আল মাসুম হোসেন

  ০৯ জুন, ২০২৪

মুক্তমত

ওষুধ সম্পর্কিত গবেষণা বৃদ্ধিতে পরিকল্পনা প্রয়োজন

ওষুধ এমনই একটি জিনিস, যা রোগ নির্ণয়, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা নিমিত্তে ব্যবহৃতদ্রব্য এবং ছোট শিশু, কিশোর, যুবক কিংবা বয়োবৃদ্ধ ইত্যাদি সবার জীবনেই ওষুধ প্রয়োজনীয় উপাদান। ওষুধের সেবন যেমন মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলে, তেমনিভাবেই ওষুধশিল্প বাংলাদেশের জনগণের জীবনযাত্রার মানকে প্রভাবিত করে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই ও আগস্টে ওষুধ রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৩১ দশমিক ৬৪ মিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের তৃতীয় বৃহত্তম খাত। অর্থাৎ ওষুধশিল্পের উন্নয়নের ফলে দেশে কর্মক্ষেত্র বৃদ্ধি পাবে, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হবে, ওষুধ রপ্তানির ফলে কূটনৈতিক সম্পর্ক বাড়বে। এ ছাড়া দেশের মানুষ স্বল্পমূল্যে ওষুধ সেবন করতে পারবে। এসব কারণে বোঝা যাচ্ছে আমাদের দেশে ওষুধ উৎপাদন ও এ নিয়ে গবেষণা কতটা অর্থবহ। কারণ ওষুধশিল্প এগোলে বাংলাদেশের অর্থনীতি আরো সমৃদ্ধ হবে এবং সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নত করতে সাহায্য করবে।

বাংলাদেশ মূলত ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মা, ক্যানসার, কুষ্ঠরোগ, অ্যান্টি-হেপাটিক, পেনিসিলিন, স্ট্রেপটোমাইসিন, কিডনি ডায়ালাইসিস, হোমিওপ্যাথিক, বায়োকেমিক্যাল, করোনা, আয়ুর্বেদিক ও হাইড্রোসিলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ওষুধ রপ্তানি করে থাকে। এই ওষুধ তৈরির মূল উপাদান হলো অ্যাকটিভ ফার্মাসিটিউক্যাল ইনগ্রিডিয়েন্ট (এপিআই)। এপিআই যারা আবিষ্কার করে সেই উদ্ভাবনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে রয়্যালটি ফি দিতে হয়। যার ফলে ওষুধ উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। কিন্তু আমাদের দেশের কোম্পানিগুলো তাদের চাহিদার মাত্র ৩ শতাংশ এপিআই তৈরি করতে সক্ষম। বর্তমানে বাণিজ্য-সংক্রান্ত মেধাস্বত্ব (ট্রিপস) আইনে এই ওষুধগুলো তৈরির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কোম্পানিগুলো বিনামূল্যে প্যাটেন্ট ব্যবহার করে ওষুধ উৎপাদন করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের সাফল্য ওষুধ আবিষ্কার কিংবা এপিআই তৈরিতে নেই বললেই চলে। অর্থাৎ সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও ওষুধ উৎপন্নকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ এখনো ওষুধ সম্পর্কিত গবেষণায় অনেক পিছিয়ে আছে।

বর্তমানে বাংলাদেশকে ওষুধ গবেষণার বিকাশমান হাব হিসেবে গণ্য করা হয়। বাংলাদেশ ওষুধশিল্প সমিতির তথ্য অনুযায়ী, দেশের চাহিদার ৯৭ শতাংশের বেশি ওষুধ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হচ্ছে। এর পাশাপাশি ৪৩টি কোম্পানির বিভিন্ন প্রকারের ওষুধ ও ওষুধের কাঁচামাল যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের প্রায় ১৫৩টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। কিন্তু ২০২৬ সাল নাগাদ বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বেরিয়ে যাবে, তখন বাংলাদেশকে বিদেশি পেটেন্ট ব্যবহারে রয়্যালটি ফি প্রদান করতে হবে। তখন আমাদের দেশে ওষুধশিল্প বড় চ্যালেঞ্জের মধ্যে পতিত হবে। তাই এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে সরকারের কিছু পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা অতীব জরুরি, যেমন : গবেষণার জন্য সরকারিভাবে গবেষণা খাতে বেশি পরিমাণে অর্থ বরাদ্দ করা, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ফার্মেসি বিভাগের ল্যাবে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা, ওষুধ গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও প্রযুক্তিসহ আধুনিক গবেষণাগার স্থাপন করা, বেসরকারি বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে কোলাবোরেশন, ওষুধ গবেষণায় কর ছাড় ও অনুদান দিতে হবে, গবেষকদের জন্য আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করা, জৈবপ্রযুক্তি, ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্স ও ক্লিনিক্যাল গবেষণায় উচ্চশিক্ষা প্রসার ঘটানো, ওষুধ গবেষণার ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্য একটি শক্তিশালী নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা গড়ে তোলা, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে জ্ঞান ভাগ করে নেওয়ার জন্য প্ল্যাটফরম তৈরি করা, ওষুধ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও ওষুধশিল্পের মধ্যে গবেষণার সমন্বয়, ওষুধ গবেষণার ক্ষেত্রে সফল গবেষকদের জন্য পুরস্কার ও স্বীকৃতি প্রদান করা, ভালোমানের গবেষণা প্রকাশনায় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বৃদ্ধি করা, ফার্মেসি বিষয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ সহজলভ্য করা ছাড়াও বিভিন্ন ধনী ব্যক্তি এবং দাতব্য সংস্থাগুলোকে ওষুধ গবেষণায় অর্থায়নের মাধ্যমে জনগণের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখা।

একটি ওষুধ আবিষ্কার করতে ১২-১৫ বছর সময় ও প্রায় ১২০০ ইউএস মিলিয়ন ডলারের মতো খরচ করতে হয় মার্কেটে আনার জন্য। কেননা নতুন ড্রাগ মালিকিউল বা এপিআই আবিষ্কার, ইনভিট্রো ও ইনভিভো ট্রায়াল দিতে অনেক সময় পেরিয়ে যায়। যেহেতু ওষুধ গবেষণা একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া এবং এর জন্য ধৈর্য ও অধ্যবসায়ের প্রয়োজন। ওপরে উল্লিখিত পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে বাংলাদেশে ওষুধ গবেষণা উন্নত করে ওষুধশিল্পের উন্নয়ন সম্ভব।

লেখক : শিক্ষার্থী, ফার্মেসি বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close