reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৯ জুন, ২০২৪

ছড়িয়ে পড়ছে রাসেলস ভাইপার

কৃষকদের আতঙ্ক দূর করা দরকার

ভয়ংকর বিষধর এক সাপ রাসেলস ভাইপার। এক দশক আগেও সাপটির কথা খুব বেশি শোনা যায়নি। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশের নানা অঞ্চলে বিষধর এই সাপটি ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি জানা যাচ্ছে, বিশেষ করে পদ্মা-যমুনা নদী ও তার অববাহিকায়। চলতি বছর দেশের বিভিন্ন এলাকায় ফসলের খেতে কাজ করার সময় রাসেল ভাইপারের আক্রমণে বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। এসব এলাকায় রাসেল ভাইপারের আতঙ্ক এমনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, ফসল কাটতে খেতে যেতেও ভয় পাচ্ছেন কৃষকরা; খেতের পরিচর্যার জন্য শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।

মানিকগঞ্জের কিছু এলাকায় গত তিন মাসে বিষধর রাসেলস ভাইপার সাপের কামড়ে অন্তত পাঁচজন মারা যাওয়ার কথা জানা গেছে। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে পদ্মা নদীতীরবর্তী চরাঞ্চলগুলোয় উপদ্রব বেড়েছে রাসেল ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপের। বিষাক্ত এ সাপের কামড়ে গত দেড় মাসে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। কুষ্টিয়া ও ফরিদপুরেও বিষধর এই সাপের কামড়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার পদ্মা নদীর তীরবর্তী চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে পড়ে আছে পাকা ধান ও ভুট্টা। কিন্তু খেত থেকে ফসল তুলতে ভয় পাচ্ছেন কৃষক। এই ভয়ের কারণ এলাকায় তীব্র বিষধর রাসেলস ভাইপারের আনাগোনা বেড়ে যাওয়া। সাবধানতা অবলম্বনের জন্য কৃষি বিভাগ নানা পরামর্শ দিলেও ভয় কাটছে না কৃষকদের। চরাঞ্চল জুড়ে রাসেলস ভাইপার সাপের কারণে কৃষকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কেউ মাঠে যেতে চাচ্ছে না। মাঝেমধ্যে কৃষকরা সাপ দেখে পিটিয়ে মেরে ফেলে মাটিতে পুঁতে ফেলছেন। এ অবস্থায় প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে।

রাসেলস ভাইপার স্থানীয়ভাবে চন্দ্রবোড়া ও উলুবোড়া নামেও পরিচিত। সাপটি দেখতে অনেকটা অজগরের বাচ্চার মতো। ব্রিটিশ শাসনামলে ভারতে কাজ করতে এসেছিলেন স্কটিস সার্জন প্যাট্রিক রাসেল। ১৭৯৬ সালে তিনি এই সাপ সম্পর্কে গবেষণা করেন। তার নাম অনুসারে এই সাপের নামকরণ করা হয়। এই সাপের কামড়ে শরীরের দংশিত অংশে বিষ ছড়িয়ে অঙ্গহানি, ক্রমাগত রক্তপাত, রক্ত জমাট বাঁধা, স্নায়ু বৈকল্য, চোখ ভারী হয়ে যাওয়া, পক্ষাঘাত, কিডনির ক্ষতিসহ বিভিন্ন রকম শারীরিক উপসর্গ দেখা যেতে পারে। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, সাপের এই প্রজাতিটি বাংলাদেশ থেকে বহু বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু গত ১০-১২ বছর আগে থেকে আবারও এই সাপের কামড়ের ঘটনার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। এই প্রজাতির সাপ আবার কীভাবে ফিরে আসছে, তা নিয়ে ব্যাপক পরিসরে গবেষণা কার্যক্রম চালানো দরকার। এ ছাড়া কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতেও ইয়েলো বেলিড সি নামের বিরল প্রজাতির বিষধর সামুদ্রিক সাপ ভেসে আসার খবর পাওয়া গেছে। এই সাপ বিশ্বের সর্বাধিক বিষাক্ত সাপগুলোর মধ্যে একটি। মাসখানেকের মধ্যে তিনটি সাপ জোয়ারের পানিতে সৈকতে ভেসে এসেছে। এটিও এখন বড় আতঙ্কের কারণ। এভাবে যদি প্রায়ই বিষধর সাপ ভেসে আসে তাহলে পর্যটকরা সমুদ্রসৈকতে আসার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বিলুপ্ত প্রায় রাসেলস ভাইপারের আনাগোনা এত বাড়ল কেন? আবার একটা নির্দিষ্ট অঞ্চল থেকে এটি আরো অনেক এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার কারণগুলোও বা কী? এ নিয়ে ব্যাপক পরিসরে গবেষণা হওয়া দরকার। এ ছাড়া কৃষকরা যাতে আতঙ্ক ছাড়াই নির্বিঘ্নে ফসল কাটতে পারেন, সে ব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার বলে আমরা মনে করি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close