছ, পাখির কলকাকলি আর মদিনা ভাইয়ের বাঁশির সুরে এক অনন্য পরিবেশ তৈরি হয়েছে এখানে। বিষয়টি মুগ্ধ করার মতো। বেড়ানোটা অনেক বেশি উপভোগ্য হয়েছে বাঁশির সুরে। তিনি আরো বলেন, আমরা এর আগেও লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে এসেছি কিন্তু ভাইয়ের গান শুনিনি। আজ আরো ভালো লাগছে আমাদের সঙ্গে খুলনা থেকে আমার মামা-মামিরা আসছেন তাদের কাছে খুুবই ভালো লাগছে এখানকার পরিবেশ।

কমলগঞ্জ ট্যুর গাইডার আহাদ জানান, কমলগঞ্জের লাউয়াছড়ায় দেশি-বিদেশি পর্যটকরা প্রায়ই ভিড় করে এই ভাইয়ের বাঁশির সুর ও গান শোনেন। পর্যটকদের বাড়তি আনন্দ দেন তিনি। গায়ক ভাই জানান, বড় ভাই আবদুর রহিমের কাছ থেকে বাঁশি বাজানো শিখেছেন। ভানুগাছ বাজারে জাদু প্রদর্শনকারীদের কাছ থেকে জাদু শিখেছেন। গান গেয়ে ও বাঁশি বাজিয়ে মানুষকে আনন্দ দিয়ে নিজেরও খুব আনন্দ হয়। সংসারে অনেক টানাপড়েন, রোজগারও কম। তবে রোজগার কম হলে যে আনন্দ থাকবে না, এমন কোনো কথা তো নেই। তিনি আরো বলেন, এখন গানই জীবন গানই মরণ। হয়তো কোনো এক দিন বড় কোনো মঞ্চে উঠে বাঁশি বাজাবেন এমন আকাক্ষা তার।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বাঁশি,সুর
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close