reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৭ জুন, ২০২৪

ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস

দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হোক নতুন প্রজন্ম

ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস আজ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ছয় দফা দাবির পক্ষে দেশব্যাপী তীব্র গণ-আন্দোলন সূচনার দিন। ১৯৬৬ সালের এই দিন বাংলার স্বাধিকার আন্দোলন স্পষ্টত নতুন পর্যায়ে উন্নীত হয়। এর মধ্য দিয়ে রচিত হয় স্বাধীনতার রূপরেখা। ছয় দফাভিত্তিক আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপ নেয়।

পাকিস্তানি শাসন-শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্তির লক্ষ্যে স্বৈরাচার আইয়ুব সরকারের বিরুদ্ধে ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে তৎকালীন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সব বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে ডাকা এক জাতীয় সম্মেলনে পূর্ববাংলার জনগণের পক্ষে বঙ্গবন্ধু ৬ দফা দাবি উত্থাপন করেন। ছয় দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ওই বছরের ৭ জুন আওয়ামী লীগের ডাকে তৎকালীন পূর্ব বাংলায় হরতাল চলাকালে পুলিশ ও ইপিআর নিরস্ত্র মানুষের ওপর গুলি চালায়। এতে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে মনু মিয়া, মুজিবুল হকসহ অনেকে শহীদ হন। ছয় দফা হয়ে ওঠে বাঙালির মুক্তির সনদ। সেই থেকেই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আপসহীন সংগ্রামের পথে উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের দিকে এগিয়ে যায় পরাধীন বাঙালি। ছয় দফা ঘোষণার পর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুকে বারবার গ্রেপ্তার করে এবং তার ওপর অমানবিক নির্যাতন চালায়। শত নির্যাতন সত্ত্বেও তিনি ছয় দফার দাবি থেকে পিছপা হননি। তার নেতৃত্বে দাবি আদায়ের এই আন্দোলন বেগবান হয়- যা অল্প সময়ের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে সারা বাংলায়। বলা যায়, বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার অন্যতম ভিত্তি। ছয় দফা কেবল বাঙালির মুক্তির সনদ নয়, বিশ্বের নিপীড়িত নির্যাতিত মানুষের মুক্তি আন্দোলনের অনুপ্রেরণারও উৎস। ছয় দফার মধ্যেই বঙ্গবন্ধু পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক স্বার্থকে তুলে ধরেন। ঐতিহাসিক ছয় দফার মধ্যেই নিহিত ছিল বাঙালির স্বাধিকার ও স্বায়ত্তশাসনের রূপরেখা। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা।

ছয় দফার মূল বক্তব্য ছিল- প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র বিষয় ছাড়া সব ক্ষমতা প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকবে। পূর্ববাংলা ও পশ্চিম পাকিস্তানে দুটি পৃথক ও সহজে বিনিময়যোগ্য মুদ্রা থাকবে। সরকারের কর ও শুল্ক ধার্য ও আদায় করার দায়িত্ব প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকাসহ দুই অঞ্চলের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার আলাদা হিসাব থাকবে এবং পূর্ব বাংলার প্রতিরক্ষা ঝুঁকি কমানোর জন্য এখানে আধাসামরিক বাহিনী গঠন ও নৌবাহিনীর সদর দপ্তর স্থাপনের দাবি জানানো হয়। ৭ মার্চের ভাষণেও ছয় দফার প্রতিটি দফার পর্যালোচনা ছিল। পরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মুজিবনগর সরকার বিভিন্ন সেক্টরের মাধ্যমে যুদ্ধ পরিচালনা করার পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরে সব সরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয়েছিল ছয় দফার ভিত্তিতে। স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ সৃষ্টিতে ঐতিহাসিক ছয় দফার ভূমিকা ছিল অপরিসীম।

বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম ও স্বাধীনতার ইতিহাসে ঐতিহাসিক ছয় দফা একটি অন্যতম মাইলফলক। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব তথা ইতিহাসের সত্য রক্ষায় ছয় দফাসহ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভূমিকা জাতির সামনে তুলে ধরতে হবে সর্বদাই। একই সঙ্গে তরুণ প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উৎসাহিত ও উজ্জীবিত হতে এই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close