চড়া দামে ডলার কিনছে দেশের ব্যাংকগুলো
ব্যাংক খাতের প্রভাবশালী দুই সংগঠনের বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে অন্তত ১৩ টাকা বেশি দিয়ে প্রবাসী আয়ের ডলার কিনছে ব্যাংকগুলো। যার প্রভাবে কিছুটা ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে রেমিট্যান্স। কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট নন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, দামের বড় পার্থক্য থাকায় আস্থা পাচ্ছেন না প্রবাসীরা। অন্যদিকে ব্যাংকাররা মনে করেন, ডলারের দর নির্ধারণের প্রক্রিয়াই ত্রুটিপূর্ণ।
নিট আয়ের হিসাবে বহির্খাতের সবচেয়ে বড় উৎস রেমিট্যান্স প্রবাহ। কিন্তু সেখানে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত হচ্ছে না লম্বা সময় ধরে। কারণ, দেশ থেকে শ্রমিক গেলেও আয়ের প্রতিফলন নেই বৈধ চ্যানেলে। স্পষ্টভাবেই যা ফুটে উঠেছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন রূপালী ব্যাংকের রেমিট্যান্স গ্রহণের কাউন্টারে।
বৈধ চ্যানেলে প্রত্যাশিত আয় না আসার বহু কারণ এরই মধ্যে আলোচিত হয়েছে নানা মহলে। তবুও নভেম্বরে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ১৯৩ কোটি ডলার। এই আয় অক্টোবরের চেয়ে ৪ কোটি ডলার কমলেও বছর ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় ২১ শতাংশ।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে টানাপোড়েন দেখছি আমরা। সেটা কিছু শঙ্কার সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে আমদানি সক্ষমতা থেকে ঋণ পরিষেবা পর্যন্ত। এক্ষেত্রে রেমিট্যান্স খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
বৈধ পথে পর্যাপ্ত আয় না আসায় আমদানি বাণিজ্যের দায় মেটাতে চাপে পড়তে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে। ফলে বাধ্য হয়েই নিতে হচ্ছে কৌশলী পদক্ষেপ। সম্প্রতি দুই দফায় ডলারের দাম ৭৫ পয়সা কমিয়ে রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে ১০৯ টাকা ৭৫ পয়সা নির্ধারণ করেছে বাফেদা ও এবিবি। এই মূল্যে প্রবাসীরা টাকা না পাঠানোয় ব্যাংকগুলোকে কিনতে হচ্ছে ১২৩ টাকা পর্যন্ত মূল্য দিয়ে।
ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপানা পরিচালক ফরুক মইনুদ্দিন মনে করেন, ডলারের দাম নির্ধারণের পদ্ধতিই ত্রুটিপূর্ণ। ফলে ব্যাংকগুলোও বাধ্য হচ্ছে বিকল্প উপায়ে ব্যবসা চালাতে। তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোতে প্রতিযোগিতা আছে। কিন্তু এক্সচেঞ্জ হাউসে সেটা নেই। ফলে প্রবাসীরা যার কাছে বেশি রেট পাবে, সেখানেই যাবে। তাই বাধ্য হয়েই বেশি দরে ডলার কিনছে ব্যাংকগুলো। কারণ, আমদানি ও বিদেশি দায় পরিশোধে তাদের তা দরকার।
সিপিডির ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, টাকার মানে মিশ্রণ দেখতে পাচ্ছি আমরা। এটা একটা সংকেত দিচ্ছে। কিছুটা অনিশ্চয়তা তৈরি করছে। ফলে যত সম্ভব বাজার ব্যবস্থার সঙ্গে সমন্বয় করা উচিত।
উল্লেখ্য, অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে সবমিলয়ে ৮৮১ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
পিডিএস/এমএইউ